মাতৃভূমি লোকাল দখলের পরে এ বার অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের লড়াইয়েও জয় হল মহিলাদের।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে মাতৃভূমি কেবলমাত্র পুরুষদের জন্যই থাকবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে রেল। এই সিদ্ধান্তকে নিজেদের নৈতিক জয় বলে মনে করছেন মহিলা যাত্রীরা। বিভিন্ন সোস্যাল নেটওয়ার্কে এই জয়ের ‘সেলিব্রেশন’ও শুরু হয়েছে।
এর মধ্যেই যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় দফায় দফায় রেল অবরোধ, মহিলা-পুরুষ যাত্রীর মারপিট— তার তদন্তে নেমে শুক্রবার পুলিশ জানিয়ে দিল, মহিলা কামরা থেকে কোনও পুরুষ যাত্রীকে ফেলে দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, তদন্তের পরে পুলিশ বলছে— বিরাটি স্টেশনে মাতৃভূমি থেকে তাড়াহুড়ো করে নামার সময় প্ল্যাটফর্মে পড়ে গিয়ে চোট পান বিশরপাড়ার যুবক দীপঙ্কর দে। সেই চোটও ছিল খুব সামান্য। মহিলারা তাঁকে নেমে যেতে বলেছিলেন। তা নিয়ে তর্কাতর্কি চললেও ধাক্কা মেরে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি।
কী বলছে পুলিশ রিপোর্ট?
বুধবার মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে দফায়-দফায় অবরোধ, মারপিটের ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখা। সেই অবরোধ যখন ওঠার মুখে, খবর আসে বিরাটিতে আগের মাতৃভূমি ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে এক যুবককে। সে মারা গিয়েছে বলেও গুজব ছড়িয়ে যায় দাবানলের মতো। বামনগাছি, দত্তপুকুর, বিরাটিতে পর পর অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন পুরুষ যাত্রীরা। বিরাটিতে মহিলাদের উপরে চড়াও হন কিছু পুরুষ।
পুলিশি তদন্তে যখন জানা গিয়েছে, একটা গুজবকে কেন্দ্র করে এত বড় ঝামেলা, তা হলে ওই যুবককে কেন গ্রেফতার করা হবে না? এই প্রশ্নের জবাবে রেলের এক কর্তা জানান, গুজব ছড়ানোয় ওই যুবকের হাত ছিল না বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। সে বিরাটি স্টেশনে বসেই ছিল। তবে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি বলে জানিয়েছে রেল পুলিশ।
এত বড় ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে জানিয়েছে রেল পুলিশ। কেন? রেল পুলিশ সুপার (শিয়ালদহ) দেবাশিস বেজ শুক্রবার বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ হয়নি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
বিরাটির ঘটনা মহিলাদের হেনস্থা ও তাদের সঙ্গে অসভ্যতার অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে বারাসত রেল পুলিশের কাছে অভিযোগও করেছেন মহিলারা। কিন্তু তার ভিত্তিতে শ্লীলতাহানির মামলা দয়ের করেনি পুলিশ। পুলিশের জবাব, ‘‘মেয়েরা যে অভিযোগ করেছেন তাতে ধাক্কাধাক্কি, মারধরের অভিযোগ করলেও শ্লীতাহানির অভিযোগ আনেননি।’’
এ দিনও মাতৃভূমি লোকালের প্রতি কামরা এবং স্টেশনে পুলিশ ছিল। নির্দিষ্ট তিনটি কামরাতেই ওঠেন পুরুষেরা। দিন কয়েকের মধ্যেই রেলের নির্দেশ এবং নতুন কামরা এলে মাতৃভূমিতে পুরুষ ওঠা নিষিদ্ধ হবে বলে জানিয়েছে রেল। এ দিন মাতৃভূমিতে এই ‘জয়ের’ আলোচনাতেই মগ্ন ছিলেন মহিলারা। পুলিশি রিপোর্টে দ্বিতীয় জয়ের কথা শুনে কলেজ শিক্ষক শিউলি সাহার জবাব, ‘‘বিরাটিতে ঘটনার সময় আমি ওই ট্রেনেই ছিলাম। মেয়েরা কখনও কাউকে মারতে পারে না। এ বার সত্যিই আমাদের জয় হল।’’
এই ‘ডবল’ হারকে কী ভাবে নিচ্ছেন পুরুষেরা? ঘটনার দিন থেকে মহিলা বিদ্বেষে একের পর এক ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বনগাঁর স্কুল শিক্ষক সঞ্জয় পাল। এ দিন তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ছাড়ুন। সবই তো আমাদের ঘরের মা-বউ-মেয়ে। কার হার, কার জিত!’’
মহিলা-পুরুষের এমন সব মন্তব্য জেনে রেল পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেলেই ভাল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy