Advertisement
E-Paper

গুরুঙ্গের অফিসে পুলিশি তল্লাশি, উদ্ধার প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র-বিস্ফোরক

এ দিন সকাল আটটা নাগাদ দার্জিলিঙে বিমল গুরুঙ্গের পাতলেবাসের অফিসে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে উদ্ধার হয় তির-ধনুক, ভোজালি, কাটারি, ছুরি, কুড়ুল, হাঁসুয়া, কোদাল জাতীয় প্রচুর ধারালো অস্ত্রশস্ত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ১০:২৪
গুরুঙ্গের অফিসে মিলেছে তির-ধনুক, ভোজালি, কাটারি, ছুরি-সহ  প্রচুর বিস্ফোরক। —নিজস্ব চিত্র।

গুরুঙ্গের অফিসে মিলেছে তির-ধনুক, ভোজালি, কাটারি, ছুরি-সহ প্রচুর বিস্ফোরক। —নিজস্ব চিত্র।

সাতসকালেই মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুঙ্গের অফিসে হানা দিল পুলিশ। সেখান থেকে বিস্ফোরক-সহ প্রচুর ধারালো অস্ত্রশস্ত্র, টাকা ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই তল্লাশি অভিযানকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়। পুলিশের উপর হামলা চালানোর পাশাপাশি পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনে নেমেছেন মোর্চা সমর্থকেরা। দার্জিলিঙের পাশাপাশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কার্শিয়াং, কালিম্পংও। কার্শিয়াঙে গ্রেফতার করা হয় মোর্চা নেত্রী করুণা গুরুঙ্গ। কালিম্পঙে আটক করা হয় মোর্চার তিন কর্মীকে।

পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকাল আটটা নাগাদ দার্জিলিঙে বিমল গুরুঙ্গের পাতলেবাসের অফিসে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে উদ্ধার হয় তির-ধনুক, ভোজালি, কাটারি, ছুরি, কুড়ুল, হাঁসুয়া, কোদাল জাতীয় প্রচুর ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। সঙ্গে মেলে, বিস্ফোরক বোঝাই বাক্স এবং বস্তাবন্দি বিপুল পরিমাণ টাকা। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি মোবাইল ও ওয়্যারলেস সেটও উদ্ধার করা হয়েছে। বিমলের বাড়ি লাগোয়া ওই অফিসে যখন পুলিশ অভিযান চালায়, তখন তিনি সেখানে ছিলেন না বলেই পুলিশ জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: গুরুঙ্গের অফিসে পুলিশি তল্লাশি, উদ্ধার প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র-বিস্ফোরক

গত সপ্তাহে দার্জিলিঙের ভানুভবনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের পর মোর্চা সমর্থকদের জঙ্গি আন্দোলনে ফের অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। এর পর পাহাড়ে পুলিশ মহলে বেশ কিছু রদবদল করা হয়। সেই সময়ে দার্জিলিং সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তিন আইপিএস অফিসার সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, জাভেদ শামিম এবং অজয় নন্দাকে তড়িঘড়ি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিনের অভিযানে ওই তিন জনের মধ্যে জাভেদ শামিম ছিলেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ওই অফিস থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক জাতীয় জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, বোমা বানানোর জন্যই ওই বিস্ফোরক মজুত করা হয়েছিল। পুলিশকে আক্রমণের কাজেই হয়তো ওই বোমা ব্যবহার করা হতো।” এর পর কি বিমল গুরুঙ্গকে গ্রেফতার করা হবে? সরাসরি জবাব না দিয়ে জাভেদ বলেন, “এ নিয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশ যখন ওই অভিযান শেষে পাতলেবাস থেকে নেমে আসছে, তখনই তাদের উপর ইটবৃষ্টি শুরু হয়। চার দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় তাদের। বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী গুরুতর জখম হন। এমনকী, সংবাদমাধ্যমের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় মোর্চা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। লাঠিচার্জও করা হয়। এ দিন দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।

পেডং-এ পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হল। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু, মোর্চার অফিসে এত অস্ত্রশস্ত্র রাখা ছিল কেন?

মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গের দাবি, “পুলিশ নির্যাতন চালাচ্ছে। তার প্রতিবাদেই এই বন্‌ধ ডাকা হয়েছে। স্থানীয় একটি তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার জন্য ওই অফিসে তির-ধনুক রাখা হয়েছিল। সেগুলিকেই উদ্ধার করে পুলিশ অস্ত্রশস্ত্র হিসাবে দেখাচ্ছে।” অন্য দিকে, রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা গৌতম দেব বলেন, “এ ধরনের বন্‌ধ বেআইনি। তা আইনি পথেই প্রতিরোধ করা হবে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকার ও প্রশাসন যা যা করণীয় সেই ব্যবস্থা নেবে।”

এমনিতে গত শনিবার অনির্দিষ্ট কালের জন্য পাহাড় বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল মোর্চা। সোমবার থেকে সেই ‘নির্দেশ’ কার্যকরও হয়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি অফিসের পাশাপাশি জিটিএর নিয়ন্ত্রণে থাকা কার্যালয়গুলি ওই বন্‌ধের আওতায় রেখে বাকি প্রায় সব কিছুকেই ছাড় দিয়েছিল মোর্চা। যদিও ওই সমস্ত অফিসে কর্মীদের হাজিরার হারে বন্‌ধ তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। এ দিনের অভিযানের পর ফের নতুন করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য পাহাড় বন্‌ধের ডাক দেয় মোর্চা।

দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদীর নেতৃত্বে এ দিন সকাল থেকেই তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। পাতলেবাসের ওই অফিস থেকেই সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করেন মোর্চা সুপ্রিমো গুরুঙ্গ। পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্র মারফত খবর পেয়েই এ দিনের অভিযান চালায় তারা সকালে দার্জিলিঙের সিংমারিতে মোর্চার অফিসের সামনে প্রথমে রুটমার্চ করে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী। এর পর পাতলেবাসের দলীয় অফিসের দরজা ভেঙে সেখানে ঢোকে তারা। পুলিশ জানিয়েছে, দার্জিলিং ছাড়াও কার্শিয়াং এবং কালিম্পঙেও সারা দিন অভিযান চলবে। দার্জিলিং শহরে ঢোকার মুখে প্রতিটি গাড়িতে তল্লাশি করা হয়।

বিমলের বাড়িতে অভিযান চালানোর পরই কার্শিয়াং-এ রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করে মোর্চা। সেই সময়ে গ্রেফতার করা হয় মোর্চার ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী করুণা গুরুঙ্গকে। অন্য দিকে, কালিম্পঙে একটি সরকারি অতিথিশালায় জ্যারিকেন নিয়ে আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নেন মোর্চা সমর্থকেরা। সেই সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের আটকে দেন। পরে পুলিশ এসে তিন জনকে আটক করে।

গোটা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের মন্তব্য। দেখুন ভিডিও

Bimal Gurung GTA বিমল গুরুঙ্গ Gorkha Janmukti Morcha Darjeeling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy