Advertisement
E-Paper

পুরুষ রুখতে ধুন্ধুমার রেল রোকো

মহিলা যাত্রীদের একাংশের অবরোধ-বিক্ষোভে মাতৃভূমি লোকালে পুরুষদের উঠতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মুখ থুবড়ে পড়ল প্রথম দিনেই। পুরুষ-মহিলা সংঘর্ষ এবং তার মোকাবিলায় পুলিশ লাঠি-গ্যাস চালানোয় সোমবার রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় খড়দহ স্টেশন এলাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৩
সংঘর্ষে জখম ট্রেনযাত্রীর পাশে মহিলা পুলিশ। সোমবার খড়দহ স্টেশনে। — নিজস্ব চিত্র

সংঘর্ষে জখম ট্রেনযাত্রীর পাশে মহিলা পুলিশ। সোমবার খড়দহ স্টেশনে। — নিজস্ব চিত্র

মহিলা যাত্রীদের একাংশের অবরোধ-বিক্ষোভে মাতৃভূমি লোকালে পুরুষদের উঠতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মুখ থুবড়ে পড়ল প্রথম দিনেই।

পুরুষ-মহিলা সংঘর্ষ এবং তার মোকাবিলায় পুলিশ লাঠি-গ্যাস চালানোয় সোমবার রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় খড়দহ স্টেশন এলাকা। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। বাতিল হয় ২০টি লোকাল। পুলিশ ও যাত্রী মিলিয়ে আহত হন ১২ জন। মহিলা-সহ ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। দিনের শেষে রেলের ঘোষণা, শিয়ালদহ ও হাওড়ায় যে-পাঁচ জোড়া মাতৃভূমি লোকাল চলে, সব ক’টিতেই পুরুষ যাত্রীদের উঠতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে।

সব লোকালেই শুধু মহিলাদের জন্য কামরা নির্দিষ্ট করা থাকে। অন্যান্য কামরাতেও তাঁদের উঠতে অবশ্য বাধা নেই। তবু মহিলাদের আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পুরুষ বাদ দিয়ে শুধু তাঁদের জন্য মাতৃভূমি নামে কিছু ট্রেন বরাদ্দ করা হয়েছিল। তাতে কিছু মহিলা স্বস্তি পেলেও তাঁদেরই একাংশ কিন্তু ভুগছিলেন নিরাপত্তার অভাবে। তাঁরা চাইছিলেন, ট্রেনযাত্রায় পুরুষেরাও তাঁদের সঙ্গী হোন। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, শুরু থেকেই মাতৃভূমি লোকালের অধিকাংশ কামরা ফাঁকা থাকছিল। অথচ অন্য ট্রেনে বাদুড়ঝোলা ভিড়ে নাজেহাল হচ্ছিলেন যাত্রীরা। তাই পুরুষ তো বটেই, মহিলাদেরও অনেকে চাইছিলেন, মাতৃভূমিতে পুরুষদের ওঠার অনুমতি দেওয়া হোক। তাঁদের বক্তব্য, এতে লাভ হবে দু’দিক থেকে। ১) ফাঁকা ট্রেন চালাতে হবে না। ২) সকালের ব্যস্ত সময়ের ভিড় কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যাবে।


বিক্ষোভ সামাল দিতে মরিয়া পুলিশ। সোমবার খড়দহে সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

মহিলা-পুরুষ, দু’পক্ষের আবেদন পেয়ে রেল-কর্তৃপক্ষ মাতৃভূমির কয়েকটি কামরায় পুরুষদেরও ওঠার অনুমতি দেন। ঠিক হয়, ১২ কামরার মাতৃভূমির দু’টি ভেন্ডার ছাড়াও মাঝখানের ছ’টি কামরায় মহিলাদের সঙ্গে পুরুষ যাত্রীরাও উঠতে পারবেন। ১০ কামরার ট্রেনের ক্ষেত্রে পুরুষেরা উঠবেন মাঝখানের চারটি কামরা এবং দু’টি ভেন্ডারে। ন’কামরার ট্রেনে ভেন্ডার এবং তিনটি কামরায় উঠতে পারবেন তাঁরা। রেল রবিবারেই ঘোষণা করেছিল, ‘লেডিজ স্পেশ্যাল’ নামে চিহ্নিত মাতৃভূমিতে সোমবার থেকে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।

কিন্তু এ দিন ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পরেই বিপত্তি বাধে। রানাঘাট-শিয়ালদহ মাতৃভূমি লোকালে পুরুষদের ওঠার অনুমতি দেওয়া হল কেন, সেই প্রশ্ন তুলে খড়দহ স্টেশনে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দেন মহিলা যাত্রীদের একাংশ। ট্রেনটি সকাল ৯টা নাগাদ খড়দহে পৌঁছতেই মহিলাদের অনেকে ট্রেন থেকে নেমে লাইনে বসে পড়েন। তার আগেই অবশ্য কিছু মহিলা যাত্রী সেখানকার স্টেশনমাস্টারের ঘরে ঢুকে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।

অফিসের সময়ে এই অবরোধে আটকে পড়ে যাবতীয় ট্রেন। এই নিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে প্রথমে পুরুষদের বাদানুবাদ হয়। তা থেকে শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। পুলিশ অবরোধ তুলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে ইটবৃষ্টির মুখে পড়ে।

অথচ রেলের নতুন নিয়ম অনুযায়ী রানাঘাট থেকে মহিলাদের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের নিয়েই ছেড়েছিল মাতৃভূমি লোকাল। তার পরে ট্রেনটি প্রায় ৫৫ কিলোমিটার চলেছে নির্বিঘ্নেই। প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ পথ পার হয়ে আসার পরে খড়দহে হঠাৎ বিক্ষোভ কেন?

জবাব দেওয়ার বদলে অবরোধকারী মহিলারা তখন রণং দেহি মূর্তি ধরে পুরুষদের সঙ্গে বচসা, হাতাহাতি চালিয়ে যাচ্ছেন সমানে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানান, পুলিশের একটি পদক্ষেপই পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলে। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পুলিশ বলে, রেল আপাতত পুরুষদের ওই ট্রেনে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করছে না। শুনেই কিছু বিক্ষোভকারিণী কেবিনে উঠে রেলের মাইক্রোফোন ছিনিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘রেল জানিয়েছে, মাতৃভূমি মহিলাদেরই থাকছে।’

এই ঘোষণায় ঘি পড়ে আগুনে। যে-সব পুরুষ যাত্রী হাঙ্গামায় যোগ দেননি, তাঁদেরও অনেকে রে-রে করে ছুটে যান। ট্রেন না-পেয়ে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থেকে তাঁরা এমনিতেই তেতে ছিলেন। মারমুখী হয়ে উঠে তাঁরাও মহিলাদের উপরে চড়াও হন। পুলিশ কম থাকায় প্রথমে পুরুষদের ঠেকানো যাচ্ছিল না। শুরু হয়ে যায় ইটবৃষ্টি। অবস্থা আয়ত্তে আনতে আসে জেলা পুলিশের র‌্যাফ ও কমব্যাট বাহিনী। তারা প্রথমে লাঠি চালায়। তার পরে ৭-৮ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। রেলের ওই সিদ্ধান্ত ভাল না মন্দ, সেটা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু এ দিন বেশির ভাগ যাত্রী ছিলেন অবরোধের বিপক্ষে। ট্রেন না-পেয়ে ক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভকারীদের প্রায় ঘিরে ফেলে আক্রমণ হানতে উদ্যত হয়। র‌্যাফ লাঠি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এই ঘটনার জেরে শিয়ালদহ মেন লাইনে আপ ও ডাউন ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শহরতলির সব স্টেশনেই থমকে যায় ট্রেন। আটকে পড়েন যাত্রীরা। ফলে নিত্যযাত্রীদের বেশির ভাগই এ দিন আর অফিস, অন্যান্য কর্মস্থল বা স্কুল-কলেজে যেতে পারেননি। সোনা সরকার নামে নদিয়ার আড়ংঘাটার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কাঠমিস্ত্রির কাজ করে পেট চালাই। দিনটা অবরোধেই চলে গেল। আজ আর রোজগারটা হল না।’’ নৈহাটির শ্যামল সরকারের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের একটা দিন নষ্ট করার অধিকার বিক্ষোভকারীদের দিল কে?’’

আবার নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভকারীদের পক্ষও নিয়েছেন অনেকে। যেমন খড়দহের পাতুলিয়ার বাসিন্দা অন্বেষা রায় বলেন, ‘‘ট্রেনে নিরাপত্তার হাল খুব খারাপ। লেডিজ স্পেশ্যালেও যদি সকলেই উঠতে শুরু করে দেয়, তা হলে তো মহিলা যাত্রীদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।’’

পুলিশের বক্তব্য, মাতৃভূমিতে পুরুষদেরও উঠতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা এ দিন সকাল থেকে ঘোষণা করা হচ্ছিল সব স্টেশনেই। তার পরেও আচমকা অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতেই তাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। পুলি‌শি সূত্রের খবর, বছরখানেক আগে টিটাগড়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার রেল অবরোধে বেশ কিছু মহিলা সামিল হয়েছিলেন। তাঁদের কয়েক জনকে এ দিনের অবরোধেও দেখা গিয়েছে। এই নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘এ দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ট্রেনে পুরুষদের উঠতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হচ্ছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত শীঘ্রই জানানো হবে।’’

khardah battlefield khardah station ladies special khardah ladies special matribhumi local train male entry male entry ladies special
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy