রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত ফের খারিজ হল কলকাতা হাইকোর্টে। স্বাধীনতা পরবর্তী আন্দোলনের রাজনৈতিক বন্দিদেরও দিতে হবে পেনশন। রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট জানাল আদালত।
এ রাজ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে যাঁরা ছ’মাস বা তার বেশি জেল খেটেছেন, তাঁদের জন্য ১৯৮৮ সালে পেনশন চালু করেছিল প্রাক্তন বামফ্রন্ট সরকার। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৩ সালে সেই পেনশন বন্ধ করে দেয়। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, সেই পেনশন ফের চালু করতে হবে।
এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা দায়ের করবে কি না, এ দিন রাত পর্যন্ত সেই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। ওই দফতরই রাজনৈতিক বন্দিদের পেনশনের বিষয়টি দেখে। দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি এখনও মেলেনি। তা পাওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার বিষয়ে।
হাইকোর্টের নির্দেশ জেনে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সন্তোষ রানা জানান, যাঁরা বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলেন, তাঁদের নৈতিক জয় হয়েছে। তিনি জানান, কমবেশি দেড় হাজার মানুষ মাথাপিছু সাড়ে তিন হাজার টাকা পেনশন পেতেন। রাজ্যের কোষাগার থেকে এ জন্য খরচ হত পাঁচ কোটি টাকা।
পেনশনপ্রাপকদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ২০০৪ সালে ওই পেনশন সময় মতো না মেলায় বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত সন্তোষবাবু প্রধান বিচারপতির আদালতের দ্বারস্থ হন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি অশোক মাথুরের ডিভিশন বেঞ্চ সেই সময় নির্দেশ দেয়, রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য ১৯৮৮ সালে এ রাজ্যের মন্ত্রিসভা যে পেনশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তা নিয়মিত ভাবে দিতে হবে।
বিকাশবাবু আরও জানান, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়, কেবল মাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্যই ওই পেনশন চালু থাকবে। স্বাধীনতা পরবর্তী কালের কোনও রাজনৈতিক বন্দি ওই পেনশন পাবেন না।
ওই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরই বীরভূমের শিবপ্রসাদ রায়, জলপাইগুড়ির শ্রীকুমার সান্যাল ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কার্তিক মুর্মু কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁদের কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করে বলা হয়, রাজ্য সরকারে ওই সিদ্ধান্ত অমানবিক।
বিকাশবাবু আদালতে জানান, পেনশন বাতিলের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিকও। প্রাক্তন রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেনশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বর্তমান সরকার চোলাই মদ খেয়ে কারও মৃত্যু হলে তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। সরকারি কোষাগার থেকে বিভিন্ন ক্লাবকে টাকা দিচ্ছে। অথচ রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে যাঁরা প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের পেনশন দিতে চাইছে না।
রাজ্য সরকারের আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায় আদালতে জানান, নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে পুরনো সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে। তা অসাংবিধানিক নয়।
পেনশনকারীদের অন্য আইনজীবী দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় আদালতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দাখিল করে জানান, পেনশনপ্রাপকদের দাবি সঙ্গত ও বৈধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy