Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata Story

কলকাতার মধ্যেই আছে আরও একটা কলকাতা

ফ্রক পরা দিনে আমাদের জায়গাটা কলকাতা ছিল না। বাবা বলতেন আমরা দমদমাতে থাকি। কেন দমদমা ঠিক বুঝতাম না। পাড়ায় দুটো মাঠ ছিল। উঁচু মাঠ আর নিচু মাঠ। উঁচু মাঠের ওপর একটা পোড়ো দোতলা বাড়ি। নবাব বাদশাহী আমলের।

সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত (নাট্য পরিচালক ও অভিনেত্রী)
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ১৮:২১
Share: Save:

ফ্রক পরা দিনে আমাদের জায়গাটা কলকাতা ছিল না। বাবা বলতেন আমরা দমদমাতে থাকি। কেন দমদমা ঠিক বুঝতাম না। পাড়ায় দুটো মাঠ ছিল। উঁচু মাঠ আর নিচু মাঠ। উঁচু মাঠের ওপর একটা পোড়ো দোতলা বাড়ি। নবাব বাদশাহী আমলের। শুনেছিলাম ওই বাড়িটার ছাদে উঠলে নাকি হাওড়া ব্রিজ দেখা যায়। বাবার কাছেই শোনা, পাড়াটা পত্তনের সময় মোটে তিনটে বাড়ি ছিল। শেয়াল ডাকত রাতে। আমাদের বাড়ির সামনে একটা উঁচু রোয়াক ছিল। সেখানে কাঠকয়লা দিয়ে দাগ কেটে এক্কা-দোক্কা খেলতাম। একবাটি দুধে ভাত ফেলে চোঁ চোঁ চুমুক মেরে দুই বেণী দুলিয়ে ছুটতাম মাঠে। খেলা খেলা আর খেলা — সে যেন তীর্থে যাওয়ার রোমাঞ্চ। নিচু মাঠে ছিল একটা ঝড়ে পড়ে যাওয়া চাঁপা ফুলের গাছ। কিন্তু গাছটা ছিল জীবন্ত। গরমকালে ফুল ফুটত।

গন্ধে ম ম চারিধার। বন্ধুরা মিলে লুকোচুরি খেলতাম, কানামাছি, বুড়ি-বসন্ত কখনও সখনও। অনায়াসে হেঁটে এপার ওপার করতাম গাছটাকে। দড়ির ওপর দিয়ে মাদারির মেয়েরা যেমন হেঁটে যায়। কিন্তু মনটা ঘুরতো ওই পোড়ো বাড়িটার আনাচে কানাচে। অদম্য সাধ ছিল বাড়িটার ছাদে ওঠবার। একদিন দেখি বাড়িটাতে অনেকগুলো পরিবারের বাস। নিয়মিত উনুন জ্বলে, রান্নাবান্না হয়, কাঁথা কম্বল রোদে দেওয়া হয়, হারমোনিয়মে গলাও সাধে একটি মেয়ে। ঘরগুলো বিশাল বিশাল। তার ভিতরেই কাঠের তক্তা দিয়ে একতলা দোতলা করা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে বাচ্চাকাচ্চারা দোতলায় উঠে ঘুমোয়। ইংরেজি সিনেমাতে যেমন দেখায় অনেকটা তেমনই। বাড়িটা নবাব আলিবর্দি খাঁ-র, পরে লর্ড ক্লাইভ দখল নিয়েছিলেন। বাড়িটার আশেপাশেই ঘুরঘুর করতাম। একদিন খুঁজে পেয়ে গেলাম ছাদে ওঠার সিঁড়ি। একলাই উঠতে শুরু করলাম সিঁড়ি বেয়ে। দেখি পা দিতেই খসে পড়ছে সিঁড়ির আলগা ইট। মিশকালো অন্ধকার, ছাদে বাদুড় বাসা বেঁধেছে। বহু কষ্টে আর ভয়ে ভয়ে গিয়ে উঠলাম ছাদে। মনে হল যেন আট-দশ তলা উঠে এসেছি। সত্যিই দেখতে পেলাম হাওড়া ব্রিজ! নিজেকে তখন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা দয়ারাম সাহানি ভাবছি। ক্লাইভের সেই বাড়িটার সামনে এখন আর্কিওলজিকাল সার্ভে-র বোর্ড আর পিছনে অ্যালুমিনিয়ম ফ্যাক্টরি-র দানবীয় এলাকা জুড়ে উঠেছে হাউসিং কমপ্লেক্স। সেখানে নাকি এক একটি ফ্ল্যাটের দাম এক কোটি টাকা! দমদমা এখন পুরোপুরি কলকাতা।

খুকিবেলা পেরিয়ে কলেজবেলা থেকে কলকাতা-চড়ুনি মেয়ে হয়ে গেছি। আর দমদমা-র দিকে চেয়ে দেখি না। নাটকের পোকা মাথায় আমার। গতিবিধি তখন টালিগঞ্জ, মালঞ্চ সিনেমার পাশের রাস্তা। সেখানে ছিল ক্যালকাটা গ্রুপ থিয়েটারের মহড়া ঘর। আর তারও ক’দিন পর থেকে শ্যামবাজার, তার পর বেকবাগান। দমদমায় তখন খেতে আর ঘুমোতে আসি শুধু, মানে ওই আর কি। মেট্রোরেল চালু না হলেই বা, থ্রি সি বাই ওয়ান বাস ছিল। সবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি – সকাল ন’টার সময় ভাত খেয়ে দুশো একুশ বাস চ়ড়ে যেতাম গোলপার্কে। সেখান থেকে আর একটা বাস ধরে ইউনিভার্সিটি। চাকরি একটা করতেই হবে নইলে সাংস্কৃতিক বিপ্লব আটকে যাবে, তাই লাইব্রেরি সায়েন্স পড়তে ঢুকেছিলাম। কোনওমতে ক্লাস সেরে ফেরার পথের উৎসাহটাই ছিল আসল। আবার গোলপার্কে হল্ট। সেখানে পাঁচিলে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করে থাকত আমার প্রিয় বিশেষ মানুষটি। তার সঙ্গে উঠে পড়তাম শ্যামবাজারগামী এক মিনিবাসে। বাসের তিন নম্বর সিট-এ পাশাপাশি বসতাম দু’জনে, ক-ত গল্প, বাদামভাজা খেতে খেতে কখন যে এসে যেত শ্যামবাজার, হুঁশ থাকত না। তার পর চা-টোস্ট সহযোগে আবার আড্ডা কাঠের টেবিল-চেয়ার পাতা ঘুপচি এক চা কেবিনে। মুচমুচে মাখন-টোস্ট আর সুগন্ধি চা। আহা কী তার স্বাদ! ঠিক সাতটায় পৌঁছে যেতাম পাল স্ট্রিট, থিয়েটার ওয়ার্কশপ-এর মহড়া ঘরে। হয় মহড়া, নয় মিটিং কিংবা আড্ডা। নাটকের পাণ্ডুলিপি হাতে লিখে নকল করছি বা পোস্টার আঁকছি কিংবা খামোকাই একটা হাতে লেখা ম্যাগাজিন তৈরি করে ফেলছি। যেন পৃথিবীটাই বদলে ফেলব এক দিন! আর দলের ঘরের দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে একটা পোস্টার – তাতে লেখা – শিল্প জীবন-বিচ্ছিন্ন কোনও খেয়াল নয়। শিল্প সেই পুষ্প যা বিধৃত হয় সমাজজীবনের বৃক্ষে।

আরও খানিক সময় গড়িয়েছে। আমার কর্মস্থল আন্দুলের একটি স্কুল। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতাম রোজ। প্রতিদিন স্টেশনে এক বোবা মেয়ের সাক্ষাৎ পেতাম। আমায় দেখতে পেলেই হাত পাততো। আর একটা এক টাকার কয়েন ছিল ওর পাওনা। মলিন পোশাক, ফর্সা রং কবে যে ময়লায় মুড়ে গেছে ঠাহর করা যায় না। হাসিটা ভারি সুন্দর। ইশারায় চোখ দিয়ে অনেক কথা বলত মেয়েটি। প্রায় অনেক দিন হল মেয়েটি উধাও। কোথাও আর খুঁজে পাই না। বাড়ি ফেরার পথে মান্থলি কাটতে গিয়ে এক দিন পায়ে যেন কিছু ঠেকল, নীচে তাকিয়ে দেখি সেই মেয়ে মাটিতে শুয়ে। এক স্ফীতকায় পেট ওর মুখটাকেও ঢেকে দিয়েছে। সেই হাসিমুখ, সেই নিষ্পাপ চোখ। একটা চোরা ধাক্কা খেলাম বুকে। দ্যাখো, কোথা থেকে পাপ ছুঁয়ে গেছে ওকে। আজ বাদে কাল ওর শিশু জন্মাবে। এ বিশ্বের আলো দেখবে কলকাতার যিশু। আমার নিজের চোখে দেখা সেই মেয়ে, কুমারী মা। চোখ বন্ধ করলে আজও তার মুখখানি ভেসে ওঠে।

উন্নয়নের চক্রে আমারও গতি বদলেছে। দমদম স্টেশন থেকে মেট্রো ধরি। লোকজন এ পথে সব সময়ে হন্ত-দন্ত। ওই দ্রুততা মাথা ঘুরিয়ে দেয়। সামিল আমিও। এক দিন দেখি প্রাণপণে এক যুবক মানুষজনকে অনুরোধ জানাচ্ছে অন্য পথে ঘুরে যেতে। রেল ওভারব্রিজের নীচ থেকে সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছে হাত ধরে। অনেকেই তার সেই অনুরোধ অগ্রাহ্য করে চলে যাচ্ছে। পাত্তাই দিচ্ছে না তাকে। আমিও তেমনই মতলব আঁটছিলাম। কিন্তু সে যুবক নাছোড়। বুক চিতিয়ে ডানার মতো দু’দিকে হাত ছড়িয়ে এসে দাঁড়াল আমার সামনে। ওর গলা ভেঙে স্বর বেরোচ্ছে না তখন। দুটি শব্দ কানে পেলাম কাটা পড়েছে – লাইনে কাটা পড়েছে – যাবেন না ও দিকে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ গেল ঘটনাস্থলের দিকে। বীভৎস সেই দৃশ্য দেখে ফেলে ঘুমোতে পারিনি ক’দিন। আর ভুলতে পারিনি সেই যুবকটিকে। দুর্ঘটনার দৃশ্যদূষণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে যে ছিল বদ্ধপরিকর।

কলকাতা যৌবনে সত্যিই রমরমা। রদ্যাঁর ভাস্কর্য প্রদর্শন চলছে। বিশাল লম্বা লাইন সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে গেছে বহুদূর। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে প্রদর্শনী দেখে ফিরেছি। কিভাবে বয়ে আনা হল ওই এক একটি মূর্তি তাই নিয়ে উত্তাল সংবাদপত্র। ক্যাথিড্রাল চার্চ-এ দেখলাম আন্তিগোনে নাটকের অভিনয়। সোফোক্লিস থেকে অনুবাদ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত-র। পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল অভূতপূর্ব দক্ষতায়। অনেক উঁচু মাটির রাজপ্রাসাদ, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেন রাজা ক্রেয়ন, তার হাতের ওপর শকুন। মাটিতে রাজনন্দিনী আন্তিগোনে। সে এক মুঠো মাটি ভাইয়ের মৃতদেহের উপর ছড়িয়ে দিতে চায়। অন্য পারে প্রসেনিয়ামের আন্তিগোনে কেয়া চক্রবর্তীর আকস্মিক মৃত্যুকে ঘিরে নানান জল্পনা। প্রকাশিত হয়েছে কেয়ার বই। সে বই পড়ছি উল্টে পাল্টে। ভূমিকা থেকে ব্যাক-কভার পর্যন্ত। কেয়া তখন আইডল আমাদের। মনে মনে আমিও যেন কেয়া। মানে জোয়ান অব আর্ক, আন্তিগোনে, বিনোদিনী স-ব একসঙ্গে। আবার কিছু দিন পর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণসভা। তাঁকে ঘিরে এ-ত শোক স্মৃতিচারণ অবাক করে দিয়েছিল। মহাভারত ছবিটি নিয়ে বিশ্বপরিভ্রমণে বেরিয়েছিলেন পিটার ব্রুক, এলেন কলকাতায়। এক তিন দিনের কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলাম আমরা। মানে সুযোগ পেয়েছিলাম আর কি। কিছুই শিখিনি তেমন। তবে কলকাতার রথী মহারথীদের মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল সে কর্মশালা। এলেন ফরাসি দেশ থেকে মার্শাল মার্শো। তিনি রবীন্দ্রসদনে সকালবেলায় একটি ঘরোয়া পরিসরে মূকাভিনয়ের কিছু নকশা পরিবেশন করেছিলেন। সে দিনটা কোনও দিনও ভোলার নয়। সন্ধেয় দেখালেন তাঁর বিশ্ববিশ্রুত মূকাভিনয়। তেমনটা আগে কখনও দেখিনি, পরেও দেখলাম না। এখন অবশ্য ইউটিউবে ওঁর মূকাভিনয় দেখতে পাওয়া যায়। শীতকালে কলকাতা, উৎসবে ঠাসা থাকত। এসেছে রাশিয়ান ব্যালে, রাশিয়ান সার্কাস। রাশিয়া দেশটার কী বেহাল দশা এখন। জমজমাটি ছিল বিধানসভার পুষ্প প্রদর্শনী। একবারের জন্য অন্তত চিড়িয়াখানা, সঙ্গে লুচি আলুরদম। বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম, হর্টিকালচার সোসাইটি, ন্যাশানাল লাইব্রেরি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। জাদুঘরের সামনে লম্বা লাইন – এ দৃশ্য তো কলকাতা ছাড়া কোথাও দেখতে পাব না। হাতিবাগান, এসপ্ল্যানেড, গড়িয়াহাটে কান ঢেকে যায় হকারভাইদের গানে। যৌবনের সেই কলকাতা এখন হুতোম থেকে হুক্কাবার-এ পৌঁছে গেছে। এসি বাস চলছে অহরহ, বিগ-বেন, ঝাঁ চকচকে বাস স্ট্যান্ড অনেক কিছুই হচ্ছে। প্রায়ই খবর, শহরে মেয়েরা এখন নিরাপদ নয়। তার প্রমাণও রয়েছে ভূরি ভূরি। যে জাতি নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করে তারাই আবার পুজো-প্যান্ডেলে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করছে। এ কোন তালিবানি ফতোয়া!

সে ফতোয়া আমরা মানছি কেন? অথচ এই শহরে মল্লিকাদি (মল্লিকা সেনগুপ্ত) কেমো নিয়ে হাসপাতাল থেকে সোজা চলে আসতেন থিয়েটারের হলে, নবনীতাদি (নবনীতা দেবসেন) হাসতে হাসতে লিখে চলেছেন মেয়েদের বুদ্ধির জয়গাথা। মেয়েদের জন্য কবে নিরাপদ হবে এই শহর – কে জানে।

এই সে দিনের কথা – নতুন নাটক রাতমোহনা-র জন্য একটা ঝুড়ি দরকার ছিল। ঝুড়িটা লম্বা আকারের হওয়া চাই। নিজেই এক দিন চলে গেলাম লিবার্টি সিনেমার পাশে রামবাগান অঞ্চলে। ওখানে বাঁশ চেরাই করে তৈরি হয় নানা রকমের সজ্জাদ্রব্য। গিয়ে জানতে পারলাম চুবড়ি বা ঝুড়ি নিতে গেলে আগে অর্ডার দিতে হবে। মহা মুশকিল। আমার সে দিনই চাই। অগত্যা? রেডিমেড কোথায় পাব? অনেকটা হাঁটতে থাকলাম। নর্দমার জল। কাদা, থুতু, পানের পিক, এই সব ডিঙিয়ে পথ চলতে লাগলাম। টাইমকলে গামছা পরে স্নান করছে কেউ কেউ। কোথাও একদল বাচ্চা মিলে একটা সস্তা মোবাইল ফোনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, ওদের চুলোচুলি আর অশ্লীল গালিগালাজে ভরে উঠছে গলিটা। এক একটা জায়গাতে জটলা চলছে রাত সুন্দরীদের, কেউ কেউ পাক্কা বলিউডি চালে রং-চং মেখে ফ্লাইং খদ্দের ধরতে বেরিয়ে পরেছে। একই ধারায় বয়ে চলেছে সোনাগাছির রোজনামচা। উড়ালপুল আর আলোর মালায় মোড়া বড় রাস্তার চাকচিক্যের সঙ্গে মেলে না। প্রদীপের নীচের অন্ধকার। একটি মেয়ে দ্রুতপায়ে যাচ্ছিল, ওকেই জিজ্ঞাসা করলাম- এ রাস্তা ধরে চিৎপুর রোড যেতে পারব তো? ও বলল- আমার সঙ্গে আসুন। যথারীতি স-এর উচ্চারণ অনেকটা এস-এ মতো। দেখি আমার সঙ্গে একথা সেকথা বলতে বলতে এগিয়ে চলল মেয়েটিও। কী জন্য ঝুড়িটা লাগবে ম্যাডাম। আমি বললাম, আমাদের নাটকে লাগবে। স্কুলের নাটকে? না, না, আমরা নিয়মিত স্টেজে নাটক করি। ও, মানে সেখানে শুটিংও হয় টয় নাকি? বললাম, শুটিং নয় গো, থিয়েটার। এই তো তোমাদের কাছেই আছে মিনার্ভা থিয়েটার। যাওনি কখনও? হাসালেন ম্যাডাম। দিনের বেলা মাঝেসাঝে বই দেখতে যাই। তাও মড়ার হলগুলো সব উঠে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতে আড়চোখে ওর সাজ পরখ করছিলাম। আহা কী ছিরি। হাতের আঙুলে বড় বড় নখে সস্তা নেলপালিশ, ঠোঁটে রঙের রেখা বাড়িয়ে ঠোঁটজোড়াকে চওড়া করা হয়েছে আবার। টাইট একটা টি-শার্ট কামড়ে ধরেছে বক্ষযুগল। রাস্তা চিনতে পারব বলে কাটাতে চাইছিলাম মেয়েটাকে। বললাম, যাও না তুমি। এবার আমি একাই চিনে যেতে পারব। মেয়েটি বলল, এটা খতরনাক পেলেস, জানেন তো? হেসে বললাম, জানি। আপনার সাহস আছে বলতে হবে। একথা সে কথার মধ্যে দিয়ে পৌঁছে গেলাম ঝুড়ির দোকানে। মেয়েটিই দরদাম করে কিনে দিল একটা ঝুড়ি। কেনার সময় আমাদের দুজনের ম্যাচিংটা আড়চোখে দেখছিল দোকানি। ট্যাক্সিটাও ওই ধরে দিল। আবার এমনি দরকার হলে চলে আসবেন দিদিমণি, সাবধানে যাবেন। আমিও হাত নেড়ে বিদায় জানালাম। ওর মুখে দিদিমণি শব্দটা ভাল লাগল। গাড়ি ছাড়তে মনে হল যাঃ নামটা জানলাম না তো! মালতী, মাধবী, সাকিনা – কিছু একটা হবে। ক’টা টাকা দিলে হত! না, না বেশ স্বাবলম্বী মেয়ে, এই এক আমাদের মধ্যবিত্ত ভাবনা, যত্ত সব। মনে হচ্ছে দু’চোখ একটু যেন ভিজে উঠছে! আপন মনেই আওড়াচ্ছি শঙ্খ ঘোষের লেখা থেকে — এ কলকাতার মধ্যে আছে আর একটা কলকাতা/হেঁটে দেখতে শিখুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

howrah bridge Kolkata Nandan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE