বিজ্ঞাপন
শহর জুড়ে থাকা বিভিন্ন হোর্ডিংয়ে বিজ্ঞাপন দেয় সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা। এর মধ্যে পুরসভারও বেশ কিছু হোর্ডিং রয়েছে। সেগুলিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার বরাত কে বা কারা পাবে, তা ঠিক করার প্রথম ধাপ দরপত্র ডাকা। কিন্তু, পুরসভার হোর্ডিংয়ে বিজ্ঞাপন ব্যবসার বরাত দেওয়া হয়েছে কোনও রকম দরপত্র না ডেকেই। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুর অন্দরে।
কেন এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে শুরু হয়েছে অন্য এক জল্পনা। অভিযোগ উঠেছে, বাইরের কোনও বিজ্ঞাপন (অন্য দলের) যাতে শহরে না ঢুকতে পারে, তা ঠেকাতেই শহরেরই বিশেষ কিছু সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, গোটা কলকাতা জুড়ে তাদের ২৩০টি হোর্ডিং রয়েছে। সবগুলিই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। এই সব হোর্ডিং ভাড়া দিয়ে গত আর্থিক বছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকা আয় হয়েছে পুর কর্তৃপক্ষের। তবে পুরসভার এক আমলাই জানাচ্ছেন, দরপত্র ডেকে বিজ্ঞাপনের বরাত দেওয়া হলে আয়ের পরিমাণ আরও বাড়ত।
কী বলছে পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতর? দফতরের এক আধিকারিক জানান, গত আর্থিক বছরে যাঁরা ওই সব হোর্ডিংয়ের বরাত পেয়েছিলেন, ফের তাঁদেরকেই তা দেওয়া হয়েছে।
কেন? দরপত্র না ডেকে বরাত দেওয়ার পিছনে পুরসভার মেয়র পরিষদ বৈঠকের এক নথিতে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাড়া মেলেনি। বিজ্ঞাপন দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘২০১৫ সালে টেন্ডারের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছিল, পর পর তিন বার টেন্ডার ডেকেও লোক মেলেনি। তাই এ বার আর টেন্ডার ডাকা হয়নি। যাঁরা আগে কাজ করেছিলেন, তাঁদেরকেই ২ শতাংশ বেশি দিয়ে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে।’’ পাশাপাশি এ বার শুধু হোর্ডিং নয়, সঙ্গে মনোপোলের ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, শহর সাজাতে নতুন এই পদ্ধতির কথা ভেবেই পুরবোর্ড এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও দরপত্র না ডাকা নিয়ে পুরসভার অর্থ দফতরের যে আপত্তি আছে, মেয়র পরিষদের ওই বৈঠকে তা জানিয়েছিল বিজ্ঞাপন দফতর।
তবে একাধিক পুর আমলা এবং ইঞ্জিনিয়ারের অভিযোগ, টেন্ডার না ডেকে বিশেষ সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার কারণ অন্য। তাঁরা বলছেন, আগামী বছর
পঞ্চায়েত ভোট, ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচন। দল এবং সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে সকলেরই হাতিয়ার এখন হোর্ডিং। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে দিল্লি,
মুম্বই বা চেন্নাইয়ের কোনও সংস্থা ওই কাজের বরাত পেলে বিপদ বাড়ত পুরবোর্ডের। ওই সব হোর্ডিংয়ে বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও বিজ্ঞাপন শহরে ঢুকে পড়লে সমস্যা হতো। তা ভেবেই পুর প্রশাসন নিজেদের কব্জায় থাকা বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে বেছে নিয়েছে। যদিও দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ওই অফিসারেরা আরও জানিয়েছেন, দরপত্র না ডাকা নিয়ে ঘোর আপত্তি উঠেছিল পুর প্রশাসনের অন্দরেই। গত ২৩ জুন মেয়র পরিষদের বৈঠকে সেই আপত্তির কথা জানানো হয়। তখন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, বিষয়টি নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না। ওটা করতে হবে। মেয়র আরও জানান, তাঁর উপরেই যেন গোটা বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে বৈঠকে আর কারও কথা বলার সাহস হয়নি। সেই মতো টেন্ডার না ডেকেই হোর্ডিংগুলি তিনটি সংস্থাকে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy