Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালে পাঠাবে কে, ঠিক করার আগেই মৃত্যু

ট্রেন থেকে অচেতন যুবককে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছিলেন রেলরক্ষীরা। সেটা রবিবার সন্ধ্যা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় শুইয়ে স্যালাইন দেওয়ার পরেও অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক বুঝেছিলেন, ‘রেফার’ করতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অন্ডাল শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৯:৩৪
Share: Save:

ট্রেন থেকে অচেতন যুবককে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছিলেন রেলরক্ষীরা। সেটা রবিবার সন্ধ্যা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় শুইয়ে স্যালাইন দেওয়ার পরেও অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক বুঝেছিলেন, ‘রেফার’ করতে হবে। কিন্তু নিয়ে যাবে কে, পুলিশ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ধরে টানাপড়েনে চলার মাঝে মৃত্যু হল ওই যুবকের। সোমবার রাত পর্যন্ত তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।

রেল সূত্রে জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ বর্ধমানের অন্ডালের উখড়া স্টেশন কর্তৃপক্ষ খবর পান, অন্ডাল-সাইঁথিয়া লোকাল ট্রেনের একটি কামরায় এক যুবক অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছেন। মিনিট পনেরো পরে ট্রেনটি উখড়া পৌঁছলে আরপিএফ জওয়ানেরা তাঁকে উদ্ধার করেন। অন্ডালের আরপিএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনস্পেক্টর সোমনাথ শুক্ল বলেন, ‘‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ খান্দরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই যুবককে ভর্তি করি আমরা। তাঁর কাছ থেকে কোনও জিনিসপত্র পাওয়া যায়নি। পরিচয়পত্র বা বাড়িতে যোগাযোগের কোনও সূত্র মেলেনি।’’ তাঁদের অনুমান, মাদক মেশানো কিছু খাইয়ে তাঁর জিনিসপত্র লুঠ করে থাকতে পারে দুষ্কৃতীরা। কী কারণে তিনি অচেতন হয়েছিলেন, ময়না-তদন্ত হলেই তা পরিষ্কার হবে বলে জানায় পুলিশ।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও শয্যা খালি না থাকায় বারান্দায় রেখেই ওই যুবকের চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানকার মেডিক্যাল অফিসার উদয় সরকার জানান, রাতে ওই যুবকের অবস্থা দেখে তাঁরা বোঝেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোয় তাঁর চিকিৎসা সম্ভব নয়। তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের কাছে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স ছিল না। তাই উখড়া ফাঁড়ির পুলিশকে চিঠি লিখে ওই যুবককে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করার আর্জি জানাই। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।’’ স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ব্যবস্থা রেলপুলিশের করার কথা জানিয়ে দায় সারে পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) কুমার গৌতম এ দিন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমনটা হওয়ার কথা নয়। কেন হল খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

অন্ডালের বিডিও মানস পাণ্ডে অবশ্য জানান, একটি সূত্রে খবর পেয়ে তিনি রাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকেই কোনও গাড়ির ব্যবস্থা করে দুর্গাপুরে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মেডিক্যাল অফিসার আমাকে আশ্বাসও দেন। কিন্তু সকালে জানতে পারি, ওই যুবককে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’ কেন তাঁরা নিজেরাই গাড়ির ব্যবস্থা করলেন না, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি মেডিক্যাল অফিসার উদয়বাবু।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পুলিশ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমন দায় চাপানোর খেলায় সময় নষ্ট না করলে হয়তো ওই যুবককে বাঁচানো যেত। অন্ডাল ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) পরিতোষ সোরেনে বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্তব্যরত কর্মীরা গাড়ির ব্যবস্থা কেন করলেন না, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rail Accident Injured Die
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE