সরব: বিশ্বনাথ ভৌমিক। ময়নাগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের ঠিক এক দিন আগে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁস বিতর্ককে ফের একবার উস্কে দিলেন ময়নাগুড়ি উত্তর মণ্ডলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বিশ্বনাথ ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, এই মুহূর্তে এটাই পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বড় দুর্নীতি। যে দুর্নীতি ফাঁস করায় হয়তো আমাকে লক্ষ করে গুলি পর্যন্ত চালানো হল।’’ এ দিন ময়নাগুড়ি বিডিও অফিস চত্বরে অবস্থিত নিজের দফতরে তিনি এ কথা বলেন।
সোমবার ময়নাগুড়ি থানায় সস্ত্রীক হাজির হয়ে স্কুল দফতরের ওই আধিকারিক দাবি করেন, রবিবার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নিজের মোটরবাইকে লাটাগুড়ি থেকে ময়নাগুড়ি ফিরছিলেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ সিঙিমারি ও ময়নাগুড়ি কলেজের মাঝখানে জাতীয় সড়কের একটি জায়গায় তাঁদের মোটরবাইককে ওভারটেক করে একশো মিটার এগিয়ে একটি নীল রঙের ছোট গাড়ি থামে। গাড়িতে তিন জন ছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই গাড়ির বাঁ দিকের জানালার কাচ খুলে কোঁকড়ানো চুলের এক ব্যক্তি তাঁদের লক্ষ করে রিভলভার থেকে গুলি ছোড়ে। গুলি ছোড়ার পর কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষাও করে গাড়িটি। তারপর সেটি চলে যায়।
আচমকা ওই ঘটনায় ভয় পেয়ে যান বিশ্বনাথবাবু ও তাঁর স্ত্রী। সেই সময় অল্টো গাড়ির নম্বর প্লেটটিও স্পষ্ট দেখা যায়নি। ওই অভিযোগপত্রে বিশ্বনাথবাবু এও লিখেছেন যে, ওই ঘটনার আগের দিন, শনিবার স্ত্রীকে নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় এক অচেনা যুবক অনুসরণ করছিল এবং মোবাইলে তাঁদের গতিবিধির কথা অন্য আর একজনকে জানাচ্ছিল। সন্দেহ হওয়ায় বিশ্বনাথবাবু ওই যুবককে ধাওয়া করলে সে পালায়।
এ দিন বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘গোটা ঘটনাটি ময়নাগুড়ি থানার আইসিকে জানিয়েছি। উনি আমাকে পুলিশি নিরাপত্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাড়া বাড়িতে থাকি বলে নিরাপত্তা নিইনি।’’ এই ঘটনায় সরাসরি কারও নাম না তুললেও বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তোলার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে হুমকি আসছে। কখনও সাসপেন্ড, কখনও অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার ব্যপারে অনেকেই হুমকি দিয়েছে। তারপরও পিছিয়ে আসিনি। ২২ মে শিলিগুড়িতে পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেছি, ‘আপনাদের তদন্তে আমি সন্তুষ্ট নই।’ তিনি এর উত্তর দিতে পারেননি।’’
যদিও পর্ষদ সভাপতি বলেন, ‘‘তিনি আপনাদের কী বলেছেন জানি না। আমার সঙ্গে এ ধরনের কোনও কথা হয়নি।’’ প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত ময়নাগুড়ি সুভাষনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায় বলেন, ‘‘তাঁর (বিশ্বনাথ ভৌমিক) উপরে হামলার কোনও খবর আমি জানি না। যদি তা হয়ে থাকে পুলিশ ঘটনাটি দেখবে। তবে আপনাদেরও উচিত সত্যতা যাচাই করা।’’
বিশ্বনাথবাবু পুলিশকে সঙ্গে করে যে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান ওই জাতীয় সড়কের দু’ধারেই পাট খেত। পাটখেতের মাঝখানে একটি চা ফ্যাক্টরি রয়েছে। রাস্তার ধারে রয়েছে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকান এবং উল্টো দিকে রয়েছে কিছু বাড়ি-ঘর। কিন্তু কেউই সে দিন কোনও গুলির বা জোরালো শব্দ শুনতে পাননি।
জাতীয় সড়ক থেকে কুড়ি-পঁচিশ মিটার দূরে বাড়ি মাধব কবিরাজের। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যায় তো বাড়িতেই ছিলাম। বাড়ির কেউ গুলির শব্দ শুনিনি।’’ ওই এলাকার চা দোকানি অবশ্য রবিবার দুপুরেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। তিনি বলেন, ‘‘দোকানে তো অনেকেই চা খেতে আসে। কই এরকম কথা তো শুনিনি।’’ ময়নাগুড়ি থানার আইসি নন্দলাল দত্ত বলেন, ‘‘ কিন্তু কোনও গুলির খোল পাওয়া যায়নি। অভিযোগ যেহেতু হয়েছে, গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ বিশ্বনাথবাবু সিআইডি তদন্তের দাবি তুলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy