Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
শিশুপণ্য-৩

বাচ্চা না-পেলে জেলে পোরা হবে: বিচারপতি

কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শিশু পাচারের প্রেক্ষিতে এ বার পুলিশ-প্রশাসনকে তোপ দাগল কলকাতা হাইকোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০৮
Share: Save:

কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শিশু পাচারের প্রেক্ষিতে এ বার পুলিশ-প্রশাসনকে তোপ দাগল কলকাতা হাইকোর্ট।

মালদহের এক শিশুকন্যা পাচারের মামলায় বুধবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি অসীম রায়। তিনি বলেন, ‘‘যে-ভাবেই হোক, বাচ্চাটিকে উদ্ধার করতে হবে। কোথায়, কার কাছে বাচ্চা আছে, জানতে চাই না। যদি পাওয়া না-যায়, সকলকে ধরে জেলে পুরব।’’

মালদহের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হেফাজত থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় তিন মাসের ওই শিশুকন্যা। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজখবর করেও বাবা-মা তার সন্ধান পাননি। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি) বা শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে দরবার করেও ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি মলয়মরুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেন ওই দম্পতি।

বিচারপতি রায় এ দিন নির্দেশ দেন, শিশুটিকে খোঁজার দায়িত্ব সিআইডি-কে দেওয়া হচ্ছে। তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতে হবে মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে। তার পরেই তিনি জানিয়ে দেন, শিশুটিকে ফিরিয়ে আনতে না-পারলে সকলকে জেলে পোরা হবে। প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে হবে কাল, শুক্রবারের মধ্যে। ইংলিশবাজারের মহিলা থানার আইসি, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির প্রধান, চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটকে ওই দিন তলব করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।

মামলাটি এমন সময়ে হাইকোর্টে উঠেছে, যখন বাদুড়িয়া, বসিরহাট ছাড়াও কলকাতায় শিশু পাচার চক্রের কাজকর্ম নিয়ে তোলপাড় চলছে। ডায়মন্ড হারবারেও শিশু পাচারের অভিযোগ উঠেছে। হাইকোর্টের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল ও সৈয়দ নুরুল আরফিন জানান, তাঁদের মক্কেল, মালদহের জয়শ্রী চৌধুরী ২০১৩ সালে সুমন্ত সরকারকে বিয়ে করেন। পরের বছর তাঁদের একটি মেয়ে হয়। তার কিছু দিনের মধ্যেই গোলমাল শুরু হয় জয়শ্রী-সুমন্তের মধ্যে। মেয়েকে স্বামীর বাড়িতে রেখে বাপের বাড়িতে ফিরে যান জয়শ্রী। বধূ-নির্যাতনের মামলা করেন। মালদহের মহিলা থানার কর্মীরা তাঁর শিশুকন্যাকে জেলার চাইল্ড লাইন প্রকল্পের কর্তার হাতে তুলে দেন।

জয়শ্রীর আইনজীবীরা জানান, ইতিমধ্যে সুমন্তের সঙ্গে তাঁদের মক্কেলের বোঝাপড়া হয়ে যায়। চাইল্ড লাইন প্রকল্পের কর্তার কাছে গিয়ে সন্তান ফেরত চান ওই দম্পতি। অভিযোগ, প্রকল্প-কর্তা তাঁদের জানান, তিনি শিশুটিকে কলকাতার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি) বা শিশু কল্যাণ সমিতির হাতে তুলে দিয়েছেন। জয়শ্রীরা সিডব্লিউসি-তে খোঁজ গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের মেয়েকে সেখানে আদৌ পাঠানো হয়নি। সন্তানকে না-পেয়ে সেপ্টেম্বরে মামলা দায়ের করেন হাইকোর্টে।

আগের দিনের শুনানিতেই আদালতের মন্তব্য ছিল, ‘এটা গুরুতর অভিযোগ।’ ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, ৩০ নভেম্বর মালদহের চাইল্ড লাইন প্রকল্পের কর্তাকে এই আদালতে হাজির করাতে হবে। ওই কর্তাকে সে-দিন জানাতে হবে, শিশুকন্যাটি কোথায় আছে। এ দিন মামলাটির শুনানি হলেও শিশুটির হদিস দিতে পারেনি কেউ। তাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে সিআইডি-কে তদন্তের ভার দেন বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

child trafficking ordnance Kolkata High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE