Advertisement
E-Paper

তোলা তুলছেন ইন্দ্রনীল, ফের সরব হুমায়ুন

দলের এক এবং একদা দু’নম্বরের মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই প্রলম্বিত হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে দলে দীর্ঘ হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’র সংখ্যাও। বাড়ছে দলীয় নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক আকচাআকচি। বুধবার, মুখ্যমন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী ইন্দ্রনীল সেনকে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মুকুল-ঘনিষ্ঠ হুমায়ুন কবীর তা আরও উস্কে দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৭

দলের এক এবং একদা দু’নম্বরের মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই প্রলম্বিত হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে দলে দীর্ঘ হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’র সংখ্যাও। বাড়ছে দলীয় নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক আকচাআকচি।

বুধবার, মুখ্যমন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী ইন্দ্রনীল সেনকে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মুকুল-ঘনিষ্ঠ হুমায়ুন কবীর তা আরও উস্কে দিয়েছেন।

প্রাক্তন এই মন্ত্রীর অভিযোগ, বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী তথা দলের প্রাক্তন মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন, গত সাড়ে তিন মাসে মুর্শিদাবাদ জেলায় কয়লা বোঝাই লরি থেকে প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা ‘তোলা’ আদায় করেছেন। এ ব্যাপারে, একাধিক বার দলনেত্রীর কাছে নালিশ জানিয়েও যে বিশেষ ফল হয়নি, মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন মঞ্চে গায়ক-নেতার পাকা আসনই তার প্রমাণ বলে মনে করছেন হুমায়ুন।

হুমায়ুনের দাবি, বিষয়টি শুধু নবান্নে নয়, জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের গোচরেও এনেছেন তিনি। পুলিশের তৎপরতায়, দিন কয়েক ধরে ওই ‘তোলা’ আদায়ে যে কিঞ্চিৎ ভাটা পড়েছে তা-ও জানাচ্ছেন তিনি। এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা কবুল করছেন, “কয়লা বোঝাই ট্রাক আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে মুর্শিদাবাদ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে বেশ কয়েক জনকে আটক করা হলেও ওই তোলাবাজির শেকড়ের খোঁজ মেলেনি।”

এ দিন সরাসরি খোদ দলনেত্রীর বিরুদ্ধে ‘নিজের ভাইপোকে রাজা বানানোর চেষ্টা’র অভিযোগ করে তির দেগেছেন হুমায়ুন। তবে দলনেত্রীর পাশাপাশি তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী ইন্দ্রনীলকেও সে তিরে বিঁধে হুমায়ুন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার সার্টিফিকেট তুলে ধরে মুর্শিদাবাদ জেলায় তোলাবাজির কারবার খুলে বসেছেন ইন্দ্রনীল।” তিনি জানান, মূলত বীরভূম এবং ঝাড়খণ্ড থেকে কয়লা বোঝাই ট্রাক ওই জেলায় প্রবেশ করা মাত্র চালকদের আটকে ট্রাক প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়মিত আদায় করছেন ইন্দ্রনীলের শাগরেদরা।

ইন্দ্রনীলের জবাব, “আমার বিরুদ্ধে হুমায়ুনের অভিযোগগুলো গত এক বছর ধরে শুনছি। কিছু বলার নেই। তবে যে তৃণমূল কর্মী বলতে পারেন ২০১৬ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না, তাঁর মানসিক বিভ্রান্তি ঘটেছে।”

মুর্শিদাবাদে জেলা জুড়ে অন্তত আড়াইশো ইট ভাটা রয়েছে। এলাকায় যার পরিচিতি ‘চিপনি ভাটা’। হুমায়ুনের দাবি, ওই ভাটাগুলির প্রয়োজন হলদিয়া বা আসানসোল থেকে আমদানি করা কয়লায় সামাল দেওয়া যায় না। তাই পড়শি জেলা বীরভূমের বিভিন্ন খাদান থেকে ট্রাক বোঝাই কয়লা আসে জেলায়। কয়লা আসে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেও। দিনে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ লরি কয়লা আসে মুর্শিদাবাদ জেলায়। ওই কয়লার ট্রাক থেকেই তোলা আদায় করছে দলীয় নেতাদের একাংশ বলে তাঁর দাবি। হুমায়ুনের কথায়, “গত কয়েক মাস ধরে এই কারবার চলছে মূলত ইন্দ্রনীলের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে। তাঁর হয়ে ওই কাজে মদত দিচ্ছেন জেলা নেতাদের একাংশ। কী তাঁদের পরিচয়?

জেলার হুমায়ুনের দাবি, “ইন্দ্রনীলের হয়ে সেই টাকা আদায়ের কারবারের সঙ্গে রয়েছেন সদ্য নির্বাচিত জেলা কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডল এবং প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেনের পুত্র সৌমিক হোসেন।” বিষয়টি নজরে আসায় এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের কর্তাদের সতর্কও করেছেন তিনি বলে দাবি করেছেন হুমায়ুন। তাঁর অভিযোগ, “গত কয়েক মাসে এ ভাবেই অন্তত ৬০ লক্ষ টাকা তোলা আদায় করা হয়েছিল। যার মধ্যে অন্তত ৩০ লক্ষ টাকা গিয়েছে ইন্দ্রনীলের কাছে।”

সৌমিক অবশ্য ওই অভিযোগ গায়ে মাখতে চাননি। তিনি বলেন, “আমার সম্পর্কে যাঁরা জানেন তাঁরা ওই কথা বিশ্বাস করবেন না।” তবে উজ্জল মণ্ডল পাল্টা দাবি করেছেন, “যে নিজেই চোর সে আবার চোর ধরতে চাইছে!”

হুমায়ুনের অভিযোগ, তোলাবাজি ছাড়াও কিছু দিন আগে, জেলা পুলিশে হোমগার্ড নিয়োগ নিয়ে প্রার্থীদের কাছে ‘ডোনেশন’ আদায় করেছিলেন ইন্দ্রনীল। তিনি দাবি করেছিলেন, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তুলেছেন ইন্দ্রনীল ও তাঁর অনুগামীরা। হুমায়ুনের দাবি, এরই প্রতিবাদ করায়, কান্দির দেবাশিস চট্টরাজ নামে এক যুবককে ‘মিথ্যে মামলায়’ ফাঁসিয়ে এখন হাজতবাস করাচ্ছে পুলিশ। তিনি বলেন, “ওই যুবক টাকা নিয়ে নিয়োগের অভিযোগ করায় জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের নিজে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ইন্দ্রনীল।” তবে এ দিনও বড়ঞা এলাকার বাসিন্দা এক যুবক বলছেন, “ইন্দ্রনীলবাবুর নাম করে এক লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম জেলার এক নেতাকে। চাকরি তো হল না, তাই টাকা ফেরত চাইতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, কিস্তিতে ফিরিয়ে দেবেন।”

indranil sen humayan kabir extortioner
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy