E-Paper

২৭ বছর বাদে বাধা ঠেলে নিজের ঘরে ফেরা

নিজের বাড়ি চিনে যাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ৫৯ বছর বয়সি নারায়ণ। তবু পাভলভের কর্মী দীপেন প্রধান এবং হাসপাতালে সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি টুসি মজুমদারকে তাঁর সঙ্গে দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঋজু বসু ও সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:২২
An image of Man

নারায়ণ দাস। —ফাইল চিত্র।

পৃথিবীর বয়স বেড়েছে আরও ২৭ বছর। পাভলভ মানসিক হাসপাতালের ঘেরাটোপেই ২৭টি বছর কাটিয়ে ফেলেছেন কৃষ্ণনগরের নারায়ণ দাস। নিজের দিদি যখন নারায়ণকে পাভলভে ভর্তি করে আসেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নাম জ্যোতি বসু। নরেন্দ্র মোদী প্রথম বার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হতেও বছর পাঁচেক দেরি আছে। কেউ নিতে না আসায় সুস্থ হয়েও পাভলভেই পড়েছিলেন নারায়ণ। সুস্থ আবাসিকদের বাড়ি ফেরাতে পাভলভ কর্তৃপক্ষ তৎপর হতেই নিজের বাড়িতে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি।

নিজের বাড়ি চিনে যাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ৫৯ বছর বয়সি নারায়ণ। তবু পাভলভের কর্মী দীপেন প্রধান এবং হাসপাতালে সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি টুসি মজুমদারকে তাঁর সঙ্গে দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে পাভলভে কর্তব্যরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা নারায়ণের বাড়ি ঘুরে আসেন। ওই বাড়িতে নারায়ণের দাদা, বৌদিরা থাকেন। তাঁদের আর্থিক দুরবস্থার জন্য ভাইকে ফেরাতে তাঁরা অনিচ্ছুক বলেও জানতে পারেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২৭ বছর বাদে বুধবার দুই সঙ্গীর সঙ্গে কৃষ্ণনগর স্টেশনে নামেন নারায়ণ। এত বছর কেটে গেলেও শীতের সন্ধ্যায় সটান টোটোয় উঠে কৃষ্ণনগরের বৌবাজারে অরবিন্দ রোডের বাড়ির পথ ধরতে ভুল করেননি তিনি।

টুসি, দীপেনরা বৃহস্পতিবার সকালে বলছিলেন, ‘‘স্থানীয় অরবিন্দ বয়েজ় ক্লাবের ছেলেরা অনেকেই পাড়ার টিউশনির মাস্টারমশাই নারায়ণদাকে চিনতে পারছিলেন।’’ তবে পরিবারের লোকের কাছে অভ্যর্থনা জোটার অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি নারায়ণ বা তাঁর সঙ্গীদের জন্য। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেও এত দিন বাদে তাঁর দায়িত্ব কে নেবে, এই নিয়ে পরিজনেরা বচসায় জড়ান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামলাতে আসে কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার পুলিশ। বাড়ির লোক তাঁকে নিতে অস্বীকার করছে, এই অবস্থায় প্রৌঢ় নারায়ণ শুধু বলছিলেন, ‘‘আমার ঘরটা খুলে দাও, আমি যে ভাবে হোক এখানেই থাকব!’’ পুলিশের সাহায্যে ঘরে ঢোকেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ওই বাড়িতে গেলে নারায়ণের বৌদি অনিতা দাস বলেন, ‘‘ওঁর (নারায়ণের) ভাগের ঘর পরিষ্কার করে বিছানা পেতে দিয়েছি। তবে খরচ কী করে সামলাব জানি না।’’ অনিতা পরিচারিকার কাজ করেন। নারায়ণের দাদা গোপাল দাস মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। নারায়ণকে যে দিদি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন, তিনি প্রয়াত। নারায়ণ বলে চলেছেন, ‘‘টিউশনি করে সামলে নেব।’’ তাঁর এক ভাগ্নি-জামাই আপাতত তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করছেন।

পাভলভের ডাক্তারদের বক্তব্য, নারায়ণকে এক মাসের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। মানসিক রোগ ডায়াবিটিসের মতো বাড়ে-কমে। তাই ওষুধ খেতেই হবে। পাভলভ সূত্রের খবর, হাসপাতালে কিছু কাজ করার সূত্রে নারায়ণের সামান্য সঞ্চয় রয়েছে। পাভলভের সুপার মাসুদ হাসান আলি বলছেন, ‘‘সুস্থ হয়ে গেলে কাউকে আটকে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রায় তিন দশক কেউ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে তাঁর কিছু সমস্যা হতে পারে। পরিজনেরও সহৃদয়তা দরকার।’’ মানসিক রোগীদের অধিকার রক্ষা কর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের বাড়ি ফেরাতে সাহায্য করার সময়ে কোনও কোনও পরিবার বাধা দিতে পারে, এটা ভেবে আগাম প্রস্তুতি দরকার। স্থানীয় প্রশাসনকে সজাগ করে মসৃণ ভাবে কাজটা সারার পরিকল্পনা থাকা উচিত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pavlov Hospital Kolkata Krishnanagar Mental Health Mental Illness

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy