Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

নিছক সংগীত নিয়ে বাংলা পত্রিকা, তা-ও কষ্টেসৃষ্টে সামান্য আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকা নয়, রীতিমতো আটত্রিশ বছর দুই মাস (১৩৩১-১৩৬৯ বঙ্গাব্দ) জীবৎকালে মহাযুদ্ধ দাঙ্গা দেশভাগ সব কাটিয়ে ৪৫৮টি সংখ্যা প্রকাশিত! শুধু তা-ই নয়, ‘সঙ্গীতবিজ্ঞান-প্রবেশিকা’ ভারতীয় সংগীতের চর্চায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল।

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

বাঙালির সংগীতচর্চার বিস্মৃত পর্ব

নিছক সংগীত নিয়ে বাংলা পত্রিকা, তা-ও কষ্টেসৃষ্টে সামান্য আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকা নয়, রীতিমতো আটত্রিশ বছর দুই মাস (১৩৩১-১৩৬৯ বঙ্গাব্দ) জীবৎকালে মহাযুদ্ধ দাঙ্গা দেশভাগ সব কাটিয়ে ৪৫৮টি সংখ্যা প্রকাশিত! শুধু তা-ই নয়, ‘সঙ্গীতবিজ্ঞান-প্রবেশিকা’ ভারতীয় সংগীতের চর্চায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। বহু সংগীতগুণী যুক্ত ছিলেন এতে (সঙ্গে অন্যতম সম্পাদক গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর ছবি)। সংগীতগবেষক সর্বানন্দ চৌধুরী তন্নিষ্ঠ আন্তরিকতায় বিস্মৃত এই পত্রিকার সব ক’টি সংখ্যা দেখে যে ইতিবৃত্ত তুলে এনেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। তাঁর সম্পাদনায় দে’জ থেকে খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত হবে পত্রিকাটির রচনাসম্ভার, প্রথম খণ্ডে ‘রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ’। রবীন্দ্রনাথ এই পত্রিকায় অঙ্গািঙ্গ। বিশেষত রবীন্দ্র-সমকালেই এই পত্রিকায় রবীন্দ্রসংগীত আলোচনার যে ধারা তৈরি হয়, তার মূল্যায়ন হয়নি। এখানে প্রকাশিত রবীন্দ্রগানের বহু স্বরলিপি আজও স্বরবিতান-এ ঠাঁই পায়নি। সর্বানন্দ এই বইয়ে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে দিয়েছেন, দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আরও নানা দিকে। বহু দুর্লভ প্রচ্ছদ ও চিত্রাবলি উদ্ধার করে প্রকাশ করেছেন তিনি, এও বড় প্রাপ্তি।

অন্য দিকে ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে এনেছেন প্রায়বিস্মৃত সংগীতশিল্পী রেবা মুহুরীর (১৯৩০-২০১১) কথা। অমিয়নাথ সান্যালের বড় মেয়ে রেবা স্বামীর চাকরিসূত্রে সারা দেশ ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে সংগীত চর্চা অব্যাহত রাখলেও পরিণত বয়সের আগে থিতু হতে পারেননি। সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ও ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর জন্য তাঁকে মনে রাখলেও তাঁর গান আমরা কতটুকু রাখতে পেরেছি? তাঁর অপ্রকাশিত শেষ রচনা বিঠ্‌ঠনবাঈ (দে’জ) ঋতপ্রভ-র সম্পাদনায় প্রকাশ পাচ্ছে। সঙ্গে আছে তাঁর জীবনকাহিনি, এবং একটি সিডিতে অপ্রকাশিত ক’টি গান। ২৭ জুলাই শিশির মঞ্চে সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় দে’জ আয়োজিত ‘বই আর গান’ অনুষ্ঠানে এই দুটি বই প্রকাশের সঙ্গে আছে উনিশ শতকের রেকর্ডের গান (সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়), তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের সরোদ ও মানসী মজুমদার ঋত্বিক ভট্টাচার্যের গান।

স্মরণ

বাংলার বিশিষ্ট কথাকারদের জন্মদিনে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি গত তিন বছর ধরে আয়োজন করে আসছে ‘গদ্যের গল্পসল্প’। ২৩ জুলাই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১১৮তম জন্মদিনে (সঙ্গের ছবি: হিমানীশ গোস্বামী) সেই পরম্পরায় আকাদেমি সভাঘরে বলবেন উজ্জ্বলকুমার মজুমদার: ‘তারাশঙ্করের সৃষ্টি দেশ ও কাল— কিছু মন্তব্য’। সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় অনুষ্ঠানের সূচনায় প্রকাশিত হবে জয় গোস্বামী সম্পাদিত বাংলা আকাদেমির মুখপত্র বাংলা বই। পুনঃপ্রকাশিত হবে তারাশঙ্করের আত্মকথন আমার সাহিত্য-জীবন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আকাদেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্র। সে দিন সন্ধ্যা ৬টায় জীবনানন্দ সভাঘরে কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর (১৯৪৫-২০০৫) স্মরণসন্ধ্যা, স্মারক বক্তৃতায় স্বপন চক্রবর্তী বলবেন ‘প্রতিবাদহীন অন্ধকারে কবিতার স্তব্ধতা, কবির প্রতিরোধ’ শিরোনামে। থাকছে কবির গদ্য ও কবিতাপাঠ। আয়োজনে বাসবী চক্রবর্তী, একালের রক্তকরবী ও উর্বী প্রকাশন।

সভ্যতার সংকট

আধিপত্য বনাম অধিকারের সংঘাত নতুন নয়। তবে একুশ শতকে আধিপত্যের অতিব্যাপ্তি ও সাধারণের অধিকারহরণ সভ্যতার যে সংকট ডেকে এনেছে তা সত্যি তুলনাহীন। আধিপত্য ও দখলদারি ঠেকানো, তথা বিপদ ও সংকটকে জনগণের স্বার্থে সুযোগে পরিণত করতে চাই শিক্ষা, মনে করেন কুড়ানকুলামে মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়ানো পরমাণুশক্তি-বিরোধী জনআন্দোলনের মুখ্য নেতা এস পি উদয়কুমার। সাংবাদিক ও গবেষক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা দেখিয়েছেন কর্পোরেটদের হাতে প্রাকৃতিক সম্পদের দখলদারি ও লুঠ। অকালপ্রয়াত বিজ্ঞানী অভী দত্ত মজুমদারের গড়া ফোরাম এগেনস্ট মনোপলিস্টিক অ্যাগ্রেসন-এর (ফামা) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৫ জুলাই বিকেল চারটেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী ভবনে উপরোক্ত দুই বক্তা দেবেন অভী দত্ত মজুমদার স্মারক বক্তৃতা।

প্রান্তজনের কথা

বাঙালির ইতিহাস চর্চার সূচনাপর্বে অপেশাদার ঐতিহাসিকদের ভূমিকা গত কয়েক দশকে গবেষকদের কাজের মধ্যে অনেকটাই উঠে এসেছে। এঁদের অনেকেরই পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে থাকা দুর্লভ রচনার পঞ্জি তৈরি করে সে কাজকে যথেষ্ট এগিয়ে দিয়েছেন অশোক উপাধ্যায়। মহিষাদল রাজ কলেজের ইতিহাস বিভাগ ও তমলুক ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে, আইসিএইচআর-এর সহযোগিতায় ২৫ জুলাই দুপুর দুটোয় ভারতীয় সংগ্রহশালার আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হল-এ এই অপেশাদার ইতিহাসচর্চার ধারা নিয়েই অনুষ্ঠানে থাকছে ‘তমোলুক পত্রিকা’র পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ সহ চারটি সংশ্লিষ্ট বইপ্রকাশ ও আলোচনা। থাকবেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী, হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামলী সুর, রতনলাল চক্রবর্তী, ভাস্কর চক্রবর্তী, যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী প্রমুখ। এ দিকে দু-দশক আগে শান্তিনিকেতনের কাছে মউলডাঙার মাটির ঘরে বরকা ও মঞ্জুশ্রী সরেন জনজাতির পাঁচটি শিশুকন্যাকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘বীণাপাণি এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ বা বীণাপাণি আশ্রম। বর্তমানে পড়ুয়া সত্তর জন। প্রকাশিত হয় বার্ষিক পত্রিকা ‘বাহা’ (ফুল)। এ বারে অষ্টম বর্ষে বাহার রবীন্দ্রসংখ্যায় লিখেছেন দীপেশ চক্রবর্তী, নিত্যপ্রিয় ঘোষ, আশীষ লাহিড়ী, স্বপন চক্রবর্তী, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ২৩ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় সংখ্যাটির প্রকাশ, কলেজ স্ট্রিট বই-চিত্রে আলোচনায় থাকবেন সৌরীন ভট্টাচার্য, গৌতম নিয়োগী ও সর্বানন্দ চৌধুরী।

উদ্‌যাপন

ঠিক ১২২ বছর আগে আমেরিকায় প্রথম পা রাখেন স্বামী বিবেকানন্দ। দিনটা ২৫ জুলাই। সেই উপলক্ষে আইসিসিআর এবং বাক্‌ ২৬ জুলাই আইসিসিআর-এ সন্ধে ছ’টায় আয়োজন করেছে একটি অনুষ্ঠান। অভিজিৎ পাল শোনাবেন স্বামীজির রচিত-সুরারোপিত গান, পাখোয়াজে চঞ্চল ভট্টাচার্য বাজাবেন তাঁর প্রিয় বোলবাণী। থাকবে গীতিআলেখ্য ‘বিলে নরেন বিবেকানন্দ’। অন্য দিকে ২৪ জুলাই রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের ৮৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস। মা সারদার শিষ্য স্বামী দয়ানন্দ নারী ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য ১৯৩২-এ শরৎ বোস রোডে শুরু করেছিলেন এই চিকিৎসাকেন্দ্র। শিশুমঙ্গল নামেই সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানটি আজ ৬০০ শয্যার হাসপাতাল। ২৪ জুলাই সন্ধে ছ’টায় প্রতিষ্ঠানে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ, রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের সহ-সম্পাদক স্বামী বলভদ্রানন্দ ও স্বামী সত্যদেবানন্দ মহারাজ। অনুষ্ঠানে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন রুদ্রায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও সঙ্গীতে স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত।

কৃষক ও কৃষি

যাওয়ার কথা ছিল না একেবারেই। ২০১২ সালে একষট্টি বছর বয়সে হঠাৎ বিদায় নেন কল্যাণকুমার সান্যাল, ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণদা, প্রিয় শিক্ষক এবং খুব কাছের মানুষ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন সাঁইত্রিশ বছর। লিখেছিলেন অনেক গবেষণাধর্মী বই ও প্রবন্ধ। তাঁর শেষ বই ‘রিথিংকিং ক্যাপিটালিস্ট ডেভেলপমেন্ট’ বহু-আলোচিত ও সমাদৃত। তাঁর স্মৃতিতে ২৩ জুলাই বিকেল ৩ টে’য় বিশ্ববিদ্যালয়ের বি টি রোড ক্যাম্পাসে অর্থনীতি বিভাগে আয়োজিত হচ্ছে প্রথম কল্যাণকুমার সান্যাল স্মারক বক্তৃতা। বক্তা সমাজবিজ্ঞানী, আইসিএসএসআর-এর ন্যাশনাল ফেলো ও ইনস্টিটিউট ফর সোশাল অ্যান্ড ইকনমিক চেঞ্জ-এর প্রাক্তন অধিকর্তা আর এস দেশপান্ডে। বক্তৃতার শিরোনাম: ফার্মার: স্টেট অ্যান্ড এগ্রিকালচার।

দুশো পেরিয়ে

বাংলা চলিত গদ্য প্রয়োগের পথিকৃৎ প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-১৮৮৩) ছিলেন ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান, যুক্ত ছিলেন সমাজসংস্কার আন্দোলনেও। তাঁর পরিবার ও কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্র যৌথ ভাবে তাঁর সদ্য-অতিক্রান্ত দ্বিশতজন্মবর্ষ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বি টি রোডে ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মদনমোহনজিউর দেবালয়ের একতলার দালানে ২৬ জুলাই বেলা সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠান। প্যারীচাঁদ মিত্র স্মারক বক্তৃতা দেবেন অভিজিৎ ঘোষ। শ্রুতি নাটক ও সঙ্গীতে জগন্নাথ বসু, কাজল সুর, অলোক রায়চৌধুরী প্রমুখ। পরিবারের পক্ষে পূর্ণব্রত মিত্র জানালেন, প্যারীচাঁদের ‘গীতাঙ্কুর’ থেকে ১০টি গান নিয়ে প্রকাশিত হবে সিডি।

মেয়েদের সিনেমা

যে সব মেয়ের কণ্ঠস্বরে আগল দেওয়া হত, অবিচার ছাড়া আর প্রায় কিছুই জোটেনি যাদের জীবনে, তাদের নিয়েই তো আজীবন লিখে গিয়েছেন আশাপূর্ণা দেবী। তাঁকে নিয়েই অনমিতা সেনের তথ্যচিত্র। সঙ্গে পৃথা চক্রবর্তীর ‘সায়লেন্ট ভয়েসেস’, তাতে নারীত্বের বিকাশ রুদ্ধ করে মেয়েদের ওপর জোরজবরদস্তি ‘বিবাহপ্রথা’ চাপিয়ে দেওয়া। অন্যটি এ বারের স্বর্ণকমল-প্রাপ্ত সেরা তথ্যচিত্র তোর্সা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘টেন্ডার ইজ দ্য সাইট’। ফিল্মস ডিভিশন ‘থ্রু হার আইজ ওনলি’ দেখাচ্ছে নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২৪ জুলাই সন্ধে ৬টায়।

যশোমাধব

ঢাকার ধামরাই গ্রামের রথের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। ১৯৭১-এ ধ্বংসের পর সে রথ নতুন করে তৈরি হয়েছে, রথযাত্রাও চালু। এ পারে যাঁরা চলে এসেছিলেন, তাঁরা এখানেও গুছিয়ে তোলেন উৎসবটিকে। ১৯৭৫-এ বেলগাছিয়ায় পরেশচন্দ্র রায় মৌলিক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন যশোমাধবের মূর্তি এবং মন্দির। ধামরাই-এর শিল্পীরা গড়ে দেন নিমকাঠের বিগ্রহ, প্রতিষ্ঠা করেন বৃদ্ধ পুরোহিত মোক্ষদা পাণ্ডা। যশোমাধবের রথ ’৮০-তে তাঁর মাসির বাড়ি খুঁজে পেল হাতিবাগানে, মধুসূদন রায়ের ঠিকানায়, এখন যার নাম মাধববাড়ি। শনিবার যশোমাধবের রথ বেলগাছিয়া থেকে পুণ্যার্থী পরিবেষ্টিত হয়ে এসেছে হাতিবাগানে। আজ থেকে মাধববাড়িতে শুরু লীলা কীর্তন, ভাগবত পাঠ, সহ নানা অনুষ্ঠান।

রবীন্দ্রগান

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এসসি রসায়নে প্রথম হওয়া ছাত্রটি রবিঠাকুরের গানের টানে তিরিশের দশকের গোড়ায় পাড়ি দিলেন শান্তিনিকেতন। বিশ্বভারতীর এই রসায়নের অধ্যাপক দিনেন্দ্রনাথ ও পরে রবীন্দ্রনাথের কাছে গান শিখে শেষে মজে গেলেন গানেই। কবির ইচ্ছায় সংগীতভবনের অধ্যক্ষ হন। তিনি আচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদার। ২২ জুলাই সন্ধে ছ’টায় রোটারি সদনে তাঁর ১১৫ তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন করবে ‘কথা ও সুর: রবীন্দ্রসংগীত অনুশীলন/ অনুসন্ধান’। থাকবে আলোচনা ‘শৈলজারঞ্জন ও রবীন্দ্রসঙ্গীত’, সঙ্গে সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়ের গান। প্রকাশিত হবে বিমল বসুর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম ‘তোমার সুরের ধারা’। এ দিকে রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচেতনা ও বিশ্বভাবনাকে গান ও পাঠে ধরতে চেয়ে ২৫ জুলাই সাড়ে ৫টায় আইসিসিআর-এ প্রকাশিত হচ্ছে সিডি ‘কালের পথিক’ (পিকাসো)। গানে সুছন্দা ঘোষ, পাঠে দেবশঙ্কর হালদার, রচনা ও সংকলন সুলগ্না বসু।

শিশুসাহিত্যিক

মাত্র পঞ্চান্ন বছরে প্রয়াণের পর প্রায় ছয় দশক কাটতে চলল, কিন্তু আজও তিনি ছোটদের কাছে সুপরিচিত লেখক— সুনির্মল বসু। গিরিডিতে ১৯০২ সালে ২০ জুলাই জন্ম। বাবা পশুপতি বসু, পিতামহ সাংবাদিক গিরিশচন্দ্র বসু। সুনির্মল অবন ঠাকুরের কাছে শিল্পচর্চার পাঠ নেন। ২৩ বছরেই প্রকাশ হয় প্রথম কবিতার বই হাওয়ার দোলা। গল্প, কবিতা, নাটকের সঙ্গে লিখেছেন কবিতা ও ছন্দ শেখার বই, ছোটদের আবৃত্তি, গান, অভিনয় শেখার বই, পুরাণের গল্প, নীতিশিক্ষা, অক্ষর পরিচয়, ছড়ার ছবি, মহাপুরুষের জীবনী, রূপকথা, ভূতের গল্প ও শিকারকাহিনি। ছানাবড়া, পাততাড়ি, শহুরে মামা, ছন্দের গোপন কথা, কবিতা শেখা, মরণের ডাক, ছন্দের টুংটাং, বীর শিকারী প্রভৃতি তাঁর স্মরণীয় গ্রন্থ। ছোটদের পাক্ষিক ‘কিশোর এশিয়া’র তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ জীবন খাতার কয়েক পাতা। ১৯৫৭-য় প্রয়াত হন। মরণোত্তর ‘ভুবনেশ্বরী পদক’ ও ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ পেয়েছিলেন। কয়েক দশক আগে তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয় তাঁর রচনাবলি। ঢাকুরিয়ায় তাঁর বাড়ির কাছেই গড়ে উঠেছে শিশু-কিশোরদের লাইব্রেরি ‘কবি সুনির্মল স্মৃতি পাঠাগার’। ৫৮ বছর ধরে রমরমিয়ে চলছে সেটি। শতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকুরিয়ার একটি পার্ক তাঁর নামে নামাঙ্কিত হয়। তাঁর পরিবারের উদ্যোগে বহু মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। আজ তাঁর ১১৪তম জন্মদিনে, শিশু কিশোর আকাদেমি’র উদ্যোগে তমলুকের ঋষি ধামে সারাদিন বিবিধ অনুষ্ঠান।

অভিনেত্রী

আন্ধেরি থেকে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন সোহিনী মুখোপাধ্যায়। কলকাতায় অবশ্য ‘ঝুম’ বলেই তাঁর পরিচিতি। এই মুহূর্তে তিনি একটা কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মুম্বইয়ের সোমশুক্লা দাস পরিচালিত ‘হপ্‌সকচ’, দেড় ঘণ্টার ছবিটিতে একক অভিনয় করে টেনেরিফ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর (ফরেন ফিল্মস) সম্মান পেয়েছেন। এর আগেও সোমশুক্লার শেষের কবিতা-প্রাণিত ‘ছুটি আর পিকনিক’ ছবিতে অভিনয় করে মাদ্রিদ ফেস্টিভ্যালে নমিনেশন পেয়েছিলেন, সেরা সহ-অভিনেত্রীর। সিনেমার অনেক আগে থেকেই নাটকে তাঁর সজীব আসক্তি। সোমশুক্লারই কালি থিয়েটার-এ ইংরেজি নাটকে অভিনয় করেছেন। একটি মহাভারত-এর নতুন ব্যাখ্যা সংবলিত নাট্যরূপ, এতে দ্রৌপদীর ভূমিকায় কিছু দিন আগে এডিনবরায় অভিনয় করে সাড়া তুলেছেন। অন্য নাটকটি ‘ফ্ললেস’। এর আগে করেছেন কলকাতায়, পদাতিক-এর হিন্দি থিয়েটার ‘ছুমন্তর’-এ, প্রধান চরিত্রে। উষা গঙ্গোপাধ্যায়ের রঙ্গকর্মী-র ‘রুদালি’ আর ‘চেহ্‌রে’ নাটকে। সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘কিং লিয়ার’-এ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। নাটক তাঁর রক্তে। কেননা তিনি প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব অসিত মুখোপাধ্যায়ের কনিষ্ঠ কন্যা। ‘ছেলেবেলা থেকেই বাড়িতে নাটকের আবহাওয়া। বাবার জন্যেই থিয়েটারে আসা, তাঁর সঙ্গে রিহার্সালে থাকতে-থাকতে নাটকের অনেক কিছু মাথার মধ্যে ঢুকে যেত। তাঁর কাছে যেমন শিখেছি, এখনও শিখছি সেঁজুতি-র (মুখোপাধ্যায়) কাছে, আমার দিদি। যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র করতে যাওয়ার আগে ওর সঙ্গে আলোচনা করে নিই’, জানালেন সোহিনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE