Advertisement
১৮ মে ২০২৪
‘নেই’ তত্ত্বে মুখরক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা পুলিশের

সব ফাঁকা বাড়ির সুরক্ষায় ‘অপারগ’ হাওড়া

চোর ধরা পুলিশের কাজ নয়। পুলিশকে সজাগ করা বরং গৃহস্থের ‘কর্তব্য’। এমনটাই অভিমত হাওড়ার পুলিশের। আর তাদের এই ‘কর্মসংস্কৃতি’র সুবাদেই বুধবার রাতে মধ্য হাওড়ায় পরপর চারটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়। ফ্ল্যাটগুলি ছিল ফাঁকা। এবং শহরে পুলিশি নজরদারিও যে কার্যত ফাঁকা আওয়াজ, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল চোরের দল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২২
Share: Save:

চোর ধরা পুলিশের কাজ নয়। পুলিশকে সজাগ করা বরং গৃহস্থের ‘কর্তব্য’। এমনটাই অভিমত হাওড়ার পুলিশের। আর তাদের এই ‘কর্মসংস্কৃতি’র সুবাদেই বুধবার রাতে মধ্য হাওড়ায় পরপর চারটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়। ফ্ল্যাটগুলি ছিল ফাঁকা। এবং শহরে পুলিশি নজরদারিও যে কার্যত ফাঁকা আওয়াজ, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল চোরের দল।

ফাঁকা বাড়িতে চুরি এখন হাওড়ার নিত্যদিনের ঘটনা। অর্থাৎ এলাকায় কোন বাড়ি কখন ফাঁকা থাকছে, সেই খবরও থাকছে চোরেদের কাছে। জানতে পারছে না শুধু পুলিশ। এটা ঠিক, বাড়ি ফাঁকা রাখলে থানায় জানিয়ে যাওয়ার কথা কলকাতা-হাওড়া, সল্টলেক, সর্বত্রই বারবার বলে এসেছে পুলিশ। এলাকাবাসীরা যে তা সে ভাবে মানেন না, তা-ও সত্যি। তবু চুরি, ডাকাতি-সহ নানা অপরাধ রুখতে নজরদারির যে দায়িত্ব পালন করার কথা পুলিশের, সেটাও যে ঠিক মতো হয় না পুলিশের কথাতেই তা পরিষ্কার। মধ্য হাওড়ার ঘটনার পরে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “আমরা আগেই ঘোষণা করেছিলাম ফাঁকা ফ্ল্যাট বা বাড়ি রেখে গেলে স্থানীয় থানাকে জানাতে। কিন্তু কেউই জানান না। এত বাড়ি পাহারা দেওয়া পুলিশের পক্ষেও সম্ভব নয়। নিদিষ্ট পরিকাঠামোর মধ্যে থেকেই রাত পাহারা দেওয়া হয়।”

কিন্তু নির্দিষ্ট পরিকাঠামোয় কেমন হয় সেই রাত-পাহারা? মধ্য হাওড়ার সমরেন্দ্র তালুকদারের অভিযোগ, “পুলিশ রাতে ঠিক মতো পাহারা দেয় না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে যে সব রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের গাড়ি পাহারায় থাকে, তারাও ঠিক মতো ঘোরাঘুরি না করে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশ একটু সক্রিয় হলে চুরি কমবে।”

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে অবশ্য রাতপাহারায় ফাঁক থাকার কথা মানতে রাজি নন। তিনি বলছেন, “ফাঁকা বাড়ি রেখে যাওয়ার কথা আমাদের জানালে টহলদারি বাড়ানো হয়। সাধারণ ভাবে রাতের টহলদারি যথেষ্ট হয়।”

সেই ‘যথেষ্ট’ টহলদারির মধ্যেই অবশ্য বুধবার রাতে চুরি হয় মধ্য হাওড়ার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা মঙ্গলাহাট সংলগ্ন হাট লেন, গোপাল মুখার্জি লেন ও রামেশ্বর মালিয়া লেনে চারটি ফাঁকা ফ্ল্যাট ও একটি গুদামে। তালা ভেঙে লক্ষাধিক টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দেয় চোরেরা। এমনকী, দুষ্কৃতীরা ফ্রিজ খুলে খাবার খেয়ে, নেশা করে ফ্ল্যাটগুলিতে অনেকটা সময় কাটিয়েও গিয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত সোমবার সপরিবার পুরী বেড়াতে যান গোপাল মুখার্জি লেনের বাসিন্দা ছোটেলাল সাউ। বৃহস্পতিবার সকালে পড়শিরা দেখেন, ছোটেলালের ফ্ল্যাটের তালা ভাঙা। পুলিশ জানায়, সামনেই ছোটেলালবাবুর বড় মেয়ের বিয়ে। তাই বাড়ির আলমারিতে এক লক্ষ টাকা ও কয়েক ভরি সোনার গয়না ছিল। চোরেরা আলমারি ভেঙে সবই নিয়ে গিয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই আশপাশের এলাকা থেকে হাট লেন, রামেশ্বর মালিয়া লেনের তিনটি বন্ধ ফ্ল্যাট ও কাপড়ের গুদামে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে লুঠপাটের খবর আসে। সব জায়গাতেই তালা ভেঙে ঢুকে জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করেছে চোরেরা। আলমারি ভেঙে নিয়েছে নগদ টাকাও। পুলিশের ধারণা, একটি দলই রয়েছে সবক’টি চুরির পিছনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police theft howrah security southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE