Advertisement
০৪ মে ২০২৪
সবং কলেজে ছাত্র-হত্যা

তথ্য জানতে পুলিশি দাওয়াই অভিযোগ-বাক্স

সবং কলেজে ছাত্র-হত্যা সম্পর্কে তথ্য জানতে শনিবার থেকে কলেজ চত্বর-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাক্স ঝোলাতে শুরু করল পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, ঠিক কী ঘটেছিল তা জানাতে আগ্রহীরা ওই বাক্সে লিখিত বয়ান জমা দিতে পারবেন। প্রয়োজনে পরিচয় গোপন রেখেও বয়ান দেওয়া যাবে।

সবং কলেজের সামনে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে পুলিশের বাক্স।—নিজস্ব চিত্র।

সবং কলেজের সামনে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে পুলিশের বাক্স।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

সবং কলেজে ছাত্র-হত্যা সম্পর্কে তথ্য জানতে শনিবার থেকে কলেজ চত্বর-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাক্স ঝোলাতে শুরু করল পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, ঠিক কী ঘটেছিল তা জানাতে আগ্রহীরা ওই বাক্সে লিখিত বয়ান জমা দিতে পারবেন। প্রয়োজনে পরিচয় গোপন রেখেও বয়ান দেওয়া যাবে। যদিও সবং-কাণ্ড নিয়ে পুলিশের প্রতিটি পদক্ষেপের মতো বাক্স-পর্বেও ষড়যন্ত্র দেখছেন বিরোধীরা। তাঁদের ধারণা, বেনামে বয়ান বানিয়ে মামলাটিকে ছাত্র পরিষদের (সিপি) বিরুদ্ধে সাজানোর জন্যই পুলিশের এই কৌশল।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, ‘‘কাজের দায়বদ্ধতা থেকে এই কাজ করেছে পুলিশ। সব কিছু আদালতের নজরে রয়েছে।’’

গত ৭ অগস্ট সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয় চত্বরে সিপি-কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিরুদ্ধে। পুলিশের যুক্তি, সে দিন কলেজে ভর্তি-প্রক্রিয়া চলায় অভিভাবক-সহ অনেক বহিরাগতই হাজির ছিলেন। তাই তাঁদের মধ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ পুলিশকে কিছু জানাতে চাইতেই পারেন। তাই বিভিন্ন এলাকায় বাক্স রাখা হচ্ছে। এ দিন কলেজ চত্বর ছাড়া, সবংয়ের বিভিন্ন এলাকা, এমনকী, পিংলা, ডেবরা এবং মেদিনীপুরেও বাক্স ঝোলানো শুরু হয়েছে। সবংয়ে ব্লক অফিসের পাঁচিলের ধারে, তেমাথানি মোড়ের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে, থানার সামনে মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে ঝোলানো, তালা-চাবি দেওয়া ‘সবং কলেজ কমপ্লেন বক্স’ নজরে এসেছে এলাকাবাসীর।

পুলিশের বক্তব্য, পিংলা, ডেবরা, মেদিনীপুর থেকে অনেকেই ওই কলেজে যান। তাই তাঁদের সুবিধার্থে বিভিন্ন এলাকায় বাক্স রাখা হয়েছে। পুলিশ সুপারের দাবি, শুধু কলেজে বা কলেজ লাগোয়া এলাকায় বাক্স রাখলে যে সব ছাত্রছাত্রী সেখানে বয়ান জমা দিতে যেতে পারেন, তাঁরা পরস্পরকে দেখতে পাবেন। তাতে সমস্যা হবে। তাই বাইরের এলাকাতেও বাক্স রাখা হয়েছে।

যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, কলেজের ভিতরের ঘটনা বহিরাগতদের পক্ষে কতটুকু জানা সম্ভব! সেই সূত্রেই এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার কটাক্ষ, ‘‘পুলিশ সুপারকে বলব, শুধু জেলায় নয়, এমন বাক্স পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে

ছড়িয়ে দিন।” এক ধাপ এগিয়ে সিপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি মহম্মদ সইফুলের আশঙ্কা, ‘‘টিএমসিপি-র ছেলেরা ওই বাক্সে আমাদের ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান জমা দেবে। তাতে মামলা সাজাতে পুলিশ সুপারের সুবিধা হবে।’’ নিহত কৃষ্ণপ্রসাদের দাদা হরিপদ জানাও বলেন, ‘‘ওখানে তো অনেকে মিথ্যা কথা লিখেও জমা দিতে পারেন।’’

সবং কলেজে ছাত্র খুনের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাটিকে ছাত্র পরিষদের ভিতরের কোন্দল হিসেবে ইঙ্গিত করেছিলেন। বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর ‘তত্ত্ব’কে প্রতিষ্ঠা করতে উঠে পড়ে লেগেছেন পুলিশ সুপার। তাই ঘটনার পরে টিএমসিপি-র তিন জন গ্রেফতার হলেও ভারতীদেবী পরে দাবি করেন, কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ধৃতদের দেখা যায়নি। পরে ফুটেজের অংশ প্রকাশ্যে এলে বয়ান বদলে তিনি বলেন, ধৃতদের হাতে লাঠি দেখা যায়নি। ক্রমাগত তিনি দাবি করেছেন, তদন্তে পুলিশ দেখেছে, ঘটনাটি সিপি-র অন্তর্দ্বন্দ্বেরই পরিণাম। সম্প্রতি ওই খুনের ঘটনায় পল্টু ওঝা নামে সিপি-র এক কর্মীকেও ধরা হয়। তা ছাড়া, সিপি-র সদস্যদের মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় ডেকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ, সবং কলেজের একাধিক শিক্ষাকর্মী, ছাত্রকে দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থাও পুলিশ মামলা সাজানোর জন্যই করছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

বিধায়ক মানসবাবুর কথায়, ‘‘পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। কৃষ্ণপ্রসাদ জানার খুনিদের আড়ালের চেষ্টা চলছে।”

টিএমসিপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি অবশ্য জানিয়েছেন, পুলিশ সুপারের তদন্তে তাঁদের আস্থা রয়েছে। সিপি-কে বিঁধে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যাদের নিজেদের গোলমালের জেরে এই ঘটনা, তারা তো নানা কথা বলবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabang murder case Investigation kharagpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE