Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রেসিডেন্সির সেলেও ব্লেড, ছুরি, মোবাইল

এই সব বেআইনি জিনিস পাওয়া গিয়েছে শ’খানেক বন্দির দড়িয়া হাজত-২ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি বিপ্লব দাসের নেতৃত্বে তল্লাশি চলে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে। ‘‘প্রেসিডেন্সি জেলে প্রায় আড়াই হাজার বন্দি থাকে।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০১
Share: Save:

আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে শুক্রবার সেলেই হিটার জ্বালিয়ে বন্দিদের মোচ্ছব দেখে অবাক বনে গিয়েছিলেন কারাকর্তারা। প্রেসিডেন্সি জেলে রবিবার রাতে হঠাৎ-তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাঁদের চোখ কপালে! সেখানে শুধু পাঁচটি হিটার নয়, মিলল ১৭টা ছুরি, আটটা মোবাইল, তিনটি চার্জার, কয়েকটা ব্লেড, কিছু হুক, এক্সটেনশন কর্ড, আনাজ, মশলাপাতি, টাকাও।

এই সব বেআইনি জিনিস পাওয়া গিয়েছে শ’খানেক বন্দির দড়িয়া হাজত-২ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি বিপ্লব দাসের নেতৃত্বে তল্লাশি চলে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে। ‘‘প্রেসিডেন্সি জেলে প্রায় আড়াই হাজার বন্দি থাকে। তাদের মধ্যে শ’খানেক বন্দির কাছ থেকেই যদি এই বিপুল পরিমাণ জিনিস পাওয়া যায়, তা হলে পুরো জেলে তো বেআইনি জিনিসেরই পাহাড় জমে রয়েছে,’’ বলেন এক কারাকর্তা।

খাতায়-কলমে নিষিদ্ধ হলেও মাদক থেকে মোবাইল পর্যন্ত দেদার বেআইনি জিনিস লৌহকপাটের ভিতরে ঢুকছে অবাধে। কারাকর্তাদের সব চেয়ে বেশি চিন্তায় রেখেছে জেলে খুল্লামখুল্লা ছুরি ও ব্লেডের ব্যবহার। ছুরি-ব্লেড দিয়ে বন্দিরা যখন-তখন প্রাণঘাতী হামলা চালাতে পারে। সেই ওই সব ধারালো অস্ত্র জেলে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও সেগুলো কী ভাবে বন্দিদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে, বুঝতে পারছেন না কারাকর্তারা।

১৪ জানুয়ারি আলিপুর জেলের ১৫ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে পালিয়েছে তিন বাংলাদেশি বন্দি। তার কয়েক দিন পরে হুগলি জেলে বন্দিরা তাণ্ডব চালায়। পুড়িয়ে দেয় জেলের গ্রন্থাগার। বন্দিদের তাণ্ডবে জেলকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে জখম হন কিছু বন্দিও।

তার পরেই একটি নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের কারা দফতর। তাতে বলা হয়, সব জেলে বন্দিদের সেলে আচমকা তল্লাশি চালাতে হবে। সেলে মাদক, মোবাইল, ধারালো অস্ত্র বা অন্য কোনও আপত্তিকর বস্তু আছে কি না, তা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। এই ধরনের জিনিস মিললে সঙ্গে সঙ্গে যথোচিত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বন্দিদের বদলি করে দিতে হবে ওই জেলেরই অন্যত্র কিংবা অন্য কোনও জেলে।

সেই নির্দেশিকা জারির পরেই, শুক্রবার আলিপুর জেলে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু বন্দির সেলে তল্লাশি চালিয়ে ১০-১২টা হিটার উদ্ধার করা হয়। কারাকর্তারা জানতে পেরেছেন, জেলের খাবারের বাইরে ভালমন্দ খাবার এবং ইচ্ছেমতো চা-কফি বানানোর জন্যই হিটারগুলি ব্যবহার করা হত। কিন্তু প্রেসিডেন্সি জেলে এ বারের তল্লাশিতে যে-বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা নিয়েই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন কারা দফতরের কর্তারা। বর্তমান ও প্রাক্তন কারাকর্তাদের অনেকে বলছেন, এক শ্রেণির কারাকর্মীর যোগসাজশ ছাড়া আসামিরা এত বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে না। জেল-চত্বর দাপিয়ে বেড়াতে পারে না দাগি অপরাধীরা।

সম্প্রতি কারারক্ষীদের সরিয়ে জেলের গেটে পুলিশ দিয়ে তল্লাশি চালানোর নিয়ম চালু করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও যে জেলে বেআইনি জিনিসপত্রের প্রবেশ ঠেকানো যায়নি, আলিপুর, প্রেসিডেন্সি জেলের জোড়া ঘটনা সেটা ফের দেখিয়ে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE