Advertisement
০৫ মে ২০২৪
ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা দুষছেন নেতাদেরই

ভোটের মুখে ফের বন্ধ ইন্ডিয়া চটকল

আশঙ্কাই সত্যি হল। শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকলে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দিলেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের এই সিদ্ধান্তে কয়েক হাজার শ্রমিক সমস্যায়। ভোটের মুখে এই পরিস্থিতিতে বিড়ম্বনায় শাসক দল। তবে পরিস্থিতির জন্য সিটুর বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে তারা। সাপ্তাহিক কাজের দিন কমানো নিয়ে শনিবার শ্রমিক অসন্তোষে উত্তেজনা ছড়ায় চটকলে।

মিলের গেটে নোটিস দেখছেন এক শ্রমিক। —নিজস্ব চিত্র।

মিলের গেটে নোটিস দেখছেন এক শ্রমিক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

আশঙ্কাই সত্যি হল। শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকলে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দিলেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের এই সিদ্ধান্তে কয়েক হাজার শ্রমিক সমস্যায়। ভোটের মুখে এই পরিস্থিতিতে বিড়ম্বনায় শাসক দল। তবে পরিস্থিতির জন্য সিটুর বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে তারা।

সাপ্তাহিক কাজের দিন কমানো নিয়ে শনিবার শ্রমিক অসন্তোষে উত্তেজনা ছড়ায় চটকলে। চটকল সূত্রে খবর, ওই দিন রাত ১২টা নাগাদ মিলের গেটে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। রবিবার সকালে কাজে এসে শ্রমিকরা ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে হতাশ হয়ে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, ইচ্ছা করেই কর্তৃপক্ষ এমন পরিস্থিতি তৈরি করলেন। গোলমালের আশঙ্কায় এ দিনও মিলের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সমস্যার সমাধানে শ্রীরামপুরের উপ শ্রম-কমিশনারের দফতরের তরফে আজ, সোমবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কেন মিল বন্ধ করলেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কাঁচা পাটের জোগান কম থাকাতেই কাজের দিন কমাতে বাধ্য হন তাঁরা। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত না মেনে কিছু শ্রমিক অশান্তি করেন। মারমুখী হয়ে ওঠেন। মিলকর্তার গায়ে হাত পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ মিল খোলা রাখার ঝুঁকি নিতে চাননি। শনিবারেই মালিকপক্ষের তরফে ৫-৬জন শ্রমিকের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

ওই চটকলে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ হচ্ছিল। কাঁচামালের জোগানের অভাবের কারণেই তাঁরা সপ্তাহে এক দিন কাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, সুষ্ঠু ভাবে মিল চালানোর জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই ওই সিদ্ধান্ত হয়। যদিও কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত শ্রমিকেরা জানার পর পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তাঁদের পক্ষে সংসার চালানো দায় হবে। কাজের দিন কমানো যাবে না, দাবি তুলে শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের সময় মিলের চিফ পার্সোনেল ম্যানেজার দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যা‌ন। কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, শ্রমিকেরা তাঁকে মারধর করে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এক ঠিকাদারও শ্রমিকদের হাতে মার খান। পরিস্থিতি সামলাতে জেলা পুলিশের আধিকারিকরা বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটন‌াস্থলে যান। শ্রমিক-নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকেও সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকেরাও নিজেদের দাবিতে অনঢ় থাকেন। পাশাপাশি মিলের এমন পরিস্থিতির জন্য শ্রমিক নেতাদের একাংশকেই দায়ী করেছেন তাঁরা।

ভোটের মুখে চটকলে এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল এবং সিপিএম পরস্পরের দিকে আঙুল তুলছে। শনিবারের ঘটনার দায় সিটুর উপরেই চাপিয়েছেন আইএনটিটিইউসি নেতারা। সংগঠনের সভাপতি তথা তৃণমূল কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহ খোলাখুলি ভাবে মিল কর্তৃপক্ষের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কাঁচাপাটের সমস্যা রয়েছে, এটা সত্যি। তা সত্ত্বেও শ্রমিকরা যাতে রোজ কাজ পান তা নিয়ে আমরা আন্দোলন করছিলাম। আলোচনায় সমস্যা মিটেও যেত। কিন্তু সিটু কিছু শ্রমিককে খেপিয়ে কর্তৃপক্ষের লোকজনের গায়ে হাত তুলল। তাতেই সমস্যা বেড়ে গে‌ল।’’

সিটু নেতা ও কাউন্সিলর সুমঙ্গল সিংহের পাল্টা দাবি, ‘‘গত এক বছরে সাত বার মিলে ‘সাসপেনশন ওব ওয়ার্ক’ নোটিস ঝোলানো হয়। এতে মিথ্যাবাদী সরকারের কোনও দায়িত্ব নেই? শনিবার শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ হয়েছিল। কোনও দলের ব্যাপার ছিল না। এখন তৃণমূল আর মিল কর্তৃপক্ষ মিলে যদি বেছে বেছে সিটুর শ্রমিকদের ফাঁসাতে চায়, তা হলে আরও জোরদার আন্দোলন হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

closed India jute mill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE