Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩
Liver Transplantation

ভিন্ রাজ্য-ফেরত রোগীর যকৃৎ প্রতিস্থাপন শহরেই

সোনারপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ সায়েন্সেস’ (আইআইএলডিএস)-এ ২২ ডিসেম্বর পর্যটন ব্যবসায়ী নকুলের যকৃৎ প্রতিস্থাপন হয়। যকৃতের অংশ দান করেন তাঁর স্ত্রী।

সোনারপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ সায়েন্সেস’ (আইআইএলডিএস)-এ ২২ ডিসেম্বর তাঁর যকৃৎ প্রতিস্থাপন হয়।

সোনারপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ সায়েন্সেস’ (আইআইএলডিএস)-এ ২২ ডিসেম্বর তাঁর যকৃৎ প্রতিস্থাপন হয়। ফাইল ছবি।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৪
Share: Save:

মরণোত্তর অঙ্গদানের মাধ্যমে যকৃৎপাওয়ার অপেক্ষার তালিকা দীর্ঘ। আবার জীবিত দাতার থেকে যকৃৎ নিয়ে তা প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো এ রাজ্যে সরকারি স্তরে শুধুই পিজিতে। লম্বা লাইন সেখানেও। ফলে বহু রোগীকে চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যেতে হয় ভিন্ রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে খরচ বড় সমস্যা।

Advertisement

সেই খরচ বহন করার সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন লাটাগুড়ির বাসিন্দা, বছর পঁয়তাল্লিশের নকুল দেব। সিরোসিস অব লিভারের চূড়ান্ত পর্যায়ের ওই রোগীর পা ফোলা ও কাশির পাশাপাশি পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত হচ্ছিল। অবশেষে গত সেপ্টেম্বরে কলকাতার উপকণ্ঠে সোনারপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন পর্যটন ব্যবসায়ী নকুল। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেব সরকার, সস্ত্রীক শ্যালক বিকাশ দে। সোনারপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ সায়েন্সেস’ (আইআইএলডিএস)-এ ২২ ডিসেম্বর তাঁর যকৃৎ প্রতিস্থাপন হয়। যকৃতের অংশ দান করেন তাঁর স্ত্রী। টানা ১৭ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে আজ, শনিবার ছুটি হবে নকুলের।

তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে আসছেন বন্ধু সুজয় দেব ও তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা। আট মাস আগে লাটাগুড়ির বাসিন্দা সুজয়েরও যকৃৎ প্রতিস্থাপন হয়েছে এই হাসপাতালে। সুজয়কে যকৃৎ দিয়েছিলেন সুস্মিতা। তিনিই অন্নপূর্ণাকে যকৃৎ দানের সাহস দেন। দুই সন্তানের মা অন্নপূর্ণা বলেন, ‘‘প্রথমে হায়দরাবাদে গিয়েছিলাম। ওখানকার চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না। সুস্মিতাদের থেকে শুনে এখানে আসি।’’ অস্ত্রোপচারের পরে দিন সাতেক আইসিইউ-তে ছিলেন নকুল। এক বছর আগেও তাঁর বিলিরুবিন প্রায় ২০ থাকত। এখন দুইয়ে নেমে আসায় আশ্বস্ত পরিবার।

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অস্ত্রোপচারের পরে চতুর্থ রাতে শ্বাসকষ্ট হয় নকুলের। পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণ ভাবে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা থাকে ৬০-৬২ শতাংশ। নকুলের সেটি হয়েছিল ৩০ শতাংশ। কয়েক দিনের চেষ্টায় চিকিৎসায় সাড়া দেন তিনি।

Advertisement

মে মাসে অস্ত্রোপচারের চার দিন পরে সুজয়েরও ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল। ৪৪ দিন পরে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। সুস্মিতা জানাচ্ছেন, ২০২১ সালে করোনা হয় সুজয়ের। এর পরে জন্ডিস ধরা পড়ে। পেটে, বুকে জল জমতে থাকলে তাঁরা হায়দরাবাদে যান। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ শুনে উত্তরবঙ্গে ফিরে চিকিৎসা শুরু করেন। সুস্মিতা বলেন, ‘‘ডাক্তার বলেছিলেন, পিজিতে যোগাযোগ করতে। ওখানে দীর্ঘ লাইন থাকায় আমরা আইআইএলডিএসে চলে এসেছিলাম।’’

অন্য দিকে, স্বামীকে যকৃৎ দান করার জন্য খানিকটা ওজন কমাতে হয়েছে অন্নপূর্ণাকে। শুক্রবার তাঁর দাদা বিকাশ বললেন, ‘‘সরকারি ও বেসরকারি স্তরের মাঝে এমন একটা ক্ষেত্র থাকা প্রয়োজন। যেখানে আমরা যেতে পারব।’’ আইআইএলডিএস-এর সম্পাদক, চিকিৎসক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় জানান, এই দু’টি ক্ষেত্রেই দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালের যকৃৎ প্রতিস্থাপনের শল্য চিকিৎসক সুভাষ গুপ্তের সহযোগিতা মিলেছে। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসা ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালই অভিভাবক। কেউ কেউ বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসা করাতে চান। কিন্তু খরচ বাধা হয়। তাই সাধ্যের মধ্যে উন্নত পরিষেবা দিতে বছর ছয়েক আগে এই হাসপাতাল তৈরি হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.