Advertisement
E-Paper

আইটিআই তৈরিতে গতি নেই মন্ত্রীর জেলাতেই

কোনও কলেজ আটকে জমিজটে। কোনও কলেজের জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। কোনও কলেজের জমি আবার নির্মাণ সংস্থাকে হস্তান্তর করা হয়নি! মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ব্লকে ব্লকে আইটিআই তৈরির প্রকল্পের এমনই হাল বিভাগীয় মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের নিজের জেলাতেই। রাজ্যের অন্য জেলার তুলনায় নদিয়া কেন পিছিয়ে তা নিয়ে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৮

কোনও কলেজ আটকে জমিজটে। কোনও কলেজের জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। কোনও কলেজের জমি আবার নির্মাণ সংস্থাকে হস্তান্তর করা হয়নি! মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ব্লকে ব্লকে আইটিআই তৈরির প্রকল্পের এমনই হাল বিভাগীয় মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের নিজের জেলাতেই।

রাজ্যের অন্য জেলার তুলনায় নদিয়া কেন পিছিয়ে তা নিয়ে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। কারিগরি শিক্ষামন্ত্রীর বিধানসভা এলাকায় কলেজের কাজও এখনও শুরু না হওয়ায় কাঠগড়ায় খোদ মন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের দাবি, কারিগরি শিক্ষা দফতর যে নির্মাণ সংস্থাগুলিকে কলেজ তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে তাদের গাফলতির কারণেই পিছিয়ে পড়েছে জেলা। আর উজ্জ্বলবাবুর মত, কলেজ তৈরির জমি নিয়ে নানা সমস্যা থাকায় দ্রুত কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না নির্মাণ সংস্থা।

এই মুহূর্ত নদিয়ার ১০টি ব্লকে আইটিআই তৈরির কাজ চলছে। প্রতিটি কলেজ তৈরির জন্য ১০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। কলেজগুলি হল চাপড়া, কালীগঞ্জ, করিমপুর ১, হরিণঘাটা, নাকাশিপাড়া, তেহট্ট, কৃষ্ণনগর ১ ও কৃষ্ণনগর ২, রানাঘাট ২ এবং কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি নদিয়ায় এসে চাপড়া ও কালীগঞ্জ আইটিআই-এর শিলান্যাস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। কালীগঞ্জ কলেজটির নির্মাণ-কাজ প্রায় শেষ হয়ে এলেও চাপড়ার কলেজ তৈরির কাজ এত দিন পরেও শুরু হয়নি। ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর করিমপুর ১, হরিণঘাটা, কৃষ্ণনগর ২, নাকাশিপাড়া ও তেহট্টের আইটিআই কলেজের শিল্যান্যাস করে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে শুধুমাত্র নাকাশিপাড়া কলেজের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তেহট্টের কাজ কিছুটা এগোলেও বাকি ব্লকের অবস্থা খুব খরাপ। জমিজটের সমস্যা মিটিয়ে হরিণঘাটার কলেজ তৈরির কাজ সবে শুরু হয়েছে। কৃষ্ণনগর ২ ব্লকের জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হলেও ভবন তৈরির কাজ থমকে! করিমপুর ১ ব্লকের জমি এখনও নির্মাণ সংস্থাকে হস্তান্তর করা হয়নি বলে দাবি। ২০১৪ সালের ৮ অগস্ট জেলায় তৃতীয়বার এসে মুখ্যমন্ত্রী শিলান্যাস করেন কৃষ্ণনগর ১, রানাঘাট ২ ও কৃষ্ণগঞ্জের আইটিআই কলেজের। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী কৃষ্ণগঞ্জ, কৃষ্ণনগর ১ ও রানাঘাট ২-এর কাজ শুরু হলেও তেমন এগোয়নি।

মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্পের এমন অগ্রগতি কেন? জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, কাজে র তদারকির দায়িত্বে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা দফতর। আর সেই কাজ করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্মাণ সংস্থা। ফলে তাঁদের দ্রুত কাজ শেষের তাগাদা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। তিনি বলেন, ‘‘যে সময়ে আইটিআই কলেজ তৈরির কাজ শুরু হয় তখন জেলার চারটি জেনারেল ডিগ্রি কলেজ তৈরির কাজও হাতে নেয় পূর্ত দফতর। চারটি কলেজের কাজই দেড় বছরের মধ্যে শেষ করে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে সেগুলির ক্লাসও শুরু করে দেওয়া গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, পূর্ত দফতর দায়িত্বে থাকায় জেলা প্রশাসন সেই কাজের সরাসরি তদারক করতে পেরেছিল। কিন্ত আইটিআই এর ক্ষেত্রে সেটা করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রশাসনের কর্তারা মেনেছেন, কাজের শ্লথ গতির জন্যে এরই মধ্যে জেলার ‘ডেভলপমেন্টের মিটিং’এ একাধিকবার ওই নির্মাণ সংস্থাগুলিকে ডেকে দ্রুত কাজ শেষে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, তারপরেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

জেলার দশটি আইটিআই কলেজের মধ্যে পাঁচটি কলেজ তৈরির দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি নির্মাণ সংস্থা। সংস্থার পশ্চিমবঙ্গ জোনালের প্রজেক্ট এক্সিকিউটিভ দেবব্রত কর্মকার বলেন, ‘‘যে ভাবে জমি হাতে পাচ্ছি সেই মতোই কাজ শুরু করছি। ঠিক সময়ে পেলে দ্রুত কাজ উদাহরণ কালীগঞ্জ।’’ সময় মতো জমি হাতে না পাওয়ার জন্যেই আইআটিআই তৈরির কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।

ওই সংস্থার কর্তাদের দাবি, কৃষ্ণনগর ২ ও চাপড়া ব্লকে জমি পেলেও সেই জমিতে প্রচুর গাছ থাকায় সমস্যা হচ্ছে। বন দফতর থেকে গাছ কাটার অনুমতি পেতে দেরি হচ্ছে। আবার করিমপুর ১ ব্লকে যে জমি দেওয়া হয়েছে সেটা অনেকটাই নীচু। মাটি ফেলে উচুঁ না করলে কাজ শুরু করা যাবে না। তার উপরে এখনও জমি হস্তান্তরই করা হয়নি। হরিণঘাটায় একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করার পরে চলতি বছরের ৮ জুন তাঁদের জমি হস্তান্তর করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেবব্রতবাবু।

জমি নিয়ে সমস্যার কথা মানতে চাননি জেলা প্রশাসনের কর্তারা। অতিরিক্ত জেলাশাসক উৎপল ভদ্র বলেন, ‘‘জমি নিয়ে জেলায় কোনও সমস্যা নেই। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে অন্যের উপরে দোষ চাপানো হচ্ছে।’’ বিভাগীয় মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস অবশ্য এই বিতর্কে নির্মাণ সংস্থাগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তাঁর মন্তব্য, ‘‘জমি নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। কোথাও বন দফতরের থেকে গাছ কাটার অনুমতি না মেলায় শুরু করতে দেরি হচ্ছে। করিমপুরে যেমন নিচু জমি মাটি দিয়ে উচুঁ করতে সময় লাগছে।’’ তিনি জানান, রাজ্যে ১১১টি আইটিআই কলেজ তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে ৮০টি কলেজ তৈরি হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রীর জেলাই যে পিছিয়ে তা বলে দিচ্ছে তাঁর দেওয়া পরিসংখ্যানই। তবে সেগুলি দ্রুত শেষের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

industrial training institute iti hub iti making process technical education minister ujjwal biswas nadia iti karimpur iti tehatta iti krishnanagar iti nadia iti colleges 10 iti colleges
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy