Advertisement
২১ মে ২০২৪

বিপদ-ঘন্টি বেজেছিল বছর কুড়ি আগেই

শিখর ছোঁয়ার নেশা থাকতে পারে। পাহাড়ের ডাকে সাড়া দেওয়া থাকতে পারে। কিন্তু পাহাড়চূড়ায় প্রতিটি পদক্ষেপে যে আতঙ্কও ওত পেতে থাকে, সে সব মাথায় না রেখে হুজুগে মেতে এভারেস্ট অভিযানে গেলে বিপদ এড়ানো শক্ত — এ কথাই বার বার উঠে আসছে এ বারের এভারেস্ট অভিযানে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

শিখর ছোঁয়ার নেশা থাকতে পারে। পাহাড়ের ডাকে সাড়া দেওয়া থাকতে পারে। কিন্তু পাহাড়চূড়ায় প্রতিটি পদক্ষেপে যে আতঙ্কও ওত পেতে থাকে, সে সব মাথায় না রেখে হুজুগে মেতে এভারেস্ট অভিযানে গেলে বিপদ এড়ানো শক্ত — এ কথাই বার বার উঠে আসছে এ বারের এভারেস্ট অভিযানে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে। আর এভারেস্ট অভিযাত্রী তথা সাংবাদিক জন ক্র্যাকওয়ের তাঁর ‘ইনটু থিন এয়ার’ বইয়ে এই সব বিপদের কথা লিখে যান বছর কুড়ি আগেই। নিজের হাড়হিম করা অভিজ্ঞতা থেকে।

‘ইনটু থিন এয়ার’। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায়, তত পাতলা হয় বাতাস। সম্ভবত সে কথা মাথায় রেখেই বইয়ের এই নাম।

১৯৯৬-এর মে-তে ক্র্যাকওয়ের এভারেস্ট অভিযানে গিয়েছিলেন অ্যাডভেঞ্চার পত্রিকা ‘আউটসাইড’-এর হয়ে। পর্বত অভিযানে সাংবাদিক সামিল হয়েছেন, এই ঘটনা এই রাজ্যেও বিরল নয়। ১৯৬০-এ নন্দাঘুন্টি অভিযানে যান সাংবাদিক গৌরকিশোর ঘোষ। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে গৌরকিশোর লিখেছিলেন ‘নন্দকান্ত নন্দাঘুন্টি’ বইটি।

বাণিজ্যকরণ কতটা ও কী ভাবে এভারেস্ট অভিযানকে প্রভাবিত করছে, সেটাই দেখতে গিয়েছিলেন ক্র্যাকওয়ের। সেই অভিযানেই এক দিনে মারা যান আট অভিযাত্রী। তুষারঝড়ের মুখে পড়ে। বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ক্র্যাকওয়েরের পর্যবেক্ষণ ছিল, বিভিন্ন সংস্থা একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার কারণে সুরক্ষার আবশ্যক বিধিনির্দেশগুলি অবজ্ঞা করছে। অথচ অভিজ্ঞ গাইডরা বছরের পর বছর তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে ওই সব নিরাপত্তাবিধিগুলো তৈরি করেছিলেন।

ওই অভিযানে বিপর্যয়ের পর প্রশ্ন ওঠে, গন্ডগোলটা কোথায় ছিল? তুষারঝড় যে আসছে, সেটা জেনেও কি সতর্কতা উপেক্ষা করা হয়েছিল? আরও বড় যে প্রশ্ন দক্ষতা ও পাহাড় চড়ার বিদ্যার চেয়ে অর্থই কি বড় হয়ে উঠেছে, যার ফলে এই বিপর্যয়? আর অভিযাত্রীর বদলে এভারেস্ট কি পর্যটকদের জায়গা হয়ে উঠল?

এই সব প্রশ্নের উত্তরই ক্র্যাকওয়ের তাঁর বইয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। তাঁর মত ছিল, সে বার এভারেস্ট অভিযানে এমন লোকজন সামিল হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই পুরোদস্তুর শক্তসমর্থ পর্বতারোহীর মতো দেখতে ছিলেন না। বরং তাঁদের ভদ্রসভ্য ও পরিচ্ছন্ন লাগছিল অর্থাৎ তাঁরা আগে কখনও এ রকম অভিযানে যাননি, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। ক্র্যাকওয়ের লিখেছেন, ‘তাঁদের খুব সামান্য পর্বত অভিযানের অভিজ্ঞতা ছিল, অথবা তা-ও ছিল না। বিমানভাড়া আর সরঞ্জাম ছাড়া এক-এক জন ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে অভিযানে সামিল হয়েছিলেন।’ বইটিতে ক্র্যাকওয়ের আরও লিখেছেন, ‘এভারেস্ট অভিযান আসলে এভারেস্ট পর্যটনে পরিণত। ওটা সত্যিকার পর্বতারোহণ নয়। ধনীদের পর্বতারোহণ।’

ক্র্যাকওয়ের ওই বই অবলম্বনে ১৯৯৭-এ তৈরি করা হয় টিভির জন্য একটি ছবি— ‘ইনটু থিন এয়ার: ডেথ অন এভারেস্ট’।

তবে ক্র্যাকওয়েরের বইয়ের পাল্টা রুশ পর্বতারোহী আনাতোলি বুকরিভ লেখেন ‘দ্য ক্লাইম্ব: ট্র্যাজিক অ্যামবিশনস অন এভারেস্ট’। ক্র্যাকওয়ের তাঁর বইয়ে বিপর্যয়ের জন্য ওই অভিযানের গাইড বুকরিভের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বুকরিভ তাঁর বইয়ে সে সব খারিজ করার চেষ্টা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Everest Expedition Into Thin Air
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE