যোগ্যতা এবং ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠাঁই হচ্ছে না অসংখ্য প্রার্থীর। প্রতীকী ছবি।
জলশূন্য মরুভূমিতে অফুরন্ত জল পানের উদার অনুমোদন! প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)-য় বসার ক্ষেত্রে বিএড ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তকে এ ভাবেই ব্যঙ্গবিদ্রুপ করছে শিক্ষা শিবিরের একটি অংশ। ব্যঙ্গবিদ্রুপ কেন?
কেননা বিএড ডিগ্রি নেওয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান হাতে গোনা (মাত্র ৩০টি)। তাই যোগ্যতা এবং ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেখানে ঠাঁই হচ্ছে না অসংখ্য প্রার্থীর। বেসরকারি বিএড প্রতিষ্ঠানেও তাঁরা প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন না। কেননা সেখানে কোর্স ফি প্রায় আকাশছোঁয়া (দেড় লক্ষ টাকা)। সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রার্থীদের ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে না কেন? এ ক্ষেত্রে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা বা নিয়মকেই ঢাল করছে রাজ্য সরকার।
শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, যেখানে জল নেই, আছে শুধু মরীচিকা, সেখানে জলপানের অনুমতি তো নিষ্ঠুর পরিহাস! পড়ার ব্যবস্থা না-করে বিএডের জন্য টেটের দরজা খুলে দেওয়াটাও তা-ই।
সম্প্রতি ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই) এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেটে বসতে হলে ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন বা ডিএলএড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল। তবে এ বার থেকে বিএড ডিগ্রিধারীরাও টেটে বসতে পারবেন। এর ফলে বিএড পড়ার তাগিদ ও চাহিদা বেড়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক করেই ডিএলএড করে নেওয়া যায়। কিন্তু বিএড করতে হলে স্নাতক হওয়া বাধ্যতামূলক। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে ডিএলএড করার প্রবণতাও বাড়ছে। কিন্তু গোটা রাজ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের যা হাল, তাতে কম খরচে প্রশিক্ষণ নেওয়া বেশ অসুবিধাজনক।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রের খবর, রাজ্যে ৬০৯টি ডিএলএড প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৬০টি সরকারি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে আসন-সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোর্স ফি দু’বছরে সাত হাজার টাকা। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেই ফি এক লক্ষ টাকা! ৪১ হাজার আসনের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পান মাত্র পাঁচ হাজার প্রার্থী। একই অবস্থা বিএডেও। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব টিচার্স ট্রেনিং, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডব্লিউবিইউটিটিপিএ), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ৬০০টি বিএড প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৩০টি সরকারি। বাকি সবই বেসরকারি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিএড পড়ার খরচ দু’বছরে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। বেসরকারি ক্ষেত্রে সেই পাঠ্যক্রমের খরচ দেড় লক্ষ টাকা। ফলে সেখানেও কম খরচে বিএড পড়ার সুযোগ কম।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সাহায্যে ২০১২ সাল থেকে ৬০টি সরকারি ডিএলএড প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। তার পরে ধাপে ধাপে আসন-সংখ্যা বাড়ানো হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা এনসিইআরটি জানিয়ে দেয়, এ বছর নতুন কোনও প্রতিষ্ঠান তৈরি করা বা আসন-সংখ্যা বাড়ানো যাবে না।’’ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে ডিএলএড এবং বিএড প্রতিষ্ঠানও। ফলে কোনও ভাবেই এখন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ডব্লিউবিইউটিটিপিএ-র এক কর্তা জানান, প্রতি বছরই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছু আসন খালি থেকে যায়। কিন্তু সরকারি ক্ষেত্রে সব আসন পূরণ হয়েও ব্যাপক চাহিদা থেকে যায়। এ বার চাহিদা আরও বাড়ছে। তা মেটাতে আরও সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়া প্রয়োজন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নিয়ম।
ফলে যথেষ্ট কড়ি না-ফেললে এ বারেও বিএড বা ডিএলএড পড়া থেকে অনেককে দূরে থাকতে হতে পারে বলে শিক্ষাজগতের আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy