ধানের মধ্যে আর্সেনিকের মাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তিত পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা। গাঙ্গেয় অববাহিকায় নির্বিচারে ভূগর্ভের জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করার ফলেই যে এই বিপদ উত্তরোত্তর বাড়ছে, সে কথাও বার বার বলেছেন তাঁরা। তবে কী ভাবে কৃষির ফলন ব্যাহত না করে এই বিপদ ঠেকানো যায়, তা নিয়ে নিশ্চিত কোনও পথ এখনও পাননি চাষিরা।
এত দিনে তার দিশা দেখিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি কানপুর, আইজ়ার কলকাতা, লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ-সহ দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ দল। ‘জার্নাল অব হ্যাজ়ার্ডাস মেটিরিয়ালস’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে তাঁরা দাবি করেছেন, ‘অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং’ পদ্ধতিতে সেচের কাজ করলে ভূগর্ভস্থ জলের উপরে নির্ভরতা অনেকটাই কমবে। এই পদ্ধতিতে সেচের কাজ করলে কৃষির ফলনও মার খাবে না।
নিজেদের গবেষণায় গঙ্গা অববাহিকার ২৪টি এলাকা বেছে সেখানকার নমুনার উপরে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন তাঁরা। সেই পরীক্ষার বিস্তারিত বিবরণও গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন। বস্তুত, ‘অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং’ হল নদীর এবং বৃষ্টির জলকে একটি নির্দিষ্ট কায়দায় চাষের জমিতে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কতটা জল আছে, তা মাপার জন্য একটি পাইপ পুঁতে দেওয়া হয়। সেই পাইপ থেকে জলস্তর কতটা কমল, তা বুঝে নিয়ে ন্যূনতম যেটুকু জল প্রয়োজন, তা দেওয়া যেতে পারে। মূলত গ্রীষ্ম এবং বর্ষার সময়ে যে চাষ হয়, তাতে এই পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নদীর জলের প্রবাহ কমেছে। বদলেছে বৃষ্টিপাতের ধরনও। তার ফলে বহু সময়েই চাষের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জল না পেয়ে অগভীর নলকূপ বসিয়ে সেচের জল তোলা হয়। ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে গঙ্গা অববাহিকায় আর্সেনিক আছে। নির্বিচারে ভূগর্ভের জল তোলার ফলে সেই আর্সেনিক ভূগর্ভের উপরের স্তরে উঠে আসছে এবং জলের সঙ্গে মিশছে। সেই জল পানীয় হিসাবে যেমন মারাত্মক ক্ষতিকর, তেমনই দূষিত জল সেচের কাজে ব্যবহার করার ফলে তা ধান বা বিভিন্ন আনাজে ছড়িয়ে পড়ছে। তার ফলে আর্সেনিক খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে পড়ছে। এর বিপদ হিসাবে বলা যেতে পারে যে, পানীয় জলে আর্সেনিক মিশলে তা একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের উপরে কুপ্রভাব ফেলে। কিন্তু খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকলে তা বৃহত্তর এলাকার মানুষের ক্ষতি করতে পারে।
ওই গবেষক দলের দাবি, শুধু ধানে আর্সেনিকের বিষ রোধ করা নয়, পরিবেশ রক্ষায় জলের খরচ কমাতেও এই পদ্ধতি উপযোগী। বর্তমানে যে পরিবেশবান্ধব ও সুসংহত চাষের কথা বলা হচ্ছে, সে দিক থেকেও এই পদ্ধতি কার্যকর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)