আয়নায় মুখ দেখতে এখনও ভাল লাগে না তাঁর। লম্বা চুল কাটতে এই সে-দিনও বাড়িতে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল ছবিতে এখন অ্যাপের সাহায্যে গাল বেয়ে ঘন চাপদাড়ি নেমে আসছে পিকু রায়চৌধুরীর। শরীরে নারী, কিন্তু মনে পুরুষ ২৮ বছরের এই ‘তরুণ’ প্রচলিত ছকে-বাঁধা লিঙ্গভাবনার আওতায় নিজেকে মেলাতে পারেন না।
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসেও অস্বস্তিতে থাকতে হয় পিকুকে। এই বিশেষ দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সভা-মিছিলে কোনও কোনও বন্ধু ডাকলেও পিকু বা তাঁর মতো অনেকেই তা এড়িয়ে চলেন। কেন? পেশায় ব্যাঙ্কের ‘কালেকশন ম্যানেজার’ পিকু বলছেন, ‘‘এই দিনটার ইতিহাস শ্রমজীবী মেয়েদের লড়াইয়ের, এটা শুনেছি। কিন্তু আমাদের কোনও দিন নেই। বেশির ভাগ মেয়ে বা পুরুষ আমার মতো ট্রান্সম্যানদের (রূপান্তরকামী পুরুষ) আমার মতো করে মানতে পারেন না, এটাই বাস্তব।’’ তাঁর ম্লান হাসি: ‘‘আমাকেও কিন্তু পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে টক্কর দিয়েই আইডেন্টিটি (ব্যক্তিসত্তা) প্রতিষ্ঠা করতে হচ্ছে। তবু যা হতে চাই, তা হতে না-পারার যন্ত্রণা থেকেই এ-সব অনুষ্ঠান বা প্রাইড ওয়াক (যৌন সংখ্যালঘুদের গৌরব যাত্রা) পারলে এড়িয়ে চলি আমি।’’
সাম্প্রতিক কালে এ দেশের রূপান্তরকামী পুরুষদের অনেকেই অস্ত্রোপচার করিয়ে পুরুষসুলভ দেহ পেয়েছেন। মডেল হিসেবে তাঁদের কয়েক জনের বেশ নামডাক। আবার লেখাপড়া করে হরেক চাকরি বা পেশায় সফল রূপান্তরকামী পুরুষের দৃষ্টান্ত কম নয়। ভোগান্তিটা তাতে কিন্তু খাটো হয় না। রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহের কথায়, ‘‘রূপান্তরকামী নারীদেরও নানান গঞ্জনা সইতে হয়। কিন্তু রূপান্তরকামী পুরুষদের পদে পদে বিপদ। নারীসুলভ চেহারার জন্য যৌন হেনস্থার ভয় থাকে। সর্বোপরি মনেপ্রাণে পুরুষ হয়েও পুরুষ হিসেবে নারী বা পুরুষ কারও কাছে স্বীকৃতি না-পাওয়ার যন্ত্রণা তো থাকেই।’’ রঞ্জিতার কাছের বন্ধু তথা সঙ্গী শিবাংশও এক জন রূপান্তরকামী পুরুষ। শরীরগত ভাবে পুরুষ হতে তাঁর হরমোন বদলের প্রক্রিয়া চলছে। পিকুর ক্ষেত্রে সেটা এখনও শুরু হয়নি। তিনি বলছেন, ‘‘রূপান্তরের অস্ত্রোপচার ব্যয়সাপেক্ষ। আর ও-সব করালে আমায় বা়ড়ি ছাড়তে হবে। আমার মা ছেলেদের মতো পোশাকে আপত্তি করেন না। কিন্তু অস্ত্রোপচার বা হরমোন বদল করালে আত্মীয়স্বজনের কটূক্তি মা সইতে পারবেন না।’’