Advertisement
E-Paper

ক্যাম্পাসে ফিরলেন উপাচার্য, জারি বিক্ষোভ

আট দিন বাদে বিনা বাধায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পেরেছিলেন নির্বিঘ্নেই। তবে অরবিন্দ ভবনে নিজের দফতরে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কাটিয়ে বেরনোর সময় পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। কারণ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, এ দিন তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ছাত্ররা যেমন ক্যাম্পাসের মধ্যেই আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন, তেমনই কর্তৃপক্ষও পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার ব্যবস্থা করা অথবা বিক্ষোভ-অবস্থানের জন্য জায়গা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেননি। দিনের শেষে পড়ুয়ারা ফের জানিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁদের ক্লাস বয়কট অব্যাহত থাকবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৯
আসা-যাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের দফতরে ঢুকছেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী (বাঁ দিকে)। বিকেলে বেরোলেন নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। বৃহস্পতিবার শশাঙ্ক মণ্ডল এবং বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

আসা-যাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের দফতরে ঢুকছেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী (বাঁ দিকে)। বিকেলে বেরোলেন নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। বৃহস্পতিবার শশাঙ্ক মণ্ডল এবং বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

আট দিন বাদে বিনা বাধায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পেরেছিলেন নির্বিঘ্নেই। তবে অরবিন্দ ভবনে নিজের দফতরে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কাটিয়ে বেরনোর সময় পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। কারণ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, এ দিন তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ছাত্ররা যেমন ক্যাম্পাসের মধ্যেই আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন, তেমনই কর্তৃপক্ষও পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার ব্যবস্থা করা অথবা বিক্ষোভ-অবস্থানের জন্য জায়গা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেননি। দিনের শেষে পড়ুয়ারা ফের জানিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁদের ক্লাস বয়কট অব্যাহত থাকবে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঘেরাও থাকা অবস্থায় মাঝরাতে পুলিশের সাহায্যে বাড়ি ফেরেন উপাচার্য। তিনি কেন পুলিশ ডেকেছেন, সেই পুলিশ কেন ছাত্রদের পিটিয়েছে, সেই অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন মহল সরব হয়েছে। তার পর থেকে গত কয়েক দিন ধরে উপাচার্যের ভূমিকার নিন্দা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে-বাইরে প্রবল আন্দোলন হয়েছে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, এমনকী বিদেশেও। বৃহস্পতিবারও দিল্লির যন্তর-মন্তরে যাদবপুরের প্রায় শ’দুয়েক প্রাক্তনী বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যাদবপুরের পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার ক্যাম্পাসের এসএফআই সমর্থকরা দুপুরে একটি মিছিল করেন।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তার আর্জি জানিয়ে দিন কয়েক আগে রাজ্যপালকে চিঠি লেখেন উপাচার্য। পরে এই নিয়ে কথা বলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গেও। নবান্নের খবর, পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়ার ব্যবস্থা করতে আপত্তি রয়েছে প্রশাসনের। সরকারের এই অবস্থান অভিজিৎবাবুকে জানিয়েও দেওয়া হয়। এরই মধ্যে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর নির্দেশ দেওয়ায় ক্যাম্পাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উপাচার্য। সরকারও তাঁকে সেই পরামর্শই দেয়।

এর পরে এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ আগাম কোনও খবর না দিয়েই হাজির হন উপাচার্য। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে ঢোকার সময় অন্য দিনের তুলনায় তাঁর গাড়ির গতি কিছুটা বেশি ছিল। তখনও প্রায় ফাঁকাই ছিল অরবিন্দ ভবন চত্বর। কিন্তু উপাচার্য আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দ্রুত সেখানে ভিড় জমান পড়ুয়ারা। চলতে থাকে হাততালি দিয়ে স্লোগান, চিৎকার-চেঁচামেচি।

ভিড় থেকে বারবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ওঠে। এক দল প্রশ্ন তোলেন, পদত্যাগের দাবিতে কি উপাচার্যকে ঘেরাও করা উচিত?

উত্তর পেতে অরবিন্দ ভবনের সামনেই সাধারণ সভা বসান ছাত্রছাত্রীরা। পরে তাঁরা জানান, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকলেও তাঁকে ঘেরাও করা হবে না। এক ছাত্রনেতা বলেন, “ওঁকে আমরা ক্যাম্পাসে চাই না। তাই উনি কখন এলেন, কখন বেরোলেন, তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই!”

এই অবস্থার মধ্যেই ঘণ্টাপাঁচেক দফতরে কাটিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে যান অভিজিৎবাবু। অরবিন্দ ভবনের সামনে তখনও প্রচুর ছাত্রছাত্রীর ভিড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা ঘেরাটোপ তৈরি করে উপাচার্যকে গাড়িতে তুলে দেন। পড়ুয়ারা তখন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সরব। উত্তেজনায় কেউ কেউ অভিজিতের গাড়িতে চাপড়ও মারেন।

উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন শুনে এ দিন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু পড়ুয়া যাদবপুর ক্যাম্পাসে ঢোকেন। প্রেসিডেন্সি, আইএসআই-এর পাশাপাশি পুণের সিমবায়োসিসের পড়ুয়ারা আসেন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে। এই নিয়ে সরকারের এক শীর্ষকর্তার মন্তব্য, “এ দিন ক্যাম্পাসে কারা এসেছিলেন, সেখানে কী হয়েছিল, সে সবের ভিডিও রেকর্ডিং হয়েছে। তাতে বহিরাগতদের ছবিও ধরা পড়েছে। আন্দোলনে যে বহিরাগতরা মদত জোগাচ্ছেন, এতে তা পরিষ্কার।” তিনি জানান, প্রয়োজনে এই ছবি আদালতেও জমা দেওয়া হবে।

দেরিতে হলেও কর্তৃপক্ষ এ দিন আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আনাগোনা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিয়ে কিছু নিয়ম বেঁধে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “বুধবার দুপুরে আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরে তা জেনে ব্যবস্থা নিতে কিছুটা সময় লাগছে। শুক্রবারের মধ্যে নয়া বন্দোবস্ত কার্যকর করা যাবে বলে আশা করছি।” বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র-শিক্ষাকর্মী-গবেষকদের ঢোকা বেরোনো এবং বহিরাগতদের আনাগোনার জন্য পৃথক গেট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। বহিরাগতদের রেজিস্টার খাতায় নাম লিখে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িতদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভিতরে ঢুকতে হবে। অরবিন্দ ভবনের সামনে আর কোনও বিক্ষোভ দেখানো যাবে না। তবে আগাম অনুমতি নিয়ে ত্রিগুণা সেন প্রেক্ষাগৃহের পাশের রাস্তায় বিক্ষোভ-কর্মসূচির আয়োজন করা যাবে। প্রদীপবাবু জানান, উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন বিজ্ঞপ্তি তাঁরা মানবেন কি না, ছাত্রছাত্রীরা এ দিন তা স্পষ্ট করে জানাননি। তবে শিক্ষক সংগঠন জুটার অভিযোগ, আদালতের নির্দেশের বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত কিছু নিয়ম জারি করছে, যা তাঁরা মানতে বাধ্য থাকবেন না। জুটা জানিয়েছে, সে দিনের পুলিশি তাণ্ডবের নিরপেক্ষ তদন্ত ও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আজ, শুক্রবার তিনশোরও বেশি শিক্ষকের স্বাক্ষর করা দাবিপত্র রাজ্যপালের কাছে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক গোলমালের প্রতিবাদে এ দিন ক্যাম্পাসে অবস্থানও করেন জুটার সদস্যরা। অন্য এক শিক্ষক সংগঠন আবুটা-র আশঙ্কা, বিশ্ববিদ্যালয়ের জারি করা নিয়মকানুন যে সবাই মানবেই, সেটা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। তাই ফের একটি অশান্তির আবহ তৈরি হতে পারে। রেজিস্ট্রার অবশ্য বলেন, “কেউ আদালতের নির্দেশ না মানলে সেটা তাঁর দায়িত্ব। তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় নেবে না।”

এ দিন কলকাতায় বণিকসভার এক অনুষ্ঠানের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী যাদবপুরে গণ্ডগোলের জন্য বহিরাগতদেরই দায়ী করেছেন। রাজ্যপাল বলেন, “ছাত্ররা পড়াশোনায় ফিরে যাক। বহিরাগতরাই সমস্যা তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রাজনীতি ঠিক নয়, এটা উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবেই থাক।” গত শনিবার মহামিছিলের পরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন আন্দোলনকারী ছাত্রদের প্রতিনিধিরা। সে দিনও তিনি ক্লাসে ফেরার পরামর্শ দিয়েছিলেন পড়ুয়াদের। বস্তুত আন্দোলনকারীদের ক্লাস বয়কটের ডাকের মধ্যেও বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি ক্লাস অবশ্য হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর এমেরিটাস সুকান্ত চৌধুরী নিজের অভিজ্ঞতা তুলে জানিয়েছেন, ক্লাস করতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের কেউ কিন্তু বাধা দিচ্ছে না।

যে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলন, সরকার যে সেই অভিজিৎবাবুর পাশেই, তা এ দিন ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সার্চ কমিটি সুপারিশ পাঠিয়েছে রাজ্যপালের কাছে। রাজ্যপাল জানিয়েছেন, সুপারিশের একদম গোড়ার নামটাই অভিজিৎবাবুর। তাঁকে কী ভাবে বাদ দেওয়া যায়? কয়েক জন ছাত্র চাইলেই তো সব হয়ে যায় না!” তবে একই সঙ্গে তিনি যে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী, সে বার্তাও দিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “ছাত্রছাত্রীরা চাইলে আমি সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারি, ছাত্রেরা তো সব সময়ই আমার প্রিয় পাত্র।”

শ্লীলতাহানির তদন্ত রিপোর্ট দিলেন সুরঞ্জন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় গড়া সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট রাজ্যের শিক্ষা দফতরে জমা পড়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বৃহস্পতিবার জানান, সরকারি নির্দেশ মেনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। ২৮ অগস্ট শ্লীলতাহানির ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়েন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি গড়া হচ্ছে। তদন্ত করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষা দফতরে রিপোর্ট দিতে বলা হচ্ছে কমিটিকে। এ দিন বিকাশ ভবনে গিয়ে শিক্ষা দফতরে সেই রিপোর্টই জমা দেন সুরঞ্জনবাবু।

abhijit chakrabartry jadavpur university VC latest news online news latest news online
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy