প্রথম ইনিংস যেখানে শেষ করেছিলেন, নবান্নে পা দিয়ে সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন সেখান থেকেই।
শুক্রবার টাউন হলে নতুন সরকারের প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকে পানীয় জল, রাস্তা তৈরি, দু’টাকার চাল, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী-র মতো প্রকল্পগুলি যে এ বারেও তাঁর সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে, সেই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রী ও আমলার বক্তব্য, ওই প্রকল্পগুলির সাফল্যের উপর ভরসা করেই বিধানসভা ভোটে গিয়েছিল শাসক দল। নির্বাচনী ফলাফল দেখিয়ে দিয়েছে, গ্রাম-শহরের মানুষ মমতাকে ফেরাননি। বরং দু’হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীও তাই দ্বিতীয় সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিতে ওই প্রকল্পগুলিকেই সামনের সারিতে রাখতে চেয়েছেন।
জেলায় জেলায় কাজের খতিয়ান নিতে তাঁর প্রথম সরকার সাড়ে চার বছরে ১২১টি প্রশাসনিক বৈঠক করেছিল। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হয়েছে টাউন হলে। এ দিন সেই টাউন হলেই ১২২তম (এই সরকারের প্রথম) বৈঠক করে মমতা জানিয়ে দেন, আগামী ১৪ জুন জঙ্গলমহল থেকে তিনি ফের জেলা সফর শুরু করছেন।
তবে শুধু ওই অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলিই নয়, এ বার সব দফতরকেই যে তাদের কাজ সমান গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে— বৈঠকে স্পষ্ট করে তা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজের ছোট-বড় বিচার না করে সরকারকে যে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই করতে হবে, তা বোঝাতে মমতা বলেন, ‘‘আমাদের সব কিছুই ভাবতে হয়। লঙ্কাচাষ থেকে ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি— সবই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’’
বৈঠকের শুরুতে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নির্বাচনের জন্য গত ন’মাস কোনও কাজ হয়নি। ২০১৬-র ২৯ জানুয়ারি শেষ এমন বৈঠক হয়েছিল। তাই যেখানে আমরা শেষ করেছিলাম, সেখান থেকেই এ বার শুরু করতে হবে।’’ এবং তিনিও যে নিজে কাজ করতে বদ্ধপরিকর, তা বোঝাতে মমতার ঘোষণা, ‘‘আগামী ১৪ জুন আমি জঙ্গলমহলে যাব। জঙ্গলমহল দিয়েই জেলা সফর শুরু হবে।’’ বছরের শুরুতে যে প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল তাঁর সরকার, তা ধরেই এ দিন নতুন করে কাজ শুরু করতে বলেন মমতা।
বৈঠকে মমতা তাঁর আধিকারিকদের জানান, গত আর্থিক বছরে (২০১৫-’১৬) রাজ্যের পরিকল্পনা খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। কিন্তু সেই বরাদ্দকে ছাপিয়ে আরও ৪০০০ কোটি টাকা বেশি, অর্থাৎ, ৫৩ হাজার ১০ কোটি টাকার কাজ করেছে সরকার। মমতার দাবি, গত ২০ বছরে রাজ্যে এ ভাবে পরিকল্পনা খাতের বাজেট বরাদ্দ ছাপিয়ে কখনও কাজ হয়নি। অনেক রাজ্যেই পরিকল্পনা খাতে যা বরাদ্দ ধরা হয়, তা খরচ হয় না। এখানে বরাদ্দের থেকে বেশি খরচ হয়েছে। তাই ‘গ্রোথ রেট’-ও এখানে অনেক বেশি। অর্থ দফতরের হিসেব বলছে, ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে রাজ্যে পরিকল্পনা খাতে ৩৯ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বাজেট ছিল। ২০১৫-’১৬-তে তার থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি কাজ হয়েছে।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নতুন সরকারের নতুন করে কাজ শুরু হল। আগের সরকারের ‘পারফরম্যান্স রিভিউ’ করে ফের উন্নয়নের কাজ আমরা শুরু করব। ভোটের জন্য মাঝপথে বেশ কিছু কাজ আটকে ছিল। সেগুলি আবার শুরু করতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ২০১১ সালে পরিকল্পনা খাতে রাজ্য সরকার যা খরচ করেছিল, এই ক’বছরে তার থেকে চার গুণ বেশি খরচ হয়েছে। ২০১১-’১২ সালে খরচ হয়েছিল ১৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে ৫৩ হাজার কোটির বেশি অর্থ খরচ হয়েছে।
মমতা বলেন, ‘‘আজ ১০০ দিনের কাজে বাংলাকে ‘মডেল’ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাজ থামছে না। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা ১০০ শতাংশ ঘরে আলো পৌঁছে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy