Advertisement
১১ মে ২০২৪
ঝাড়খণ্ডে ধৃত সাদিক

জালে পাণ্ডা, তবু আতঙ্কেই খাগড়াগড়

খাগড়াগড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক বছর পূর্ণ হওয়ার মুখে অবশেষে ধরা পড়ল ওই ঘটনার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম তারিকুল ইসলাম ওরফে সাদিক ওরফে সুমন। রেহান শেখ নামেও সে পরিচিত।

সাদিক ওরফে তারিকুল ইসলাম। —নিজস্ব চিত্র।

সাদিক ওরফে তারিকুল ইসলাম। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাঁচি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

খাগড়াগড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক বছর পূর্ণ হওয়ার মুখে অবশেষে ধরা পড়ল ওই ঘটনার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম তারিকুল ইসলাম ওরফে সাদিক ওরফে সুমন। রেহান শেখ নামেও সে পরিচিত। পুলিশের দাবি, আদতে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা সাদিককে মঙ্গলবার বিকেলে রাঁচি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে, রামগড়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত বছর ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়ির দোতলার ঘরে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে দু’জন মারা যায়। জখম হয় আরও এক জন। ওই বিস্ফোরণের সূত্রেই পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর এক বিরাট জালের হদিস মেলে। তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র দাবি— জেএমবি-এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মজলিশ-ই-সুরা-র সদস্য এই সাদিক।

এনআইএ-র এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘জেএমবি-র সাংগঠনিক কাজে মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলায় বেশ কিছু দিন থেকেছে সাদিক।’’

ওই তদন্তকারী অফিসার জানান, বছর পাঁচেক আগে সাদিক বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকে। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার সাতগাছি গ্রামের এক তরুণীকে বিয়ে করে সে। সেই সূত্রে ভারতীয় হিসেবে সচিত্র পরিচয়পত্রও জোগাড় করেছিল সাদিক। প্রথমে এনআইএ-র গোয়েন্দারা সাদিককে ভুল করে ভারতীয়ই ভেবেছিলেন। যে কারণে এনআইএ-র ওয়ান্টেড-এর তালিকায় বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবককে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করা হয়। পরে এ বছর ২৩ জুলাই দেওয়া এই মামলার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে এনআইএ সাদিককে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি হিসেবেই উল্লেখ করে। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জেই খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত রেজাউল করিম ধরা পড়ে।

এনআইএ-র দাবি, জেএমবি-র যে নেতাদের ওপর ভারতে জঙ্গি সংগঠন তৈরি ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সাদিক ছিল তাদের প্রথম সারিতে। সংগঠনে সাজিদ ওরফে
শেখ রহমতুল্লার পরেই ছিল সাদিক। গত বছর ৮ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে সাজিদ ধরা পড়ার পর সাদিকের উপরেই সংগঠন চালানোর দায়িত্ব বর্তেছিল।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, ২০১১ থেকে সাদিক ঘন ঘন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করেছে।

ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, এনআইএ-র কাছ থেকে পাওয়া সূত্র ধরে রাজ্য পুলিশের সন্ত্রাসবাদ দমন শাখা (এটিএস) এ দিন সাদিককে গ্রেফতার করেছে। এনআইএ অবশ্য জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে তাদের যৌথ অভিযানেই সাদিক ওরফে সুমন ধরা পড়েছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের এডিজি এস এন প্রধান বলেন, ‘‘আমাদের এটিএস রামগড় থেকে সাদিককে গ্রেফতার করেছে। ওর মাথার দাম পাঁচ লক্ষ টাকা।’’ এনআইএ-র এক গোয়েন্দার কথায়, ‘‘সাদিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার পর আমাদের মনে হয়েছে, ওর মাথার দাম কমপক্ষে দশ লক্ষ টাকা হওয়া উচিত ছিল।’’ আজ, বুধবার সাদিককে রাঁচির আদালতে তোলা হবে। এনআইএ জানাচ্ছে, সাহেবগঞ্জ জেলার যে তরুণীকে সাদিক বিয়ে করেছিল, তিনি এখন অন্তঃসত্ত্বা। তরুণী ও তাঁর বাড়ির লোক পলাতক।

সাদিককে নিয়ে বর্ধমানের ওই বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২১। এর আগে, গত ১৮ জুন খাগড়াগড় কাণ্ডে শেষ বার কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই দিন হাওড়া স্টেশনের কাছ থেকে ধরা পড়েছিল মুর্শিদাবাদের নুরুল হক ওরফে নইম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tarikul islam khagragarh blast ranchi jmb nia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE