Advertisement
১৭ মে ২০২৪

জঞ্জাল-যন্ত্রে বোতল ফেললেই লাভের কুপন

বিচিত্র রুজির মানুষগুলিকে কিছু দিন আগেও হরদম ঘুরতে দেখা যেত শহরতলি বা গ্রামগঞ্জের পথে পথে। ফেরিওয়ালাদের মতো কাঁধে ঝোলা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় ‘বদলে ভাজা, বদলে ভাজা’ ডাক ছাড়তে ছাড়তে হেঁটে যেতেন তাঁরা। কীসের বদলে কী ভাজা দিতে এই ডাক?

এই যন্ত্রে বোতল ফেললেই মিলবে কুপন।

এই যন্ত্রে বোতল ফেললেই মিলবে কুপন।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০৪:১০
Share: Save:

বিচিত্র রুজির মানুষগুলিকে কিছু দিন আগেও হরদম ঘুরতে দেখা যেত শহরতলি বা গ্রামগঞ্জের পথে পথে। ফেরিওয়ালাদের মতো কাঁধে ঝোলা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় ‘বদলে ভাজা, বদলে ভাজা’ ডাক ছাড়তে ছাড়তে হেঁটে যেতেন তাঁরা। কীসের বদলে কী ভাজা দিতে এই ডাক?

ছেঁড়া প্লাস্টিক, পুরনো জুতো, পলিব্যাগ ইত্যাদির মতো ফেলনা জিনিস দিলে পাওয়া যেত এক বা দু’প্যাকেট ঝুরিভাজা।

এখন ‘বদলে ভাজাদের’ দেখা মেলে ক্বচিৎ-কদাচিৎ। তবে তাঁদের রুজিরোজগারের সেই পুরনো পন্থাকে অভিনব মোড়কে জিইয়ে রাখতে চাইছে রেল। পুরনো, মলিন দশার ‘বদলে ভাজা’‌কে ঝকঝকে কর্পোরেট মোড়ক দিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্পের ‘প্রোমোশন’-এ ব্যবহার করছেন রেল-কর্তৃপক্ষ।

কী ভাবে?

রেলকর্তাদের বক্তব্য, হাজারো ট্রেনে প্রতিদিন পানীয় জলের কয়েক লক্ষ প্লাস্টিকের বোতল বা ক্যান ব্যবহার করে সেগুলি ফেলে দেন যাত্রীরা। ওই বোতল বা ক্যান ট্রেনের কামরা থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্ম, রেললাইনের দু’পাশে যত্রতত্র ফেলে দেওয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হয়। জঞ্জাল ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ব্যবহার করতে অনেক যাত্রীরই যে বিশেষ অনীহা! এই মনোভাব প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের পরিপন্থী। তাই একই সঙ্গে এলাকা পরিষ্কার রাখার জন্য এবং ফেলে দেওয়া বোতলের উপাদানকে পুনর্ব্যবহার করার চেষ্টায় বিশেষ ‘বোতল মেশিন’ বসানো হচ্ছে বড়

বড় স্টেশনে।

মেশিন বসালেই যাত্রীরা পরিত্যক্ত বোতল-ক্যান তাতে ফেলে আসবেন, এমন ভরসা কম। তেমন ইচ্ছে থাকলে তো দীর্ঘদিন আগে বসানো জঞ্জাল ফেলার পাত্রেই সেগুলো পড়তে দেখা যেত! তেমনটা ঘটছে না বলেই নতুন ব্যবস্থার ভাবনা।

সেই নতুন ব্যবস্থা হল ওই ‘বোতল মেশিন’। এবং তাতে বোতল ফেলার বদলে কিছুকিঞ্চিৎ ‘ভাজা’ মিলবে বলে জানিয়েছে রেল। কী সেই ‘ভাজা’? ওই মেশিনে খালি বোতল দিলে মিলবে মোবাইল চার্জ করার কুপন বা অন্য কোনও সংস্থার জিনিসপত্র কেনাকাটা করার কুপন। তবে আজেবাজে বোতল দিলে মেশিন তা মোটেই গ্রহণ করবে না। বোতলে স্বীকৃত সংস্থার ট্যাগ লাগানো থাকতে হবে। তবেই মিলবে ‘ভাজা’র কুপন।

মেশিনগুলি দেখতে অনেকটা বড় রেফ্রিজারেটরের মতো। সামনের ডালায় একটি বড় এলসিডি স্ক্রিন লাগানো রয়েছে। পাশে আছে একটি কাটা জায়গা, সেখান দিয়ে বোতল বা ক্যান মেশিনের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। বোতল পড়লেই স্ক্রিনে ভেসে উঠবে পছন্দের তিনটি বিকল্প।

• এটা কি অনুদান? l আপনি কি মোবাইল চার্জ করার কুপন নেবেন?

• আপনি কি অন্যান্য সংস্থার কেনাকাটার কুপন নেবেন? তিন বিকল্পের মধ্যে যাত্রী যেটি পছন্দ করবেন, তাতে ক্লিক করলেই ছাপা অক্ষরে বেরিয়ে আসবে কুপন। তা দেখালেই মিলবে ‘ভাজা’।

এই ‘ভাজা’ পেতে যে ভিড় লেগে যাবে, তার প্রমাণ মুম্বইের ছত্রপতি শিবাজি স্টেশন। গত ৫ জুন সেখানে এই ধরনের পাঁচটি মেশিন বসানোর পর থেকে সকাল-সন্ধ্যা পড়ছে লম্বা লাইন। বহু যাত্রীই বোতল জমা করতে চান ওই মেশিনে। রেলকর্তারা জানান, রোজ জমা পড়ছে শত শত বোতল। রেল-কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক উদ্দেশ্য যে অনেকটা সফল, তার প্রমাণ দিয়েছে ছত্রপতি শিবাজি স্টেশন। দফায় দফায় এই ব্যবস্থা চালু হবে অন্যান্য বড় স্টশনে। স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে এই মেশিন বসানো হবে শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশনেও। দিনে ৫০০টি বোতল ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে ওই মেশিনের। এর পরে মেশিনের ক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে।

কিন্তু ওই বোতল জমা নিয়ে এবং সেগুলো ভেঙে কী করবে রেল?

রেল সূত্রের খবর, ওই বোতল ভেঙে পুনর্ব্যবহার করা হবে কাপড়, কার্পেট ও ব্যাগ তৈরির শিল্পে।

এমনিতেই তো রেলের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা! তার উপরে এমন মেশিন বসানোর টাকা দেবে কে?

রেল জানাচ্ছে, ওই মেশিন তৈরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্টেশনে সেগুলো বসানো পর্যন্ত যাবতীয় পরিকল্পনার জন্য আদৌ কোনও টাকা খরচ করতে হচ্ছে না রেলকে। বিজ্ঞাপন হিসেবে পুরো খরচই জোগাচ্ছে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE