Advertisement
১১ ডিসেম্বর ২০২৪

নাটক, গান, ইতিহাসে মজে গ্রন্থন

জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের সেই ছাত্র, গ্রন্থন সেনগুপ্ত রাজ্যে প্রথম হওয়ার খবর শোনার পরে বলে, ‘‘ইচ্ছে আছে ইতিহাস নিয়ে পড়ার। তবে যা-ই করি, নাটক আর গান ছাড়ছি না।”

গর্বিত: ছেলে গ্রন্থনকে নিয়ে মা মৌমিতা সেনগুপ্ত। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

গর্বিত: ছেলে গ্রন্থনকে নিয়ে মা মৌমিতা সেনগুপ্ত। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০৬:১৬
Share: Save:

গাইতে বললে সে গলা খুলে লালনের গান ধরে। উচ্চ মাধ্যমিকের দিন কয়েক আগেও নেমে পড়ে মঞ্চে অভিনয় করতে। ফেসবুকে নিজের পরিচয় দেয়, ‘নাট্য অভিনেতা’। প্রচেত গুপ্তের লেখা পড়তে ভালবাসে। সেই ছেলেই আবার বলে, “রবীন্দ্রনাথই কিন্তু আশ্রয়।’’ জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের সেই ছাত্র, গ্রন্থন সেনগুপ্ত রাজ্যে প্রথম হওয়ার খবর শোনার পরে বলে, ‘‘ইচ্ছে আছে ইতিহাস নিয়ে পড়ার। তবে যা-ই করি, নাটক আর গান ছাড়ছি না।”

নাটক-গানের ঝোঁক বাড়ি থেকেই। মা মৌমিতা সেনগুপ্ত প্রাথমিক শিক্ষিকা। তবে তিনি বেশি পরিচিত নৃত্যশিল্পী হিসেবেই। ছোট থেকে মায়ের সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানে গিয়ে নাটকের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয় গ্রন্থনের। সে জানায়, সেই ভালবাসা ক্রমেই বেড়েছে। তাই পরীক্ষার কয়েক দিন আগে নাটকে অভিনয়ের ডাক এলে ফেরাতে পারেনি। সে কথা বলছিলেন গ্রন্থনের ছোটবেলার গৃহশিক্ষিকা জয়তী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিনেতা শৈবাল বসুর কথায়, ‘‘বাবিনের (গ্রন্থনের ডাক নাম) রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে মন ভরে যায়। আবার পড়াশোনাতেও দেখুন, খুব সিরিয়াস।’’

ছোটবেলা থেকেই এই গান-নাটকের মধ্যে দিয়ে হাঁটছে গ্রন্থন। তার মধ্যেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল করে সে। জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, অঙ্কে ৯৩ পেয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই তখন অনেকে পরামর্শ দেয়, বিজ্ঞান নিয়ে পড়। এ দিন গ্রন্থন বলছিল, ‘‘এ সব শুনতে শুনতে জেদ চেপে যায়। কলা বিভাগে পড়েও যে ভাল ফল করা সম্ভব, সেটা করে দেখানোই ছিল আমার চ্যালেঞ্জ।’’ এ দিন ফল বার হতে দেখা গেল, সব মিলিয়ে ৫০০-এ মাত্র চার নম্বর কম পেয়েছে সে। ভূগোল আর দর্শনে একশোয় একশো। বাংলায় ৯৯, ইতিহাসে ৯৮ আর ইংরেজিতে ৯০। ঐচ্ছিক বিষয় কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে পেয়েছে ৯৯। অর্থাৎ, সেরা পাঁচটি বিষয় ধরলে সে পেয়েছে ৪৯৬।

অন্য অনেকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে বললেও বাবা-মা কিন্তু সব সময়েই চেয়েছেন, ছেলে তার মনোমতো বিষয় নিয়ে পড়ুক। মা মৌমিতাদেবী বলেন, “কোনও কিছুই ওর উপরে চাপিয়ে দিইনি। ছেলে নাটক বেছে নিয়েছে। জোর করে বিজ্ঞান পড়ার কথাও বলিনি। জোর করলে হয়তো আজকের দিনটা দেখাই হত না।” ভিন জেলায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী বাবা গৌতমবাবু ছেলের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে বলে এ দিনই বাড়ি ফিরেছেন।

গ্রন্থন জানিয়েছে, সে দিনে ঘণ্টা দশেক তো পড়তই। কোনও কোনও দিন আরও বেশি। তার কথায়, ‘‘না হলে এই ফল করা সম্ভব নয়। তবে তার জন্য নাটক, গানের ক্লাসে অবহেলা করিনি কোনও দিন।’’

এ দিন সকাল দশটায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সাংবাদিক বৈঠক শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে গোটা রাজ্য জেনে যায়, সেরার ঠিকানা জলপাইগুড়ি শহর। ভিড় বাড়তে শুরু করে বাড়িতে। এর মধ্যেই এসেছে অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন। পরে তিনি কলকাতায় জানান, ‘‘ও ইতিহাস নিয়ে পড়তে চায়। সে কথাই আমাকে জানিয়েছে।’’ যাঁরা একদিন বিজ্ঞান পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁরাও এসেছেন অভিনন্দন জানাতে। কেউ অনুরোধ করেন দু’কলি গেয়ে শোনাতে। খালি গলায় গ্রন্থন তখন ধরে লালন: ‘সত্য কাজে কেউ নয় রাজি, সবই দেখি তা না না না/ জাত গেল জাত গেল বলে এ কী আজব কারখানা।’

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Results 2018 Granthan Sengupta History Professor Song Acting Talent গ্রন্থন সেনগুপ্ত
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy