Advertisement
E-Paper

শোধ নিতে এ বার আইএসের দ্বারে খাগড়াগড়-চক্রীরা

এত দিন জানা ছিল, তারা আল কায়দার শাখা সংগঠন। গোয়েন্দারা সেই মতো সতর্ক ছিলেন। এ বার ইঙ্গিত মিলল, আল কায়দার জোর কমতে থাকায় তারা ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে! জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর এই নতুন সমীকরণ গোয়েন্দাদের সন্ত্রস্ত করে তুলেছে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৪

এত দিন জানা ছিল, তারা আল কায়দার শাখা সংগঠন। গোয়েন্দারা সেই মতো সতর্ক ছিলেন। এ বার ইঙ্গিত মিলল, আল কায়দার জোর কমতে থাকায় তারা ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে!

জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর এই নতুন সমীকরণ গোয়েন্দাদের সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-সূত্রে ফাঁস হওয়া জঙ্গি নেটওয়ার্কটি আইএসের ‘স্বীকৃতি’ পেতে চাইছে জেনে প্রমাদ গুনছে এনআইএ-ও। তাদের কাছে খবর আছে, খাগড়াগড়ের ধাক্কা সামলে পাল্টা জবাব দেওয়ার তাগিদে জেএমবি’র কিছু চাঁই ভারত-বাংলাদেশে নাশকতা ঘটাতে মরিয়া। এবং এই লক্ষ্যে তারা আইএসের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেছে!

মঙ্গলবারই এক মার্কিন দৈনিক খবর দিয়েছে, ভারতে হামলা চালিয়ে বিশ্বে অস্থিরতা ও তার পরিণতিতে ‘অন্তিম যুদ্ধ’ বাধানোর উদ্দেশ্যে এগোচ্ছে আইএস। এ হেন পটভূমিকায় জেএমবি-আইএস সংশ্রবের ইঙ্গিত তাৎপর্যপূর্ণ। ঘটনাপ্রবাহও সে দিকে আঙুল তুলছে। কী রকম? এনআইএ-সূত্রের খবর, গত ২৭ জুলাই রাতে ঢাকায় জেএমবি-র আট পাণ্ডা ধরা পড়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে খাগড়াগড়-মামলার অন্যতম অভিযুক্ত তালহা শেখ ওরফে পাখি। বাংলাদেশ পুলিশের দাবি: ধৃতদের কাছে বিস্তর জেহাদি বই, পুস্তিকা, লিফলেট, সিডি ও গোটা দশেক মোবাইল ফোন মিলেছে। এবং সে সব থেকে পরিষ্কার, তারা ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ: আইএসের দ্রুত উত্থান ও বীভৎস হিংসার ভিডিও ইন্টারনেটে দেখে বহু কট্টরপন্থী যুবক আকৃষ্ট হচ্ছে। ‘খিলাফৎ প্রতিষ্ঠা’র কথা শুনেও প্রভাবিত হচ্ছে অনেকে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি’র এক কর্তা জানিয়েছেন, আরব মুলুকে ঘাঁটি গেড়ে থাকা আল কায়দার যে সব নেতার নির্দেশ মোতাবেক জেএমবি বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল, তাদের অনেকেই রাতারাতি আইএসে নাম লিখিয়েছে। ‘‘ইরাকের মতো দেশে তামাম আল কায়দা সংগঠনটা কার্যত আইএসে পরিণত হয়েছে। সম্ভবত তাই জেএমবি আইএসের কাছে স্বীকৃতি পেতে চাইছে।’’— মন্তব্য তাঁর। এনআইএ-সূত্রের খবর: জেএমবি চাইছিল বাংলাদেশ, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত ও মায়ানমারের সমস্ত জঙ্গি গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় এনে একটাই জেহাদি সংগঠন গড়ে তুলতে। ‘‘সব জঙ্গি গোষ্ঠীকে মিলিয়ে পুরোভাগে একটি জেহাদি সংগঠনকে রাখার পরিকল্পনার প্রণেতা আইএস।’’— বলছেন এক এনআইএ-অফিসার। তাঁর দাবি, ‘‘খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃতদের জেরা করে ও কাগজ হাতড়ে ‘খিলাফৎ’ শব্দটাও বহু বার পেয়েছি, যার উপরে আইএস জোর দেয়।’’

প্রমাণ-পরিস্থিতি নয়া সমীকরণের দিকেই ইঙ্গিত করছে। খিলাফৎ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল কায়দার মতো ‘ধীরে’ চলার পক্ষপাতী নয় আইএস। তারা চায় তাৎক্ষণিক আঘাত, সার্বিক সংঘর্ষ। আইএসের এই মনোভাবের কথা মাথায় রেখেই খাগড়াগড়ে পিছু হটা জেএমবি পাল্টা আঘাত হানতে আইএসের শরণাপন্ন হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দাদের একাংশ। আইবি-সূত্রের খবর: খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে জেএমবি-র কিছু মাথা ঝুঁকি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সেখানকার জেলে হামলা চালিয়ে বন্দি দুই জঙ্গি-নেতা সইদুর রহমান ও জসিমউদ্দিন রহমানিকে ছাড়িয়ে আনাই তাদের মতলব ছিল বলে জেরায় জানিয়েছে ঢাকায় ধৃত জেএমবি পাণ্ডারা। এক আইবি–কর্তার কথায়, ‘‘ব্যাপারটা তাৎপর্যপূর্ণ। সন্দেহ, বড় কিছু ঘটানোর উদ্দেশ্যেই ওই দুই নেতাকে এখন জেএমবি’র দরকার।’’ কী ঘটাতে চাইছে ওরা, গোয়েন্দামহল সেই আঁচ পেতে উদগ্রীব।

Khagragarh ISIS leaders JMB Bardhaman blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy