E-Paper

গরুর সঙ্গে কি পাচার রেশনের চাল-গমও, প্রশ্ন

উত্তর ২৪ পরগনায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কেবল বাকিবুর নয়, জেলার আরও অনেক মিল মালিকদের সঙ্গে নাকি জ্যোতিপ্রিয়ের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁদের কাছ থেকেও তাঁর কাছে টাকা পৌঁছত কি না, তা-ও তদন্ত সাপেক্ষ, জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:১৬
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বাঁ দিকে) এবং বাকিবুর রহমান।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বাঁ দিকে) এবং বাকিবুর রহমান। —ফাইল চিত্র।

দেগঙ্গা থেকে উত্থান। তার পরে বাকিবুর রহমান ‘শাখাপ্রশাখা’ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে। সেই শাখা ছড়িয়েছিল নদিয়াতেও, দাবি করছেন তদন্তকারীরা। ‘প্রভাবশালীদের’ হাত মাথায় থাকার ফলে ‘শাখা’ কি তিনি ও-পার বাংলাতেও ছড়িয়েছিলেন? এই প্রশ্ন যেমন উঠতে শুরু করেছে রেশন দুর্নীতির অন্যতম মূল অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানকে ঘিরে, তেমনই প্রশ্ন উঠছে, এই প্রভাবশালী বা প্রভাবশালীরা কে বা কারা?

সেই প্রশ্ন ধরে সামনে এসেছে একাধিক সূত্র। কোথাও মেরুন ডায়েরি, যেখানে লেখা ‘বালুদা’র কথা। আবার কোথাও শোনা গিয়েছে ‘এমআইসি’ নামে এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ। ইডি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা এই শব্দগুলি যাচাই করে দেখছে। তবে উত্তর ২৪ পরগনার লোক মাত্রেই জানেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ‘বালু’ নামেই পরিচিত গোটা জেলায়। শুধু জেলায় কেন, গোটা রাজ্যেই। আর ‘এমআইসি’? অনেকের দাবি, এমআইসি-এর অর্থ ‘মিনিস্টার ইন চার্জ’। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকে ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পার্থ ভৌমিকেরাও মন্ত্রী। কিন্তু দলের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জ্যোতিপ্রিয়ই পরিচিত ‘এমআইসি’ হিসাবে।

রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে বাকিবুর ও জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারের পর এই ‘এমআইসি’ শব্দটি ধরে তদন্ত শুরু করেছেন ইডি কর্তারা। ইডি সূত্রে বলা হয়েছে, বাকিবুরকে গ্রেফতারের পরে যে মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, তা ঘেঁটে কিছু লেনদেনের বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে। তখনই সামনে আসে ‘এমআইসি’ নামক এক ব্যক্তির কথা, পাওয়া যায় তাঁকে একাধিক বার টাকা দেওয়ার তথ্যও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই ‘এমআইসি’ বা ‘মিনিস্টার ইন চার্জ’ আর কেউ নন, খোদ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়।

প্রাথমিক ভাবে ইডি-র অভিযোগ, রেশন সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করতেন বাকিবুর। সেই বিক্রির টাকা নাকি পাঠানো হত এক প্রভাবশালীকে। ইডি-র দাবি, ২০১৬-২০১৭-র মধ্যে ওই প্রভাবশালীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬.০৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে। ২০১৬-র নভেম্বরে প্রভাবশালীর কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৩.৭৯ কোটি টাকা। ইডি সূত্রে বলা হয়েছে, এখানে জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর মেয়ে তথা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব প্রিয়দর্শিনীর কথা বলা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করেদেখা চলছে।

উত্তর ২৪ পরগনায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কেবল বাকিবুর নয়, জেলার আরও অনেক মিল মালিকদের সঙ্গে নাকি জ্যোতিপ্রিয়ের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁদের কাছ থেকেও তাঁর কাছে টাকা পৌঁছত কি না, তা-ও তদন্ত সাপেক্ষ, জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। পছন্দের লোকজনকে টেন্ডার বা সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও কোনও দুর্নীতি ছিল কি না, তা নিয়েও তদন্ত হতে পারে। এমনই ইঙ্গিত তদন্তকারীদের। ওই সব মিল মালিককে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও সমঝে চলতেন বলে জানা গিয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পরে ওই মিল মালিকেরা আতঙ্কে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিভিন্ন কারবারের টাকাও ঘুরপথে প্রভাবশালী কারও কাছে পৌঁছত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও গরু পাচার তদন্তে উত্তর ২৪ পরগনায় সিবিআই এখনও ঢোকেনি, তবে এক সময়ে এই জেলায় পাচারের রমরমা ছিল বলেই অনেকের দাবি। সেই পাচারের পিছনেই বা বড় মাথা কে বা কারা ছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বাকিবুরের বিরুদ্ধে যেখানে বাংলাদেশে ‘অবৈধ’ ভাবে চাল, গম পাচারের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে সীমান্তে পাচারের প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট লোকজন।



(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jyotipriya Mallick Bakibur Rahman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy