Advertisement
E-Paper

মশার বংশ ধ্বংসে নামুন কাউন্সিলর

রাজনৈতিক সদিচ্ছা জোরদার হলে ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ হতো, মনে করছেন শহরের এক দল চিকিৎসক। কিন্তু এই সদিচ্ছার অভাব রয়েছে, এবং এর ফলে সমস্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন পুর স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তা।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২২

রাজনৈতিক সদিচ্ছা জোরদার হলে ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ হতো, মনে করছেন শহরের এক দল চিকিৎসক। কিন্তু এই সদিচ্ছার অভাব রয়েছে, এবং এর ফলে সমস্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন পুর স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তা। তাঁদের মতে, এলাকার কাউন্সিলররা নিজেদের ওয়ার্ডের অভিভাবক। বাসিন্দাদের জল সরবরাহ থেকে জঞ্জাল সরানো, সবই দেখাশোনা করেন তাঁরা। ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস এজিপ্টাইয়ের বংশ নির্মূল করতে কাউন্সিলররা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পাড়ায় পাড়ায় নেমে পড়লে, কাজটা অনেকটাই সহজ হতে পারে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা স্বীকার করছেন, স্বাস্থ্য কর্মীরা যে কাজ করেন, তা কেবল ডিউটির খাতিরে। কিন্তু কাউন্সিলর উদ্যোগী হলে তা স্বতস্ফুর্ত ভাবে হতে পারে।

বাস্তব কী বলছে? পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, উদ্যোগ তো দূরের কথা, উল্টে এমন অভিযোগও পুরসভাকে শুনতে হয়েছে যে, জল জমিয়ে রাখার দায়ে কাউকে নোটিস দেওয়া হলে কাউন্সিলরই সেই নোটিস তুলে নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছেন। আবার কোথাও নোটিস লাগাতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে পুরকর্মীদের, বকাবকিও করা হচ্ছে। এসএসকেএম হাসপাতালের এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিরা যে ভাবে বাসিন্দাদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন, তা কোনও সরকারি কর্মীর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে জনপ্রতিধিদের ভূমিকা গুরুত্বপর্ণ। দুঃখের বিষয়, সেই উদ্যোগের অভাব থেকেই যাচ্ছে।

একই সঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব সংগঠনকেও ওই কাজে নামাতে সরকার উদ্যোগী হোক বলে মনে করছেন পুর আমলাদের একাংশ। তাঁদের কথায়, বর্তমান সরকারের আর্থিক সহায়তায় অনেক ক্লাব ‘পুষ্ট’ হয়েছে। কলকাতার অনেক বিধায়ক, কাউন্সিলর নিজের এলাকার ক্লাবকে সেই আর্থিক সহায়তা পাইয়ে দিতে তদারকি করেছেন। ক্লাবের সদস্যদের পাড়ায় পাড়ায় ডেঙ্গি সচতেনতার কাজে লাগালে অনেক উপকার হবে বলে ধারণা পতঙ্গবিদদেরও।

এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শহরের জঞ্জাল অপসারণের কাজও। বিশ্বের অন্যতম ডেঙ্গি বিশেষজ্ঞ ডেন জে গাবলার কলকাতায় এসে বলেও গিয়েছেন ‘জঞ্জাল অপসারণের সঙ্গে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ সরাসরি যুক্ত’। তা উল্লেখ করে পুরসভার পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানান, ডেঙ্গিবাহী মশা এডিস এজিপ্টাই ছোট্ট প্লাস্টিকের কাপের মধ্যেই জন্মাতে পারে। শহরের জঞ্জালে যা ভুরিভুরি দেখা যায়। তাই জঞ্জাল থেকে ডেঙ্গির মশার উপদ্রব বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। যা দ্রুত সাফাইয়ে জনপ্রতিনিধিরা প্রধান ভূমিকা নিতে পারেন।

কলকাতা পুরসভায় ১৪৪ জন কাউন্সিলর। এখন ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ায় উত্তর থেকে দক্ষিণে আতঙ্ক বাড়ছে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে বছরের শুরু থেকেই কাউন্সিলরদের সচেতনতার কাজে বার বার ডাকা হয়েছে, চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই মশা বিষয়ক সেমিনারে, বৈঠকে যোগ দেননি। অথচ ডেঙ্গিবাহী মশার প্রকোপ বাড়তেই গেল গেল রব তুলছেন অনেক কাউন্সিলর। কেউ বলছেন, তাঁর এলাকায় ডেঙ্গি বাড়ছে, কেউ বলছেন মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। সেই অভিযোগ কতটা সত্য, কতটা ভিত্তিহীন সেই তর্কে যেতে নারাজ পুর প্রশাসন। এ বার বাধ্যতামূলক ভাবে কাউন্সিলরদের ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে চায় পুর স্বাস্থ্য দফতর। পয়লা নভেম্বর থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে কী কাজ হচ্ছে, কোথায় জল জমছে, কোথায় মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে তার নথি তৈরি করে কাউন্সিলরকে পাঠানো শুরু হবে। যাতে কাউন্সিলর তাঁর এলাকায় হাল হকিকত জানতে পারেন। তাতে সই করতে হবে কাউন্সিলরকে। প্রতিদিন ওই নথি পাঠানো হবে পুরভবনে স্বাস্থ্য দফতরে।

KMC Dengue Councillors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy