Advertisement
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কলকাতার কড়চা

ছবি সত্যিই কথা বলে। গত শতকের প্রথমার্ধে তোলা আর জি কর হাসপাতালের এই আলোকচিত্র অনায়াসে আমাদের নিয়ে যায় অন্য এক কলকাতায়। ডাক্তার রাধাগোবিন্দ কর বিলেত থেকে কলকাতায় ফিরলেন ১৮৮৬ সালে। সরকারি উদ্যোগের বাইরে চিকিৎসা শিক্ষাকেন্দ্রের ভাবনা ছিল তাঁর মনে।

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

শতবর্ষে আর জি কর

ছবি সত্যিই কথা বলে। গত শতকের প্রথমার্ধে তোলা আর জি কর হাসপাতালের এই আলোকচিত্র অনায়াসে আমাদের নিয়ে যায় অন্য এক কলকাতায়। ডাক্তার রাধাগোবিন্দ কর বিলেত থেকে কলকাতায় ফিরলেন ১৮৮৬ সালে। সরকারি উদ্যোগের বাইরে চিকিৎসা শিক্ষাকেন্দ্রের ভাবনা ছিল তাঁর মনে। সঙ্গে পেলেন ডাক্তার অক্ষয়কুমার দত্ত, বিপিনবিহারী মৈত্র-র মতো বিশিষ্টজনকে। তৈরি হল ‘দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল’। বৈঠকখানা রোডে। ১৮৮৯ সালে চিকিৎসক লালমাধব মুখোপাধ্যায়কে ‘প্রেসিডেন্ট’ করে বাংলা মাধ্যমে তিন বছরের পঠনপাঠনের আয়োজন হল। ১৮৯৫ সালে আপার সার্কুলার রোডে তৈরি হল ‘কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অব বেঙ্গল’। পরে মিলে গেল দুটি প্রতিষ্ঠান। ১৮৯৮ সালে মাত্র পঁচিশ হাজার টাকায় বারো বিঘে জমি কেনা হল। স্থায়ী ঠিকানা ১ বেলগাছিয়া রোড। সত্তর হাজার টাকা ব্যয়ে তিরিশটি শয্যা নিয়ে একতলা হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন প্রিন্স অ্যালবার্ট ভিক্টর। উদ্বোধন করেন জন উডবার্ন। ১৯০২-এ উদ্বোধন এবং সে বছরই দ্বিতল নির্মিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে পুরোপুরি মেডিক্যাল কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ১৯১৬-র জুলাই মাসে নাম হল বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ, উদ্বোধক ছিলেন লর্ড কারমাইকেল। ১৯১৮-’৪৮ এটি পরিচিত ছিল কারমাইকেলের নামেই। শতবর্ষ আগের এই প্রতিষ্ঠানই আজকের আর জি কর। ১৯৪৮ সালের ১২ মে নাম পাল্টে আর জি কর হয়। কালেদিনে শুধু নাম নয়, ছবি থেকেই মালুম, চেহারাও বদলেছে অনেক। এখন তারা ব্যস্ত শতবর্ষ উদ্‌যাপনে। শতবর্ষ কমিটির আহ্বায়ক শান্তনু সেন জানালেন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে ক্রমপর্যায় স্থির করা হয়েছে সেখানে আর জি কর পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ও ভারতে ষষ্ঠদশ স্থানে রয়েছে। ২৪ জুলাই আছে ইউরোলজি বিভাগের আন্তর্জাতিক সেমিনার। এক বছর ধরে নানা অনুষ্ঠানের কর্মসূচি আছে।

সুরের অনুভব

চিত্রশিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চাশের দশকে যখন শান্তিনিকেতনে নন্দলাল বসুর কাছে চিত্র চর্চার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, সেই সময় শান্তিদেব ঘোষের কাছেও যেতেন রবীন্দ্রসংগীত শিখতে। সে চর্চা প্রকাশ্যে এল এ বার। তাঁর কণ্ঠে ১০টি রবীন্দ্রসঙ্গীত ক্যাসেটবন্দি করেছে ভাবনা রেকর্ডস। ‘সুরের অনুভব’ অ্যালবামটি প্রকাশ করলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অ্যালবামের কভারে প্রতিটি গানের সঙ্গে রয়েছে শিল্পীর আঁকা ছবি। সঙ্গের ছবিটি ‘এ দিন আজি কোন ঘরে’ গানের। অন্য দিকে ভাবনা প্রকাশ করছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘গীতাঞ্জলি’র ১০৩টি কবিতার ৮টি সিডি-র অ্যালবাম। ইংরাজি অনুবাদ পাঠ করেছেন সুগত বসু ও কৃষ্ণা বসু।

শ্রদ্ধার্ঘ্য

‘সিটিজেন কেন’ (১৯৪১-এর সাদাকালো আমেরিকান ছবি) নিয়ে সত্যজিৎ লিখেছিলেন ‘ব্যবসায়িক গণ্ডির মধ্যে তোলা ছবি এবং এটিও ছবি তোলার প্রচলিত বিধির একটি বিরাট বিপ্লবাত্মক ব্যতিক্রম। অরসন ওয়েলস রচিত এই ছবির ভাষায় হলিউডের গতানুগতিক ছবির ভাষা তথা মার্কিন জনসাধারণের কিছু গতানুগতিক সংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ভাব অত্যন্ত স্পষ্ট।’ ছবিটি দেখানো হবে ১৪ জুলাই বিকেল ৫টায় নন্দন-এ। অরসন ওয়েলস-এর (১৯১৫-১৯৮৫, সঙ্গের ছবি) ‘জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে এই অ্যাকাডেমিক সেশন ১৫ জুলাই পর্যন্ত’, জানালেন নন্দন-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। প্রথম দিন দুপুর ৩টেয় তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র ‘ম্যাজিশিয়ান: দি অ্যাস্টোনিশিং লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্কস অব অরসন ওয়েলস’। শেষ দিনে তাঁর পরিচালিত ‘ম্যাকবেথ’ ও অভিনীত ‘দ্য থার্ড ম্যান’।

সম্মান

মাত্র তেইশ বছরেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ‘সেন্টিনারি প্রফেসর’ হন সমাজবিজ্ঞানী জয়ন্তকুমার রায়। আশির দশকে তাঁরই লেখায় বাংলাদেশের দারিদ্র দূরীকরণে ক্ষুদ্র ঋণ ও সেই সূত্রে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ভূমিকা স্পষ্ট হয়েছিল। শুকনো তত্ত্ব নয়, গবেষণাকে মিলিয়েছেন সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে। অমর্ত্য সেনের সহপাঠী জয়ন্তবাবু সম্প্রতি সত্যেন্দ্রনাথ বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, শিবনারায়ণ রায়, তপন রায়চৌধুরীর ধারাবাহিকতায় জাতীয় অধ্যাপক পদে সম্মানিত হলেন। পশ্চিমবঙ্গই জয়ন্তবাবুর মূল কর্মস্থল। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৪৯ সাল ভারত সরকার এই সম্মান দিয়ে আসছে।

কাহন

আড্ডা হয় না বহুকাল। মুখোমুখি বসার সময় কোথায়? কিন্তু পারস্পরিক ভাব বিনিময় ছাড়া কী ভাবে জমাট বাঁধবে বিভিন্ন শিল্প-ভাবনা? এই চিন্তা থেকেই ২০১৪-র জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল কাহন ডট কম। সমসাময়িক সংস্কৃতি নিয়ে শিল্পী ও শিল্পমনস্কদের চর্চার এক ওয়েব দুনিয়া। সম্প্রতি জ্ঞান মঞ্চে কাহনের এক বছর পূর্তিতে হল ‘কাহন কার্নিভাল’। মিলে গিয়েছিল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য— নাটকে, গানে, পেন্টিং-এ। অন্য দিকে ‘গীতা স্কাল্পচার স্টুডিও’ ১৫ জুলাই সন্ধে ছ’টায় নেহরু চিলড্রেন্‌স মিউজিয়ামে আয়োজন করেছে ‘বরষা ভরসা দিল’। সংস্থাটি বহু দিন শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে ছোটদের ছবি আঁকা ও ভাস্কর্য তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি নানা কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত। অনুষ্ঠানে রবি ঠাকুরের গান ও কবিতায় থাকবেন মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ও নমিতা চৌধুরী। ‘প্রেমের ভাষা’ নিয়ে আলোচনায় শঙ্কর ঘোষ, শঙ্করলাল ভট্টাচার্য, রেশমি মিত্র প্রমুখ।

সংস্কৃতিমনস্ক

সরকারি চাকরির পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ছিলেন পবিত্র অধিকারী। সবচেয়ে বড় অধ্যায়টি বেহালা বইমেলা। ২০০০ সাল থেকে তিনি যার সম্পাদক ছিলেন। পবিত্রবাবুর জন্ম ১৯৩৫-এ। জীবন শুরু করেছিলেন বাগজোলা উদ্বাস্তু শিবির বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে। সরিৎশেখর মজুমদারের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে সম্পাদনা করেন ব্যঙ্গ কবিতার সংকলন রঙ্গব্যঙ্গ কাব্য। অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে লিখেছিলেন বেহালা জনপদের ইতিবৃত্ত। সম্পাদনা করেছেন পত্রিকাও। সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন তিনি। বেহালা গার্লস হাইস্কুলে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাল বেহালা বইমেলা সম্মিলনী, দক্ষিণী সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র ও প্রগতি লেখক সংঘ।

স্মরণ

প্রয়াত কবি ও গদ্যশিল্পী সুভাষ ঘোষাল, যাঁর রচনাশৈলী আজও তাঁকে বিশিষ্ট করে রেখেছে বাঙালি পাঠকের কাছে, তাঁর জন্মদিন ১৭ জুলাই। সে দিন সন্ধে ৬টায় জীবনানন্দ সভাঘরে বার্ষিক স্মরণানুষ্ঠান: ‘স্মৃতির আলোয় সুভাষ ঘোষাল’। তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতাটি দেবেন গোপা দত্ত ভৌমিক: ‘জ্যোতির্ময়ী দেবী: স্মৃতি-বিস্মৃতির বিড়ম্বনা’। স্মৃতি-পুরস্কার রুশতী সেনের হাতে তুলে দেবেন নবনীতা দেব সেন। নিবেদনে সুভাষ ঘোষাল স্মৃতি রক্ষা কমিটি, ব্যবস্থাপনায় অহর্নিশ। ১৭ জুলাই বিজন ভট্টাচার্যেরও পূর্ণ হচ্ছে জন্মশতবর্ষ। অনুষ্ঠান-সূচনায় থাকছে তার উদ্‌যাপন। অন্য দিকে, আষাঢ়-সন্ধ্যা এখন কবিতাপ্রাণ বাঙালির কাছে বীতশোকের জন্য শোকের সমার্থক। সেই শোকপালনের আয়োজন করেছে ‘এবং মুশায়েরা’ ১৪ জুলাই বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ইউ এন ধর গ্যালারিতে, বিকেল ৫টায়। থাকবেন ভূমেন্দ্র গুহ, অমলকান্তি চক্রবর্তী, রণজিৎ দাশ প্রমুখ। ‘কবি বীতশোক ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন রবিন পাল।

নবারুণ

‘আমার স্বপ্নের দেশটার মধ্যে সাম্য থাকবে, তাই শুধু নয়, সেখানে মানুষ অপমানিত লাঞ্ছিত হবে না। মানুষ তার অধিকার নিয়ে সুস্থ সবলভাবে বেঁচে থাকবে।’— এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন নবারুণ ভট্টাচার্য। তিনি নেই, কিন্তু তাঁর ভিতরের সৃষ্টিশীল মানুষটা আজও বাঙালির নিত্য পাঠসঙ্গী। তাঁকে নিয়ে ছবি করেছেন কিউ, স্বাতন্ত্র্যে চিহ্নিত এই চলচ্চিত্রকার ছবিটির নাম দিয়েছেন: ‘নবারুণ’। দেখানো হবে ১৫ জুলাই সন্ধে সাড়ে ৬টায় ম্যাক্সমুলার ভবনে। উদ্যোগে গ্যেটে ইনস্টিটিউটের ডকু ফোরাম।

একই অঙ্গে

তিনি একই সঙ্গে দেবব্রত ‘জর্জ’ বিশ্বাস, আবার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বাংলা নাট্যমঞ্চের এক এবং অদ্বিতীয় দেবশঙ্কর হালদার। সান্ধ্য সম্মেলনে মঞ্চ কাঁপিয়ে যিনি বাড়ি ফিরে— ‘একটু ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত’ খেতে পছন্দ করেন। এই মুহূর্তে তাঁর ব্যস্ততা তুঙ্গে, হিউস্টনে অভিনয় করছেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘সওদাগরের নৌকা’ নাটকে। দেবশঙ্করের হাত ধরে এই বাংলা নাটক বাংলার আগেই মঞ্চস্থ হবে মার্কিন মুলুকে। দেবশঙ্কর বললেন, ‘অসম্ভব কাব্যিক নাটক। যেন গোটাটাই কবিতা।’ ১৯৮৬-তে তাঁর পুরোপুরি মঞ্চে আত্মসমর্পণ। দেখতে দেখতে একশো নাটক করে ফেললেন। এই মুহূর্তে অভিনয় করছেন ২৩টি নাটকে। ‘শের আফগানের টিনের তলোয়ার’ সাম্প্রতিকতম প্রযোজনা। নাট্যকার-পরিচালক সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘নাটকটা লিখেইছি দেবশঙ্করকে মনে করে।’ এ বছর পেয়েছেন সংগীত-নাটক অ্যাকাডেমি সম্মান। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই বয়সে এই সম্মান দুর্লভ বইকী!

অন্য ভাবনা

রেডিয়োতে গল্পদাদুর আসরে পার্থ ঘোষের কণ্ঠস্বর, বা প্রদীপ ঘোষের ‘কামাল পাশা’র স্মৃতি আজও উজ্জ্বল। বাচিক শিল্পকে যাঁরা জনগ্রাহী করেছেন, তাঁদের প্রথম সারিতে রয়েছেন পার্থ, গৌরী ও প্রদীপ ঘোষ। ওঁদের শ্রদ্ধা জানাতে চলেছে বাচিক শিল্পী সংস্থা। ১৩ জুলাই শিশির মঞ্চে এই তিন শিল্পীকে নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে আবৃত্তির নির্মাণ বিষয়ক আড্ডা, ‘শব্দাকাশে তিন তারা’। থাকবেন জগন্নাথ বসু, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত আচার্য, ইন্দ্রানী সেন, লোপামুদ্রা মিত্র প্রমুখ। অন্য দিকে, আগে-লেখা গানকে কবিতায় রূপ দিচ্ছেন, রবীন্দ্রসৃষ্টিতে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। শেষ পর্বে ‘সানাই’-এর কবিতাগুচ্ছে ‘এই উদাসী হাওয়া’র, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’, ‘তুমি কোন ভাঙনের পথে’— এমন সব গান থেকে তৈরি হল কবিতা। এই বিষয় নিয়েই ১৭ জুলাই রবীন্দ্রসদনে সন্ধে ৬ টায় ‘বৈতালিক’-এর নিবেদন আলেখ্য ‘অধরা মাধুরী’। থাকবেন ঊর্মিমালা বসু, দেবারতি সোম, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, বিশাখা মুখোপাধ্যায়, স্বপন সোম প্রমুখ।

প্রকাশক

রানাঘাট স্টেশনের দেয়ালপত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল৷ তার পরে, ‘সে আমার কী উত্তেজনা৷ দুপুর তিনটে নাগাদ একদিন চুপিচুপি স্টেশনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম৷ ফাঁকা স্টেশন, একজন লোক দেখি বিড়ি খেতে খেতে বোর্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়াল৷ বয়স বছর পঁয়ত্রিশ হবে৷ মনে হল সম্পাদকীয় পড়ছে— এর পর নিশ্চয় আমার কবিতাটি পড়বে... হঠাৎ শান্তিপুর লোকাল ঢুকল৷ লোকটি দৌড়ে উঠে পড়ল— আমি আমার প্রথম পাঠক হারালাম৷’ এক সাক্ষাৎকারে লিখেছেন জয় গোস্বামী৷ তার পরে কয়েকটি পত্রিকায় লেখা পাঠিয়েও ফিরে আসা৷ এ ভাবেই আত্মপ্রকাশের লড়াইটা শুরু৷ তার পরে বাংলা কবিতায় অনেক স্মরণীয় পংক্তিমালা দিয়ে গিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন জয় গোস্বামী৷ কিন্তু তার পরেও তিনি শুরুর সেই দিনগুলো মনে রেখেছেন৷ তাই যখন তরুণ কবিরা তাঁকে এসে কবিতা শোনান বা পড়তে দিয়ে যান তখন তার মধ্যে প্রকাশযোগ্যগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চান তিনি৷ তাই এ বার নিজেই প্রকাশক হলেন৷ তাঁর প্রকাশনায়, প্রসূন ভৌমিকের সাহায্যে ‘পুস্তিকামালা’ নামে একটি গ্রন্থমালার প্রথম বইটি প্রকাশিত হয়েছে, অভীক মজুমদারের ভিক্ষাপাত্র৷ জয় জানালেন, প্রতি মাসে একটি করে এমন কবিতার বই প্রকাশিত হবে৷ এ মাসে বেরোবে সৌরভ দে-র অতিনেত্র৷ জয়ের এই প্রকাশনার নাম নেই কোনও৷ কেবল বইয়ের প্রকাশতথ্য হিসেবে লেখা, ‘নামাঙ্কন ও প্রকাশন জয় গোস্বামী’৷ এ দিকে তাঁর কবিতাসংগ্রহ ৫ প্রকাশিত হল আনন্দ থেকে৷ ১৯৯০-এ প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম খণ্ডটি৷ তার পঁচিশ বছর পরে ২০০৬-২০১৪-র মধ্যে প্রকাশিত কবিতা ও কাব্যনাট্যের বইগুলি সংগৃহীত হয়েছে এই পঞ্চমে৷

গ্রন্থাগারিক

জন্ম থেকেই একটি পায়ে সমস্যা, দশম শ্রেণীর আগে পর্যন্ত বাড়িতেই পড়াশোনা করেছেন। তবু কৃতিত্বের সঙ্গেই ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা জীবন যুক্ত ছিলেন গবেষণা ও লেখালেখির সঙ্গে। ১৯১৫-র ১৯ জুলাই জন্ম বিক্রমপুরের দ্বিপাড়া গ্রামে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম এ পাশ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারবিজ্ঞান পরীক্ষায় প্রথম হন। ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে কর্মজীবন শুরু, ’৭৩-এ অবসর নেন সেন্ট্রাল রেফারেন্স লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক হিসেবে। পরে আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রন্থাগারে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। দূরের বই, সোনার আলপনা, সংস্কৃতি ও গ্রন্থাগার, সাহিত্যের কথা, ইত্যাদি তাঁর লেখা বই। তাঁর সম্পাদিত দুই শতকের বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশন আজও আকর গ্রন্থ। আনন্দবাজারে রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ (৪ খণ্ড) সম্পাদনা করেছেন। আনন্দমঠ নিয়ে তাঁর গবেষণা উল্লেখযোগ্য। পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার। ১৯ জুলাই বিকেল পাঁচটায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে তাঁর শতবর্ষ উদ্‌যাপিত হবে। কিশোরকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও চিত্রা দেব শতবার্ষিক স্মারক পুরস্কার পাবেন। তাঁকে নিয়ে বলবেন অলোক রায় ও বরুণকুমার মুখোপাধ্যায়। প্রকাশিত হবে অলোক রায়ের সম্পাদনায় সংকলনগ্রন্থ চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়/ শতবার্ষিক শ্রদ্ধার্ঘ্য। থাকছে ওঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ৬টি গল্প, ওঁকে নিয়ে আলোচনা, চিঠিপত্র, জীবন-গ্রন্থ-রচনাপঞ্জি, আলোকচিত্র। স্বপন বসু ও গৌতম নিয়োগী সম্পাদিত পুরনো বাংলা বই শীর্ষকে আর একটি স্মারকগ্রন্থও প্রস্তুতির পথে।

অন্য বিষয়গুলি:

brief news kolkatar karcha rg kar centinary rg kar ramananda bandyopadhyay orson wales nabarun bhattacharya joy goswami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy