E-Paper

সিঙ্গুরের ৯৯৭ একর রইল প্রচারের আড়ালে

সিঙ্গুরের সেই চৌহদ্দির এক সময়ের ‘মেশিনারি গেট’ হয়ে গাড়ি থামল বাঁশের বেড়া ঘেরা একটি ভেড়ির সামনে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ০৯:১১
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

ডানকুনি থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে একে একে ঘনশ্যামপুর, আলুর মোড়, সাহানাপাড়া পেরিয়ে সেই ‘পতিত’ জমির কাছে আসা গেল।

যে ৯৯৭ একর জমি সিঙ্গুরের কূল ছাপিয়ে রাজ্য, দেশ পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছিল একদা। ২০০৬-’০৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে অনেকাংশেই রাজ্যে ভোট-রাজনীতির জমিন জরিপে কাজ করেছে ওই চৌহদ্দি। এ বারের লোকসভা ভোটে কতটা গ্রহণয্যেগ্যতা সিঙ্গুরের সেই জমির? না কি, রাজনীতির আঙিনাতেও এখন ‘পতিত’ সেই ৯৯৭ একর? গ্রামবাসীরা বলছেন, এ বারের প্রচারপর্বে সিঙ্গুর তেমন প্রাধান্য পায়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সিঙ্গুরে মিছিল করেছেন। তবে তৃণমূল বা বিজেপির কোনও ‘হেভিওয়েট’ প্রচারে আসেননি।

সিঙ্গুরের সেই চৌহদ্দির এক সময়ের ‘মেশিনারি গেট’ হয়ে গাড়ি থামল বাঁশের বেড়া ঘেরা একটি ভেড়ির সামনে। এখন কৃষিজমি থেকে রূপান্তরিত হওয়া ভেড়ির মালিক হয়েছেন পরেশ মাইতি, গুঁইরাম পাল, দিলীপ সামন্ত, জয়ন্ত সামন্তেরা। রাজ্য সরকারই নিচু জমির জল জমে থাকা অংশে ভেড়ি বানিয়ে দিয়েছে পরিকাঠামোগত সাহায্য করে। ভেড়িতে যাওয়ার জন্য কংক্রিটের রাস্তা রয়েছে। মাছ চুরি ঠেকাতে বাঁশের বেড়া। সামনে ঘর করে একটি পরিবার বাসও করছে পাহারার জন্য। ভেড়ি-মালিকদেরই এক জনের
কথায়, ‘‘১২ বিঘে জমি ছিল। আদালতের নির্দেশে কারখানার শেড ভাঙার সময় খোঁড়াখুঁড়িতে এই জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকছিল। তাই রাজ্য সরকার সাহায্য করায় গত তিন বছর ধরে মাছ চাষ করছি এখানে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তবু তো জমিটা কাজে লাগছে!’’ কথায় খানিক আক্ষেপের সুর।

এই সুর সিঙ্গুরের অনেক চাষির গলাতেই। যাঁরা জমি দিয়েছিলেন, আর যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, সময়ের চাকার ঘূর্ণিতে এখন সবাই এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে! কংক্রিটের রাস্তা, ঝকঝকে হাসপাতাল, সরকারি কলেজ ইত্যাদি উন্নয়নের ভিড়ে সিঙ্গুরের ওই জমি এখন আলোচনার পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে। যদিও রুটিরুজির প্রশ্নে ওই জমি কাজে লাগুক, আজও সেখানকার মানুষ চান।

যেমন, দুধকুমার ধাড়া। পেশায় শিক্ষক, সিঙ্গুর আন্দোলনের পরিচিত মুখ দুধকুমার সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতিতে শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট না পেয়ে রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরত্ব বাড়িয়েছেন। পারিবারিক যে জমি ওই চৌহদ্দিতে গিয়েছিল, নানা যাঁতাকলে তার দামও পুরোটা পাননি তাঁরা।

হুগলি লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় (বিদায়ী সাংসদ) বা সিপিএম প্রার্থী মনোদীপ ঘোষের প্রচারেও সেই ভাবে মুখ হয়ে ওঠেনি সিঙ্গুরের ওই জমি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে এসে ওই জমির অনেকাংশে চাষ, তাতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা বা কৃষিভিত্তিক শিল্পের কথা বললেও সিঙ্গুরের মানুষকে তা খুব একটা ছুঁয়ে গিয়েছে, এমন নয়। বিরোধীরাও মমতার বক্তব্যের কটাক্ষ করে তাঁকে ‘শিল্পবিমুখ’ হিসাবেই উল্লেখ করেছেন। চাষিরা যথারীতি বলছেন, অনেক জমিই অনাবাদী হয়ে রয়েছে। বড় শিল্পের খোঁজ তো নেই-ই।

যদিও ফের ওই জমিকে কাজে লাগাতে সলতে পাকানোর চেষ্টায় রয়েছেন দুধকুমারের মতো কিছু ভুক্তভোগী। দুধকুমার বলেন, ‘‘আর দলীয় রাজনীতির ছাতায় নয়, আমার মতো সমমনস্ক মানুষদের নিয়ে আমরা এক ছাতার তলায় এসে কেন্দ্র ও রাজ্যের দলকে বাধ্য করব ওই জমিকে একই সঙ্গে শিল্প এবং কৃষির কাজে লাগাতে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Expressway

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy