Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নিষেধ সত্ত্বেও বাজারে বিকোচ্ছে ছোট ইলিশ

এক যাত্রায় পৃথক ইলিশ! এক দিকে, মৎস্য দফতরের নজরদারির অভাবে বহরমপুরের বিভিন্ন বাজারে দেদার বিকোচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪২
Share: Save:

এক যাত্রায় পৃথক ইলিশ!

এক দিকে, মৎস্য দফতরের নজরদারির অভাবে বহরমপুরের বিভিন্ন বাজারে দেদার বিকোচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ।

অন্য দিকে, বাংলাদেশ সরকারের কড়া পদক্ষেপের জেরে ও-পার বাংলায় এখনও মিলছে এক কেজি থেকে দেড় কেজির ইলিশ। বহরমপুরের বাজারে আসছেও তা। কিন্তু আগুন দামে মধ্যবিত্তের হাত পুড়ে যাওয়ার জোগার। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাঁরা ঝুঁকছেন ছোট ইলিশের দিকে।

এ ক্ষেত্রে জেলা মৎস্য দফতরের প্রচারই সার। মৎস্য ব্যবসায়ীদের সাইকেল বিলি করা থেকে ২৪ ঘন্টা মাছ সতেজ থাকবে এমন ৫০ লিটার আয়তনের ইনস্যুলেটর বক্স ও ওজন মাপার যন্ত্র দেওয়া হয়েছে মৎস্য দফতরের তরফে। যাতে গঙ্গা-পদ্মার অববাহিকায় তাঁরা ছোট ইলিশ না ধরে অন্য মাছের ব্যবসা করেন। কিন্তু তাতে কী? বাজারে ছোট ইলিশ ছেয়ে যাওয়ায় এখন ওই মৎস্য ব্যবসায়ীরাই প্রশ্ন তুলছেন— যাঁরা ছোট ইলিশ আমদানি করে আড়ত ভরিয়ে তুলেছে তাঁদের ব্যাপারে প্রশাসন উদাসীন কেন? তাঁদের কথায়, ‘‘যত নিষেধাজ্ঞা সব মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য!’’

তাঁরা জানান, বহরমপুরের সমস্ত বাজার ছোট ইলিশে ভরে গিয়েছে। দিঘা, ডায়মন্ডহারবার, কোলাঘাটের মাছ ধরার কেন্দ্র থেকে কলকাতা হয়ে বহরমপুরের নতুন বাজারে প্রতি দিন কয়েকশো কিলো করে মাছের আমদানি হচ্ছে। তার মধ্যে গড়ে ১০০ কিলো ইলিশ আসছে যার ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম।

গত তিন দিনে নতুন বাজার আড়তে ইলিশ আমদানি হয়েছে পাঁচ হাজার কিলোগ্রামের বেশি। নতুন বাজারের এমনই এক মাছের আড়তদার সুশীল হালদার বলেন, ‘‘গত তিন দিনে ইলিশের দারুণ আমদানি হচ্ছে। তার মধ্যে শুক্রবার ইলিশ আমদানি হয়েছে এক হাজার কিলো, শনিবার দেড় হাজার কিলো। সে ক্ষেত্রে রবিবার আমদানি হয়েছে আড়াই হাজার কিলো মাছ। তার মধ্যে প্রতি দিনই ৮০ থেকে ১০০ কিলো ইলিশ আসে যার ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম।’’ এ দিন যেমন দেড়শো কিলো ইলিশ আমদানি হয়েছে যার প্রতিটি ২৫০-৩০০ গ্রাম ওজন।

কিন্তু ছোট ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, সেখানে খোলা বাজারে বিক্রি করার জন্য ওই ইলিশ আমদানি করছেন কেন? উত্তরে ওই মাছের আড়তদার বলেন, ‘‘আমরা এখানে কমিশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করি। আমরা কেউ ব্যবসা করি না। মাছের বড় বড় ব্যবসায়ী তাঁরা মাছ কিনে নতুন বাজারের আড়তে পাঠিয়ে দেন। আমরা ওই বিক্রির উপরে শতকরা পাঁচ টাকা পেয়ে থাকি।’’ ওই মাছ ব্যবসায়ীদের কারও বাড়ি নদিয়া, কেউ থাকেন ডায়মন্ডহারবারে, কেউ দিঘায়। মুর্শিদাবাদেও ওই রকম মাছ ব্যবসায়ী আছেন, জানান তিনি।

তবে নতুন বাজার আড়তদারদের পক্ষ থেকে ওই সমস্ত ব্যবসায়ীদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে— ছোট ইলিশ বিক্রি করার ক্ষেত্রে তাঁদের অসুবিধে রয়েছে। কারণ ইলিশ মরসুম শুরুর আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে আড়তদারদের জানিয়েছে জেলা মৎস্য দফতর। কিন্তু তার পরেও নতুন বাজার মাছের আড়তে প্রতি দিন ছোট ইলিশের আমদানি হচ্ছে। এখন প্রশাসন যদি ওই ছোট ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায় তাহলে ওই সমস্ত ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। আমাদের লাভ-লোকসান কিছুই নেই তাতে বলে জানান সুশীল হালদার। বহরমপুরের বিভিন্ন বাজারে ৩০০-৩৫০ ওজনের ছোট ইলিশ সাড়ে তিনশো-চারশো টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। ডায়মণ্ডহারবার এবং দিঘা থেকে আমদানি ৪০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিকোচ্ছে সাড়ে পাঁচশো টাকা টাকা কিলো দরে। কোলাঘাটের ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কিলো প্রতি ৯০০-১০০০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। ১ কিলো তিনশো গ্রাম থেকে দেড় কিলো ওজনের পদ্মার ইলিশ বলে যা বিক্রি হচ্ছে তার দর ১৬০০ টাকা কিলো প্রতি।

যদিও জেলা মৎস্য দফতর ডিমপাড়া ও বংশবৃদ্ধির জন্য সারা বছর ৯ ইঞ্চির কম দৈর্ঘ্যের বা ৫০০ গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইলিশ মরশুম শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই পরিযায়ী রূপালী ফসলের অবাধ বংশবিস্তারের জন্য ৯০ মিলিমিটারের কম মাপের ফাঁসজাল ব্যবহারও নিষিদ্ধ। সেই সঙ্গে প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ অক্টোবর সময়ের পূর্ণিমার পাঁচ দিন আগে ও পরে ইলিশ ধরাও সম্পূর্ণ বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কী ভাবে ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে? স্বর্ণময়ী ও ফৌজদারি কোর্ট বাজারের মাছ ব্যবসায়ী স্বপন হালদার বলেন, ‘‘আমাদের মতো খুচরো ব্যবসায়ীদের কিছুই করার নেই। আড়তে যেখানে ছোট ইলিশ আমদানি হচ্ছে, সেখানে আমদানি বন্ধ করতে পারলে আমরাও বিক্রি করা বন্ধ করে দেব।’’

মুর্শিদাবাদ জেলা মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা জয়ন্ত প্রধান অবশ্য বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সচেতনতার অভাবের কারণেই বাজারে ছোট ইলিশ বিক্রি করতে এখনও দেখা যাচ্ছে। আমাদের দফতরের কর্মী সংখ্যা কম। ফলে নজরদারি অভাব তো রয়েই গিয়েছে। তা সত্ত্বেও পুলিশ, প্রশাসন ও মৎস্য দফতরের কর্মী এক যোগে মাছের আড়তগুলিতে কয়েক দিন হানা দিয়ে ছোট ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে আসতে পারলেই ছোট ইলিশ বিক্রির প্রবতা অনেকটাই কমে যাবে।’’ কিন্তু কবে থেকে হবে? প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE