Advertisement
E-Paper

গল্পেই মিলল ঠিকানা, ওরা ফিরল ঘরে

দীর্ঘ দিন ঘরছাড়া থাকায় ওদের ঠিক মতো মনেও ছিল না ঘর, পরিজনেদের কথা। আবছা কিছু কথা মনে রেখেই দিন কাটছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কেউ ‘চাঁদের পাহাড়’ খুঁজতে বেরিয়ে পথ হারিয়েছিল। কেউ আবার ‘দুষ্টু লোক’-এর খপ্পরে পড়ে ঘর ভুলেছিল। আবার কেউ বাবা-মায়ের উপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরার পথ খুঁজে পায়নি।

দীর্ঘ দিন ঘরছাড়া থাকায় ওদের ঠিক মতো মনেও ছিল না ঘর, পরিজনেদের কথা। আবছা কিছু কথা মনে রেখেই দিন কাটছিল। কেউ আবার নিজে থেকেই ভুলতে চেয়েছিল পরিচয়। তাই সব জেনেও চুপ করে থাকত। বারাসতের কিশলয় হোমে থাকা এমনই ২০টি শিশু আর বালককে বেছে নিয়েছিলেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের কর্তারা। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় প্রায় এক মাস ধরে ওই কুড়ি জনকে নিয়ে রীতিমত ক্যাম্প করে খুঁজে বার করা হল তাদের বাবা-মাকে।

আর মঙ্গলবার ছিল সেই দিন। এ দিন কিশলয় হোমের একটি ঘরে মুখোমুখি বসেছিল পথভোলা ২০টি শিশু, বালক। আর উল্টো দিকে বসেছিলেন তাঁদের বাবা, মা, পরিজনেরা। দু’তরফেই চোখের জল বাঁধ মানছিল না। মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘খুবই আবেগঘন মুহূর্ত। কত দিন পরে ২০ জন তার পরিবারকে ফিরে পেল। এটা আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। শেষ পর্যন্ত তাতে সফল হলাম।’’

সূত্রের খবর, বিভিন্ন ভাবে উদ্ধার হওয়া শিশু, বালক ও কিশোরেরা থাকে কিশলয় হোমে। তেমনই ভাবে এসেছিল ওই ২০ জনও। কেউ রয়েছে তিন মাস, কেউ আবার ৮ বছর। সকলেরই বয়স ৭ থেকে ১৬-র মধ্যে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির এক সদস্য জানান, ওই ২০ জনের মধ্যে ১৪ জন কোনও ভাবেই নিজেদের পরিচয় বলতে পারছিল না। বাকি ৬ জন তা-ও কিছুটা তথ্য দিতে পেরেছিল। তবে যারা কিছুই বলতে পারছিল না, তাদের কয়েক জনকে পরীক্ষা করে বোঝা গিয়েছিল কোনও ভাবে বাড়ির প্রতি তাদের রাগ জন্মেছে। তাই তারা ইচ্ছে করেই কিছু বলছে না।

যেমন, ১০ বছরের একটি বালক মায়ের বকুনি খেয়ে পালিয়ে এসেছিল। তাকে রোজ একটি গল্প শোনানো হত। সেটা শুনেই সে কাঁদত। তার পরে এক দিন নিজেই বাড়ি ফেরার জন্য কাঁদতে লাগল। বলল ঠিকানাও। আবার বিহারের বাসিন্দা ১৫ বছরের এক বালককে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেই হাতে আঁকা উল্কি দেখাত সে। যা দেখে বোঝা যেত তার নাম।
তাকে নিয়ে ক্যাম্পে খেলাধুলো করতে করতে এক দিন সে জানায়, তার গ্রামেও দোলনা আছে। একটা স্টেশন আছে। নাম ‘চৌধুরী হল্ট’। সেই সূত্র ধরেই উদ্ধার করা হয় ওই বালকের বাবা-মাকে।

আবার শ্যামনগর স্টেশন থেকে উদ্ধার হওয়া এক বালককে প্ল্যাটফর্মের জীবন আর বাড়ির মধ্যে পার্থক্যটা হাতেকলমে বোঝাতেই কাজ হয়েছিল। মালদহের এক বালক দোকানে ঘুরতে বেরিয়ে নিজের বাড়ির আশপাশের কয়েকটা দোকানের বিষয়ে কিছু কথা বলতে পেরেছিল। সেই সূত্র ধরে তার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন সংস্থার লোকজন।

শশীদেবী বলেন, ‘‘বাড়ি খুঁজে পেলেই তো হবে না। সেখানে গিয়ে দেখা হয়েছে পরিবেশ। বাড়ির লোক কী ভাবে নেবে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে, সে সব দিক খতিয়ে দেখেই পাঠানো হচ্ছে।’’

এ দিন ছিল ওই শিশুদের ঘরে ফেরার পালা। মালদহের ওই বালকের বাবা বললেন, ‘‘ছেলে বেঁচে আছে না মরে গিয়েছে, চার বছর ধরে তাই জানতাম না। ফিরে পাব ভাবিনি।’’ ঝাড়খণ্ডের একটি বালকের মায়ের কথায়, ‘‘যে দিন বাড়িতে পুলিশ গিয়ে জানাল ছেলেকে পাওয়া গিয়েছে, সে দিন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আজ নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস হল।’’

আর ছেলেরা তাদের বাবা-মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলল, ‘আর কোনও দিন বাড়ি থেকে যাব না।’

Child Family Home পরিবার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy