‘কাউ ক্যাচার’। এই ধাঁচেই তৈরি হবে রিকশার ফাঁদ। —নিজস্ব চিত্র
এ যেন বুনো ওল বনাম বাঘা তেঁতুলের লড়াই!
হাওড়া শহরে বেআইনি রিকশার দৌরাত্ম্য নতুন কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল, রিকশা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কমিশনারেটের এবং ৩০ বছর পরে বামফ্রন্টকে সরিয়ে হাওড়া পুরবোর্ডের ক্ষমতায় আসা তৃণমূলের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত রিকশার এই বাড়বাড়ন্ত রুখতে হাওড়া সিটি পুলিশই অভিনব এক পরিকল্পনা করেছে। যাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল-শাসিত পুরসভাও।
হাওড়া শহরের ‘লাইফলাইন’ জিটি রোড, নেতাজি সুভাষ রোড, পঞ্চাননতলা রোড, ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় রিকশা যাতে চলতে না পারে, বহু দিন ধরে সে চেষ্টা চালাচ্ছিল পুলিশ। কিন্তু যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাবে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল। বেআইনি রিকশা বাজেয়াপ্ত করে রাখার জায়গাও মিলছিল না। তাই সম্প্রতি পুলিশ প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির সংযোগকারী গলিতে ‘কাউ ক্যাচার’এর মতো লোহার পাইপ বসিয়ে ফাঁদ তৈরি করে আটকে দেওয়া হবে রিকশার অবাধ গতিপথ। এতে শহরে যানবাহনের গতি যেমন বাড়বে, কমবে রিকশাচালকদের দৌরাত্ম্যও।
কেমন হবে রিকশার এই ফাঁদ?
পুলিশ সূত্রে খবর, বাড়িতে গরু-ছাগলের প্রবেশ রুখতে সাধারণত গেটের সামনে বসানো হয় ওই ফাঁদ। যা তৈরি হয় আড়াআড়ি ভাবে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসানো লোহার পাইপ দিয়ে। পাইপগুলি এমন ভাবে বসানো হয় যাতে গরু-ছাগল ঢুকতে গেলে পাইপের ফাঁকে তাদের পা আটকে যাবে। ঠিক এই কৌশলকে কাজে লাগিয়েই রিকশার চাকা আটকে যাওয়ার মতো এই ফাঁদ তৈরি হয়েছে। যেখানে লোহার পাইপগুলি বসানো রয়েছে লম্বালম্বি ভাবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তায় কোনও গর্ত না করেই ওই সমস্ত ফাঁদ লাগানো হবে। গলির মুখে বা বড় রাস্তায় ওঠার মুখে চওড়া হাম্প করে তার ভিতর থাকবে সারি দেওয়া ওই পাইপগুলি। যার উপর দিয়ে কোনও ভাবেই যেতে পারবে না রিকশার চাকা।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “বেআইনি রিকশার জন্য শহরে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। তাই বিভিন্ন রাস্তায় গরু-ছাগলের প্রবেশ রোখার ফাঁদের মতো সারি দেওয়া পাইপ বসানো হবে। সব ঠিক থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোড থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে তা বসানোর কাজ শুরু হবে।”
পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, “হাওড়া শহরে বেআইনি রিকশা কত চলে, তার পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করার পরিকাঠামোও নেই পুরসভার। তাই তাদের দৌরাত্ম্য রুখতে পুলিশ যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে শহরের গতি বাড়বে।”
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে শহরে প্রায় ৬০ হাজার রিকশা চললেও পুরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি নয়। এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে টোটো। পরিবেশ বান্ধব, কিছুটা গতি সম্পন্ন হওয়ায় ক্রমশ বাড়ছে টোটোর সংখ্যা। ফলে হাওড়ার রাস্তাঘাট এই মুহূর্তে বাস, ট্যাক্সি, লরি, টোটো, রিকশা, ভ্যান রিকশা-সহ আরও অন্যান্য যানবাহনে ভরে গিয়েছে। যার ফলে মানুষের হাঁটাচলা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের বক্তব্য, শহরে রিকশা চলার লাইসেন্স দেয় হাওড়া পুরসভা। তাই বেআইনি রিকশা ধরার দায়িত্ব পুরসভারই। মাঝে মাঝে পুলিশের উদ্যোগে ধরপাকড় করা হয় বটে, আটকও করা হয়, কিন্তু পরে ছাড়া পেয়ে ফের পথে নেমে পড়ে। তাই এই লোহার পাইপের ফাঁদ পেতে রিকশা রোখার চেষ্টা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy