সাংবাদিক বৈঠকে কপিল সিব্বল। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
সারদা সংক্রান্ত একটি মামলার পরে এ বার পুরভোট নিয়েও রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করতে দেখা গেল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলকে। সঙ্গে রয়েছেন সলমন খুরশিদও।
সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দূরত্ব কমে খানিকটা সখ্যের আবহ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিব্বল ও খুরশিদ যে ভাবে মমতার হয়ে মামলা লড়তে এগিয়ে এলেন, তার মধ্যে কংগ্রেসের তরফে একটি রাজনৈতিক বার্তা প্রচ্ছন্ন রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগের বারও দলীয় হাইকম্যান্ড কপিলকে মামলা লড়ার অনুমতি দিয়েছিল। এ বারও তার অন্যথা হয়নি বলে কপিল নিজেই জানিয়েছেন এ দিন। বরং সে বার সারদার মতো বিতর্কিত বিষয় জড়িয়ে থাকায় রাজ্য কংগ্রেস নেতারা বেশ খানিকটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এ বার তাঁদের সুরও অপেক্ষাকৃত নরম। রাজনৈতিক অঙ্কের দিকটি তাতে আরও প্রকট হচ্ছে বলেই পর্যবেক্ষকদের মত।
সেই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, মমতাও কৌশলগত ভাবে সব রাস্তাই খোলা রাখতে চাইছেন। এক দিকে সীতারাম ইয়েচুরি সিপিএমের দায়িত্ব নেওয়ার পরে কংগ্রেস-বাম কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা এবং অন্য দিকে মোদীর সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পর্কের বরফ কিছুটা গলার জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে কংগ্রেস যখন সহযোগিতার হাত বাড়াতে চেয়েছে, তিনি সেটাও অগ্রাহ্য করেননি।
সারদা মামলায় সিবিআই তদন্ত যাতে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে হয়, সেই আর্জি জানিয়ে এর আগে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। সে বার কপিলের অংশগ্রহণে অসন্তুষ্ট প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, এর পর পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের কোনও কর্মসূচিতে কপিলকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের সেই অসন্তোষ আঁচ করে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফেও তখন সাংবাদিক বৈঠক করে বলা হয়, মামলাটি হাতে নেওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাকর্মীদের ভাবাবেগের কথা বিবেচনা করা উচিত ছিল কপিলের।
কিন্তু সাত পুরসভায় ভোট নিয়ে টানাপড়েনের মামলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কপিল আজ বলেন, ‘‘হ্যাঁ, রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের ভাবাবেগ বিবেচনা করেছি তো! কিন্তু আজও আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়েই সওয়াল করেছি আদালতে। তৃণমূল বা কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এই সব মামলা হাতে না নেওয়ার ব্যাপারে তাঁকে কি সনিয়া-রাহুল বা হাইকম্যান্ডের তরফ থেকে সরাসরি কোনও বার্তা দেওয়া হয়েছিল? জবাবে কপিল বলেন, ‘‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’’ তবে ঘনিষ্ঠ শিবিরে তিনি এও জানিয়েছেন, সনিয়া-রাহুল তথা হাইকম্যান্ডের তরফে তাঁকে মমতা সরকারের হয়ে মামলা লড়তে কেউ নিষেধ করেননি।
বিশেষ উচ্চবাচ্য করছেন না প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘কপিল সিব্বল পেশাদার। তাঁর পেশার বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়।’’ এ নিয়ে হাইকমান্ডের কাছে অনুযোগ জানানোর পরিকল্পনাও তাঁদের নেই বলেই জানা গিয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, সংসদীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা ও সমন্বয়ের একটা আশা কংগ্রেসে এখনও রয়েছে। সম্প্রতি সংসদে কিছু বিল পাশ করার ক্ষেত্রে বা সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের গতি শ্লথ হওয়ার প্রসঙ্গে মমতা-মোদী সখ্যের একটা ছবি উঠে আসছে ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, সেই সখ্য কখনও রাজনৈতিক সমীকরণের চেহারা নিতে পারে না। কারণ, রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভাবে মমতা ও মোদী ভিন্ন মেরুতে রয়েছেন। বরং বিজেপির সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতার বার্তা গেলে মমতার রাজনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। তুলনায় কংগ্রেস অনেক বেশি সহজাত শরিক।
কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, জোট করা বা না করার ব্যাপারে রাহুল গাঁধী ইদানীং রাজ্য নেতাদের মতকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু সমান্তরাল ভাবে এও ঠিক, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের এখন বন্ধু তথা শরিকের অভাব। তাই সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসই আগ বাড়িয়ে সমন্বয় রাখতে চাইছে। খনি ও কয়লা বিলে তৃণমূল কেন্দ্রকে সমর্থন করেছে বলে, তাদের সঙ্গে কংগ্রেস কথা বলবে না, এই অবস্থান নেওয়ার বিলাসিতা এখন কংগ্রেস দেখাতে পারে না। তাই সংসদের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়ে সনিয়া-রাহুল এখন ডেকে ডেকে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে কথা বলেন। আইনি প্রশ্নে কপিল সিব্বল যে ভাবে তৃণমূল সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সেই বিষয়টিকেও এই আয়নায় দেখা যেতে পারে বলেই জল্পনা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy