জল-যোগ: মণ্ডপ তৈরি করতে আসা শ্রমিকদের রাত্রিবাসের ছাউনির পাশে জমে রয়েছে জল। উত্তর কলকাতার একটি পুজোমণ্ডপে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
দর্শনার্থীদের নজর টানতে মণ্ডপ ও প্রতিমার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা বাজেট ধরা হলেও শিল্পীদের সুরক্ষায় বরাদ্দ নেই তার ছিটেফোঁটাও! গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে দিনরাত এক করে কাজ করা শিল্পীদের কেউ তাই থাকছেন মণ্ডপ চত্বরের অস্থায়ী ছাউনিতে, কেউ রাত কাটাচ্ছেন মণ্ডপের ভিতরেই। কয়েকটি পুজো কমিটির তরফে শিল্পীদের থাকার জন্য ক্লাব বা কমিউনিটি হলের ব্যবস্থা করা হলেও ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে তাঁদের একটা বড় অংশেরই ঘুমোনোর সময়ে মশারিও জুটছে না বলে অভিযোগ।
কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুজো কমিটিগুলিকে একাধিক নির্দেশিকা দিয়েছে কলকাতা পুরসভাও। মণ্ডপের বাঁশের ফাঁকে বা মাঠ চত্বরে যাতে জল না জমে, সে দিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ এসেছে। তবে তার পরেও একাধিক পুজো মণ্ডপে জমা জলের পাশাপাশি ঝোপঝাড়ের দেখা মিলছে। এমনকি, মণ্ডপ তৈরির শিল্পীদের থাকার অস্থায়ী ছাউনিতেও দেখা গিয়েছে অব্যবস্থার চিত্র।
উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি পার্কে গিয়ে দেখা গেল, জোরকদমে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। পাশেই থাকার জায়গা করা হয়েছে শিল্পীদের। মাঠ চত্বরে জমা জলের মধ্যে দুপুরে ওই ছাউনির ভিতরে ঘুমোচ্ছেন কয়েক জন। মশারির তো কোনও বালাই নেই-ই, নেই অন্যান্য ব্যবস্থাও। পুজো কমিটির তরফেও বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারাই। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অনুপম দাস যদিও বললেন, ‘‘পাশেই আমাদের পুর প্রতিনিধির কার্যালয়। নিয়মিত পুরকর্মীরা এসে গোটা মাঠে ব্লিচিং ছড়িয়ে দিয়ে যান। পুরকর্মীরাই মোটামুটি দেখাশোনা করেন।’’
একই অবস্থা পার্ক সার্কাস সংলগ্ন একটি পুজো মণ্ডপেও। গোটা চত্বর টিন দিয়ে এমন ভাবে ঘেরা যে ঢোকার উপায় নেই। যদিও মণ্ডপ-শিল্পীরা ভিতরেই ‘ভাত-ঘুম’ দিচ্ছেন। এক কর্মী বললেন, ‘‘বাড়ি থেকে সব কি আর আনা যায়! এখানে যা জুটেছে, তাতেই থাকছি। আর কয়েক দিনের তো ব্যাপার।’’ কলেজ স্কোয়ারে মণ্ডপ চত্বরেই কর্মীরা আলাদা আলাদা ছাউনি করে থাকছেন। সেখানেও অনেকে মশারি ছাড়া থাকছেন বলেও অভিযোগ। পুজো কমিটির এক সদস্য বললেন, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধে কমিটির তরফে কারিগরদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়নি। পুরসভাই যা করার করেছে। এক জায়গায় দুটো মশারি দিলে তো আর ডেঙ্গি কমবে না।’’
যদিও একডালিয়া, সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী-সহ কয়েকটি পুজো কমিটির তরফে অবশ্য অস্থায়ী জায়গার বদলে কর্মীদের জন্য ক্লাবঘর বা কমিউনিটি হলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও পুজো কমিটির তরফে আবার ডেঙ্গি পরিস্থিতি ঘোরালো হতেই অস্থায়ী ছাউনি থেকে কারিগরদের কমিউনিটি হলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উত্তর কলকাতার গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মান্টা মিশ্র বলেন, ‘‘এলাকার কয়েক জনের জ্বরের খবর শুনে আর ঝুঁকি নিইনি। তড়িঘড়ি শিল্পীদের কমিউনিটি হলে নিয়ে যাই। এখন ওখানে রাতে থাকছেন সবাই।’’ একই ভাবে শিল্পীদের জন্য কমিউনিটি হলের ব্যবস্থা করেছে কসবার একটি পুজো কমিটি। তাদের অন্যতম উদ্যোক্তা কাজল সরকার বললেন, ‘‘মশা কি আর মানুষ বেছে কামড়ায়! আর ওঁরা অসুস্থ হলে তো আমাদের মণ্ডপের কাজটাই সময়ে শেষ হবে না। পুজোর ক’দিন বাকি, কে আর ঝুঁকি নেবে বলুন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy