Advertisement
E-Paper

ক্ষমতা থাকলে ঘেরাও বন্ধ করতাম: মারজিত

প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুরেরর ছাত্র-বিক্ষোভ নিয়ে সুগতবাবুর কটাক্ষ, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অনেক পড়ুয়াই বিপ্লব, আন্দোলন ফেলে বিদেশে চলে যান! ‘‘দু’মাস ঘেরাও করব আর তিন মাসের বেলা বিদেশে পালাব— এ-সব বর্জন করাই ভাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৯
সুগত মারজিত

সুগত মারজিত

বারবার বলেছেন তিনি, ‘‘আমি সরকারের লোক।’’ ঘেরাও বন্ধের বার্তা দিয়ে এবং শিক্ষায় রাজনীতির অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে বৃহস্পতিবার বিদায় নিলেন সেই সুগত মারজিত। ‘সরকারের লোক’ হয়েও ওই পদে আর মেয়াদ বৃদ্ধি চাননি তিনি। অগত্যা আজ, শুক্রবার আরও এক জন নতুন অস্থায়ী উপাচার্য দায়িত্ব নিচ্ছেন ওই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের। কারণ, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতিই শুরু করতে পারেনি রাজ্য সরকার!

মূলত দু’টি প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে সুগত-বিদায়ের দিনে। l এক বছর অস্থায়ী উপাচার্যের হাতে থাকার পরেও শতাব্দী-প্রাচীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষে স্থায়ী কাউকে বসানো গেল না কেন? l ‘সরকারের লোক’ সুগতবাবুকে কেন ঘেরাও নিষিদ্ধ করতে না-পারার আক্ষেপ নিয়ে, শিক্ষায় রাজনীতির দাপটের জন্য ক্ষোভ নিয়ে চলে যেতে হল?

বিদায়বেলায় ঠিক কী বলেছেন অস্থায়ী উপাচার্য? ‘‘আমার ক্ষমতা থাকলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘেরাও নিষিদ্ধ করে দিতাম। রাজনীতি করতে গেলে মাঠে নামতে হয়। অন্যের অধিকার কেড়ে দাবির লড়াই করা যায় না,’’ বলেছেন সুগতবাবু। তাঁর মতে, পাঠ-পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রদের ভূমিকাই প্রধান। যে-সব পরিবারের পড়ুয়ারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন, তাঁদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত। তাঁদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য পড়াশোনা। তাঁরা কখনই ঘেরাওয়ের মধ্যে যান না। কিন্তু ক্লাস বন্ধের জেরে, লাগাতার বিক্ষোভের জেরে ভুগতে হয় তাঁদেরই। ‘‘বাইরের রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে আসায় শিক্ষা-পরিবেশেরই ক্ষতি হচ্ছে,’’ মন্তব্য সুগতবাবুর।

প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুরেরর ছাত্র-বিক্ষোভ নিয়ে সুগতবাবুর কটাক্ষ, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অনেক পড়ুয়াই বিপ্লব, আন্দোলন ফেলে বিদেশে চলে যান! ‘‘দু’মাস ঘেরাও করব আর তিন মাসের বেলা বিদেশে পালাব— এ-সব বর্জন করাই ভাল। ফেসবুকে বিপ্লব করে কিছু হয় না।’’ একই সঙ্গে সুগতবাবুর সার্টিফিকেট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ‘তত আক্রমণাত্মক নন’।

তিনি ‘সরকারের লোক’। দু’দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে ছিলেন। বেশ কিছু অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলাও করেছেন। তবু শিক্ষায় রাজনীতির ছড়ি ঘোরানোটা তিনিও যে ঠেকাতে পারেননি, সুগতবাবুর আক্ষেপে সেটা স্পষ্ট। তাঁর আক্ষেপ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সাঙ্গ না-হওয়ায়। সুগতবাবুর কার্যকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বিধিটা তৈরি হয়ে যাওয়া খুব প্রয়োজন ছিল। অনেক কিছুই নির্ভর করে ওই বিধির উপরে।’’ গত বছর শিক্ষক-নিগ্রহের এক অস্থির অবস্থার মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুগতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমেই মনে হয়েছিল, বেশি দিন বোধ হয় সামলাতে পারব না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে বহু নিয়োগ সম্ভব হয়েছে। তবু অনেক কিছুই করা বাকি রয়ে গিয়েছে।’’

বকেয়ার মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিঃসন্দেহে প্রধান। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম কাজটাই হল সার্চ কমিটি গঠন। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সেই কমিটিই তৈরি হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেছেন, রাজ্যের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কলকাতা-সহ ন’টিতেই স্থায়ী উপাচার্য নেই। তাঁর ব্যাখ্যা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনেট ও সিন্ডিকেট গঠিত না-হওয়ায় থমকে আছে সার্চ কমিটি গড়ার কাজ। ৫ জুলাই বহু বিতর্কিত সিন্ডিকেট গঠিত হলেও সেনেট তৈরি হয়নি। তাই সুগতবাবুর পরে বিজ্ঞানের ডিন আশুতোষ ঘোষকে অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে। আপাতত তাঁর মেয়াদ ছ’মাস। ওই সময়ের মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হবে কি না, সেই প্রশ্নটাই বৃহস্পতিবার দিনভর ঘুরপাক খেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।

সিন্ডিকেটে নির্বাচিত শিক্ষক-প্রতিনিধি না-নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের মধ্যেও রাজনীতিরই খেল্‌ দেখছে বিরোধী শিবির। ২০১৫-র জুলাইয়ে স্থায়ী উপাচার্য সুরঞ্জন দাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরে কেন্দ্রের সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া চেয়ার প্রফেসর সুগতবাবুকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য করা হয় ছ’মাসের জন্য। পরে মেয়াদ বাড়ে ছ’মাস। সুগতবাবু জানান, কেন্দ্রের চাকরিতে অনেক বিধিনিষেধ। ওই চাকরি বাঁচাতে তাঁকে ফিরে যেতেই হচ্ছে।

কিন্তু স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ে টালবাহানার প্রশ্নটি রয়েই গেল। সুগতবাবুর মেয়াদ শেষের বিষয়টি জানা ছিল। তবু সরকার এক বছরে সার্চ কমিটি গড়তে পারল না কেন?

কী কী কারণে সার্চ কমিটি গড়া যায়নি, তা তিনি আগেই জানিয়েছেন বলে পার্থবাবুর দাবি। মূল কারণ অবশ্য নির্বাচন। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আশুতোষ ঘোষ অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাই আপাতত আরও ছ’মাস সময় পাওয়া যাবে। এর মধ্যে সার্চ কমিটি হবে। স্থায়ী উপাচার্যও পাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।’’

sugata marjit gherao
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy