স্বাগত: তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওকে অভ্যর্থনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার নবান্নে। নিজস্ব চিত্র
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধী জোট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে প্রথমেই পেলেন তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওকে।
সোমবার নবান্নে দুই মুখ্যমন্ত্রীর দু’ঘণ্টা বৈঠক হয়। পরে চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘বিজেপির উপর রাগ হলে কংগ্রেস এসে যাবে। তাতে কী লাভ হবে? কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়েরই প্রশাসন দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই বিকল্প হল মুক্তমনের নেতাদের নিয়ে ফেডেরাল ফ্রন্ট। আমরা সেটাই চাইছি।’’ একই সুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তব্য, ‘‘সব দলের একে অপরকে সম্মান করা উচিত। কিন্তু রাহুল গাঁধী আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। তাঁরা তাঁদের কথা বলতেই পারেন। আমরা আমাদের কথা বলব। ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।’’
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিকল্প বিরোধী জোট কী ভাবে কতটা কার্যকর হতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মমতার যতটা ‘ঘনিষ্ঠতা’, বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের সঙ্গে যে ততটা নয়, সেটা পরিষ্কার। দিন কয়েক আগে সনিয়ার ডাকা নৈশভোজে মমতা নিজে না গেলেও সংসদীয় নেতাদের পাঠিয়েছিলেন। সনিয়া ‘সামনে’ থাকলে কংগ্রেসকে নিয়ে বিরোধী জোট গড়ার সম্ভাবনা বাড়ত কি না, এ দিন চন্দ্রশেখর-মমতা আলোচনায় সেই প্রসঙ্গও ওঠে। উভয়েই মনে করেন, রাহুল কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পরে এখনই সেই পরিস্থিতি নেই। তা ছাড়া, সাধারণ ভাবে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে জোট গড়ার প্রশ্নে একাধিক রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির নিজস্ব আপত্তি রয়েছে বলেও দুই মুখ্যমন্ত্রী একমত।
আরও পড়ুন: ‘বিক্রি’ হয়ে বিপদ আসছে, ত্রস্ত কংগ্রেস
এই অবস্থায় কংগ্রেসকে বাদ রেখে বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলিকে একজোট করে ফেডেরাল ফ্রন্ট তৈরি করাই আপাতত মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে প্রাথমিক কৌশল স্থির হয়। এ বার অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন দল ও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলা হবে। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে রবিবার ফোনে কথা হয়েছে মমতার। অ-কংগ্রেসি বিরোধী দলগুলিকে একসঙ্গে নিয়ে কবে কী ভাবে বৈঠক করা যায়, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।
এ মাসের শেষে মমতা দিল্লি যেতে পারেন। তখন সংসদের অধিবেশন চলবে। তাই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিরোধী-বৈঠক না হলেও দিল্লিতে থাকাকালীন তিনি একাধিক বিরোধী নেতার সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুবাদে দেশের শীর্ষস্থানীয় সব নেতার সঙ্গেই মমতার কথা বলার সুযোগ রয়েছে। অনেকের সঙ্গে তাঁর সাধারণ ভাবেও কথা হয়। তাই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রয়োজনে সেই সব কথাবার্তার পরিসর আর একটু বাড়িয়ে নেওয়া যেতেই পারে।’’
এ দিন মমতার সঙ্গে বৈঠকের পরে চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, এটা একটা সূত্রপাত। ভবিষ্যতে আপনারা পুরো বিষয়টা জানতে পারবেন। খুব দ্রুত আমাদের বৃহত্তর মঞ্চ হবে। আমরা যে কর্মসূচি তৈরি করব তা বর্তমানে প্রথামাফিক যা দেখা যায়, তার থেকে আলাদা হবে। এটা হবে সাধারণ মানুষের কর্মসূচি। বিজেপি, কংগ্রেস, কেসিআর কোনও মডেলই হবে না।’’
মমতার বক্তব্য, ‘‘আমরা ফেডেরাল ফ্রন্ট চাই। রাজ্যগুলি মজবুত হলে দেশও হবে। একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সকলের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাড়াহুড়ো নেই যে আজই সব করতে হবে। রাজনীতিতে সময় লাগে। পরিস্থিতি কখনও কখনও এমন হয় যে, সকলের কাছে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ আসে। তাতে ভাল হয়। সব দলের সঙ্গে আমরা ভাল সম্পর্ক বজায় রাখি। এর থেকে ভাল আর কী হয়!’’
বিজেপি-বিরোধী দুই মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বৈঠককে অবশ্য ‘গুরুত্বহীন চমক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রে স্থিতিশীল সরকার রয়েছে বলে আঞ্চলিক দলগুলি বাজার গরম করতে চাইছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy