Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

শান্ত সমুদ্রে আচমকা বড় ঢেউয়েই বিপদ

কেউ এসেছিলেন ঝাড়খণ্ড থেকে, কেউ কলকাতা, কেউ বা অন্য কোনও জেলা। সমুদ্রের টানে দিঘায় আসা এই সব পর্যটকদের শেষমেশ সমুদ্রই টেনে নিয়েছে। চলতি জুনেই দিঘার সমুদ্রে মৃত্যু হয়েছে চার জনের।

হুঁশিয়ার: বড় ঢেউ এলে সতর্ক করছেন রক্ষীরা। দিঘায়। নিজস্ব চিত্র

হুঁশিয়ার: বড় ঢেউ এলে সতর্ক করছেন রক্ষীরা। দিঘায়। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু বেরা
দিঘা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৪:১৫
Share: Save:

কেউ এসেছিলেন ঝাড়খণ্ড থেকে, কেউ কলকাতা, কেউ বা অন্য কোনও জেলা। সমুদ্রের টানে দিঘায় আসা এই সব পর্যটকদের শেষমেশ সমুদ্রই টেনে নিয়েছে। চলতি জুনেই দিঘার সমুদ্রে মৃত্যু হয়েছে চার জনের।

Advertisement

রাজ্যের প্রিয়তম সৈকতনগরীতে সলিলসমাধি নতুন ঘটনা নয়। তবে সম্প্রতি মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। কেউ গার্ডওয়ালের নীচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছেন, কেউ নির্দিষ্ট ঘাটে স্নান করতে নেমেও তলিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বড় ঢেউয়ের তত্ত্ব দিচ্ছেন নুলিয়া থেকে সমুদ্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ, সকলেই।

দিঘায় বহু পর্যটকের প্রাণ বাঁচানো নুলিয়া রতন দাসের মতে, “দিঘার সমুদ্রের ঢেউ তার চরিত্র পাল্টেছে। একেবারে শান্ত সমুদ্রে হঠাৎ বড় ঢেউ চলে আসছে। ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা কোথায়, কখন সেই ঢেউ আসবে, তা বোঝা দায়। কিছু বোঝার আগেই লোকজন অথৈ সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে।’’

এ ব্যাপারে সহমত সমুদ্র বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। তাঁর ব্যাখ্যা, “ভূমির ঢাল, সমুদ্রের জল, বাতাস ও তাপমাত্রার পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফল হল বড় ঢেউ। উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্যই হঠাৎ হঠাৎ বড় ঢেউ আসছে।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রের উপরিভাগের ভাবগতিক দেখে বোঝার জো নেই। অথচ দিঘার সমুদ্রস্রোতে এখন তীব্র টান থাকছে। সেটাই পর্যটকদের তলিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। বেলচা দিয়ে যেমন বালি তোলা হয়, তেমনই এই সমুদ্রের ঢেউয়ের সৈকতে আছড়ে পড়ে পর্যটকদের প্রায় তুলে
নিয়ে যাচ্ছে। নিউ দিঘার থেকে ওল্ড দিঘায় ঢেউয়ের এই টান বেশি। তাই ওল্ড দিঘায় দুর্ঘটনাও ঘটছে বেশি।

Advertisement

দিঘার সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় স্নানে নামার তত্ত্ব উঠে আসে। তা ঠেকাতে সাবধানবাণীর বোর্ড লাগানো ও কড়া নজরদারি চালু করেছে প্রশাসন। কিন্তু নুলিয়াদের দাবি, আচমকাই এমন বড় ঢেউ আসছে যে তাঁদের বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কিছুই করার থাকছে না। ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এত বড় সৈকতে হাজার হাজার পর্যটক স্নান করেন। হঠাৎ কোথায় বড় ঢেউয়ের টানে কে তলিয়ে গেলেন, সেটা আঁচ করা কঠিন।

তা হলে উপায়? আনন্দদেববাবুর মতে, যেখানে সেখানে সমুদ্রস্নান বন্ধ করে নির্দিষ্ট এলাকা বাছতে হবে। সেখানে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষী ও নুলিয়াদের ঘেরাটোপে পর্যটকদের স্নানের ব্যবস্থা করতে হবে। আত্মরক্ষায় পর্যটকদেরও বিধি-নিষেধ মানতে হবে। তাহলে দুর্ঘটনা কিছুটা এড়ানো যাবে। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘দিঘায় বারবার মৃত্যু ঠেকাতে বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব নিয়ে পর্ষদের পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা করা হবে। সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.