Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩

ভাঙন মোকাবিলায় ভরসা ভেটিভার ঘাস, পাটের জাল

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের হামলায় বিভিন্ন বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার বসিরহাটের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই সব বাঁধেও ম্যানগ্রোভ আর ভেটিভারের ঘাস ব্যবহার করলে তা অনেক শক্তপোক্ত হবে। কাকদ্বীপের বৈঠকেও ভেটিভার ঘাস ও ম্যানগ্রোভের কথাই বলেছিলেন তিনি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৮
Share: Save:

পরীক্ষায় সাফল্য এসেছিল। সেটাকে সঙ্গী করে আর এক পরীক্ষাতেও সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়া হওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। সেই সাহসে ভর করে ভবিষ্যৎ গড়তে চায় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ (জিবিডিএ)।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে সাগরের নাগ সরোবর মন্দির কমপ্লেক্স চত্বরের পুকুরপাড়ের (একদা ট্যাঙ্কপাড় নামে পরিচিত) ভাঙন চলছিল। ‘পাইলিং’ বা পাড় বাঁধিয়েও সেই ভাঙন রোধ করা যাচ্ছিল না। প্রায় এক বছর ধরে সেখানে পরীক্ষামূলক ভাবে পাটের তন্তু দিয়ে তৈরি জাল এবং ভেটিভার ঘাস ব্যবহার করা হয়। দেখা যায়, তাতে কাজ হয়েছে। পাড় ভাঙেনি। ভেটিভার ঘাসের শিকড় গভীরে গিয়ে ওই চত্বরকে সবুজে পরিণত করেছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের হামলায় বিভিন্ন বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার বসিরহাটের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই সব বাঁধেও ম্যানগ্রোভ আর ভেটিভারের ঘাস ব্যবহার করলে তা অনেক শক্তপোক্ত হবে। কাকদ্বীপের বৈঠকেও ভেটিভার ঘাস ও ম্যানগ্রোভের কথাই বলেছিলেন তিনি।

পুকুরপাড় সংলগ্ন এলাকায় সাফল্য আসার পরে নতুন পরীক্ষা শুরু হয় বেণুবন জেটিঘাট থেকে গঙ্গাসাগর যাওয়ার রাস্তাকে কেন্দ্র করে। ওই রাস্তাকে বেছে নেওয়া হল কেন?

Advertisement

পর্ষদের দাবি, বেণুবন জেটিঘাট থেকে গঙ্গাসাগরের ১৩ কিলোমিটার রাস্তা ওই এলাকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জোয়ার না-থাকলেও ওখানে লঞ্চ চলে। ফলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই লঞ্চ ব্যবহার করতে পারে আমজনতা। ওই এলাকায় চেমাগুড়ি খালের জন্য ভরা কোটাল বা জোয়ারের জল ওই সব এলাকার রাস্তা এবং পুকুরে ভাঙন ত্বরান্বিত করছিল। মন্দির কমপ্লেক্স এলাকার আদলেই বেণুবন জেটিঘাট থেকে গঙ্গাসাগরের রাস্তায় ভেটিভার ঘাস এবং পাটের তন্তুর জাল ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়। সেই কাজ শেষ হয়েছে চার কিলোমিটার এলাকায়। ওখানে বিভিন্ন পুকুরের বাঁধেও ভেটিভার ব্যবহৃত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভাঙন ধরা বিভিন্ন এলাকায় ভেটিভার ঘাস ব্যবহার করতে বলেছেন।

এর মধ্যে প্লাস্টিককে দূরে ঠেলে পাটজাতীয় সামগ্রীকে কাজে লাগাচ্ছে জিবিডিএ। নোনা এলাকায় ছোট গাছের নীচের অংশকে শিকড় এবং মাটি দিয়ে প্লাস্টিকবন্দি করা হত। জিবিডিএ-র কর্তাদের পর্যবেক্ষণ, সেই প্লাস্টিক কেটে গাছ লাগালে নোনা জলের ছোঁয়াতেই তার মৃত্যু হয়। সেই জন্য অন্য রাস্তা নিয়েছেন পর্ষদকর্তারা। গত এপ্রিলে কয়েকটি রক্তচন্দন গাছ প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগে ভরে বড় করার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। তাতে দেখা যায়, পাটের ব্যাগ-সহ গাছ মাটিতে বসালেও তা দিব্যি বড় হচ্ছে। সেই ভাবনা থেকে কয়েক মাস আগে প্রায় দু’হাজার লম্বুগাছ পাটের ব্যাগে রেখে বড় করা হচ্ছে। আর একটু বড় হলেই সেই গাছগুলিকে গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হবে। পুর-নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব সুব্রত গুপ্তের পরামর্শেই পাটতন্তুর ব্যবহার শুরু হয় বলে জানান পর্ষদের এগ্‌জিকিটিভ অফিসার জয়ন্ত মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.