Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
prakash karat

CPM Conference: ‘তরুণদের দল’ হচ্ছে কই, প্রশ্ন তুলে রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে আক্ষেপ প্রকাশ কারাটের

সিপিএমের ২৬তম রাজ্য সম্মেলনের শুরুতে বক্তৃতা করার কথা ছিল দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাটেরই।

দ্বিতীয় দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে প্রকাশ কারাট

দ্বিতীয় দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে প্রকাশ কারাট নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২২ ০৭:৩৩
Share: Save:

বয়স-নীতি চালু করে পুরনো নেতাদের অবসর নিতে বলা হচ্ছে। তার জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে নতুন মুখ। কিন্তু এই ধরা-বাঁধা প্রক্রিয়ার বাইরে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তরুণ প্রজন্ম বাংলায় বামপন্থী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত হতে কেন চাইছে না, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন স্বয়ং প্রকাশ কারাট। সেই সঙ্গেই মনে করিয়ে দিলেন, রাজ্যে ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’ হাতছাড়া হলে তার দায় নিতে হবে দলকেই।

সিপিএমের ২৬তম রাজ্য সম্মেলনের শুরুতে বক্তৃতা করার কথা ছিল দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাটেরই। কিন্তু উড়ান বিভ্রাটে তিনি সময়মতো কলকাতা পৌঁছতে না পারায় মঙ্গলবার উদ্বোধনী-পর্বে বক্তা ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে, বুধবার কারাট এ রাজ্যে ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’-এর কাজের প্রসঙ্গ তোলেন। দলীয় সূত্রের খবর, অতিমারির সময়ে প্রবল ঝুঁকি নিয়ে রেড ভলান্টিয়ার্স বাহিনীর তরুণ-তরুণীরা যে কাজ করেছেন, তা প্রভূত প্রশংসার দাবি রাখে বলে মন্তব্য করেছেন কারাট। তাঁর মতে, কেরলেও অতিমারি পরিস্থিতিতে বাম ছাত্র-যুবরা বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কিন্তু তাঁদের পিছনে সে রাজ্যের বাম সরকার ছিল। বাংলায় পরিকাঠামোগত কোনও সহায়তা ছাড়াই ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’ কাজ করেছে। যে রাজ্যে দুর্যোগের সময়ে তরুণ প্রজন্ম এত ভাল কাজ করে, সেখানেই সংগঠনে তরুণ সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি এত কম থাকা বিস্ময় ও উদ্বেগের কারণ বলে কারাটের মত। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, বয়স-নীতির ফলে পুরনোদের সরে যেতে হচ্ছে, নতুনদের জন্য কিছু জায়গা হচ্ছে। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ‘তরুণদের দল’ হয়ে উঠছে না সিপিএম!

বস্তত, রাজ্য সম্মেলনে পেশ হওয়া রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্টেও তরুণ সদস্যদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম হওয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। দলের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ৩১ বছরের কমবয়সী সদস্যের সংখ্যা অন্তত ২০%, সেখানে ২০২১ সালের পুননর্বীকরণের পরে সেই সংখ্যা মাত্র ৮.৭০%। এই সূত্রেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ‘পার্টি সদস্যপদে ন্যূনপক্ষে ২৫% মহিলা এবং ২০% অনূর্ধ্ব ৩১ বছর— এই লক্ষ্যমাত্রা থেকে আমাদের রাজ্য অনেক দূরে রয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে যাঁরা অংশগ্রহণ করছেন, তাঁদের একাংশকে পার্টি সসদ্যপদে উন্নীত করা কেন সম্ভব হবে না’? একই সঙ্গে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মহিলা ও অনূর্ধ্ব ৩১ বছর, এদের পার্টি সদস্যপদে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব সম্পর্কে উপলব্ধির ঘাটতি রয়েছে। রাজ্য থেকে শুরু করে সর্ব স্তরের নেতৃত্ব এই দুর্বলতার ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না’।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবির জন্য জোটের সিদ্ধান্তকে দায়ী করা উচিত নয় বলেও এ দিন সম্মেলনে ব্যাখ্যা করেছেন কারাট। তিনি বলেছেন, দলের কৌশলগত লাইন মেনেই বাংলায় জোট হয়েছিল। কিন্তু এখানে তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি আর বিজেপির বিকল্প তৃণমূল— এই ধারণার বাইরে বামেদের তৃতীয় বিকল্পকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করা যায়নি। একই সুরে সম্মেলনের অবসরে ইয়েচুরিও প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘তৃতীয় বিকল্প হিসেবে আমাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য হয়নি মানুষের কাছে। তার ফায়দা তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে। হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনকে বামপন্থীরাই রুখতে পারে, আন্দোলনের মাধ্যমে এটা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’’

সম্মেলনে আলোচনার পর্ব এ দিন রাতেই শেষ হয়েছে। জবাবি ভাষণ ও নতুন রাজ্য কমিটি বেছে নেওয়া হবে আজ, বৃহস্পতিবার। তার পরে শেষ লগ্নে হবে রাজ্য সম্পাদক বাছাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prakash karat CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE