Advertisement
১১ মে ২০২৪
Building Collapse

Building Collapse: হারানো মেয়ের নামেই সন্তানের নাম রাখবেন মা

বুধবার সকালে টানা বৃষ্টিতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে আহিরীটোলা স্ট্রিটের একটি বাড়ির একাংশ। সেখানেই থাকতেন অন্তঃসত্ত্বা গঙ্গা ঘড়াইয়ের বাবা-মা।

ভেঙে পড়া সেই বাড়ির সামনে মৃত চাঁপা গড়াইয়ের ছেলে কপিল গড়াই। বৃহস্পতিবার, আহিরীটোলায়। ছবি: সুমন বল্লভ

ভেঙে পড়া সেই বাড়ির সামনে মৃত চাঁপা গড়াইয়ের ছেলে কপিল গড়াই। বৃহস্পতিবার, আহিরীটোলায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩১
Share: Save:

জন্মের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে মায়ের স্পর্শ পেল আহিরীটোলার সেই সদ্যোজাত। ভেঙে পড়া বাড়ির নীচে সদ্য নিজের তিন বছরের মেয়েকে হারানো সেই মা-ও ফিরে পেলেন সন্তানের স্পর্শ। চিকিৎসকদের সেই মা বলেছেন, ‘‘ওর দিদিকে বাঁচাতে পারিনি। দিদির নামেই ওর নাম রাখব!’’

বুধবার সকালে টানা বৃষ্টিতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে আহিরীটোলা স্ট্রিটের একটি বাড়ির একাংশ। সেখানেই থাকতেন অন্তঃসত্ত্বা গঙ্গা ঘড়াইয়ের বাবা-মা। পাশের গলিতেই গঙ্গার শ্বশুরবাড়ি। বৃহস্পতিবারই স্থানীয় এক হাসপাতালে সন্তান প্রসবের তারিখ ছিল। তাই মঙ্গলবার রাতে স্বামী সুশান্ত এবং মেয়ে সৃজিতার সঙ্গে বাবা-মায়ের কাছেই থেকে গিয়েছিলেন গঙ্গা। বুধবার সকালে সেই ঘর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লে চাপা পড়েন গঙ্গা, তাঁর তিন বছরের মেয়ে সৃজিতা, স্বামী সুশান্ত ঘড়াই ও মা চাঁপা গড়াই।

কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গঙ্গা ও সুশান্তকে উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ছোট্ট সৃজিতা এবং তাঁর দিদিমা চাঁপাকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে সুশান্তকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলেও শুরু হয় গঙ্গাকে নিয়ে টানাপড়েন।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে পৌঁছেও জ্ঞান ছিল গঙ্গার। তিনি নিজেই সেখানে জানান, তাঁর বড় মেয়ে সৃজিতা সম্ভবত বেঁচে নেই। রোগীর অবস্থা দেখে দ্রুত অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। ওই চিকিৎসকদেরই এক জনের কথায়, ‘‘গঙ্গার পায়ে গুরুতর চোট ছিল। রোগী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় চোটের গভীরতা বুঝতে তখন এক্স রে-ও করা যায়নি। সেই সময়ে ওই মহিলা কত দিনের অন্তঃসত্ত্বা, বা তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও কাগজ আমরা হাতে পাইনি। বাচ্চা এবং মাকে বাঁচাতে অস্থি চিকিৎসক এবং অ্যানাস্থেটিস্টের উপস্থিতিতে দ্রুত অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, দুপুর ২টো ২০ মিনিট নাগাদ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন গঙ্গা। কিন্তু শিশুর মা তখন বাচ্চা সামলানোর মতো অবস্থায় ছিলেন না। ফলে সদ্যোজাতকে আলাদা রাখা হয়।

ওই হাসপাতালের আর এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এই সব ক্ষেত্রে বাচ্চার খাবার নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। মায়ের দুধ যেহেতু সে পাচ্ছে না, তাই কৃত্রিম খাবারের উপরে নির্ভর করতে হয়। বিষয়টা বেশি দিনের হলে অন্য ভাবে বুকের দুধের ব্যবস্থা করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অন্য রোগীরাও এগিয়ে আসেন। এই শিশুটির জন্যও কয়েক জন রোগী রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মায়ের কাছে সদ্যোজাতকে ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে।
বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সদ্য হারানো মেয়ের নামেই নবজাতকের নাম রাখার কথা ভাবছেন মহিলা।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, গঙ্গা এখন স্থিতিশীল। তবে এ দিন দুপুরে সুশান্তের বুকে ব্যথা শুরু হওয়ায় ফের তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। যদিও হাসপাতাল জানিয়েছে, এখন তিনি স্থিতিশীল।

এ দিকে, এ দিনই বাড়ি ভাঙার ঘটনায় পুর আইন লঙ্ঘন করার অপরাধে জোড়াবাগান থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে কলকাতা পুরসভা। তাতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ওই বাড়িটিতে ‘বিপজ্জনক’ বোর্ড ঝোলানো হয়েছিল। পরে তা বাসিন্দারাই খুলে নেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ভেঙে পড়া বাড়িটি একটি ট্রাস্টের অধীন। সেই ট্রাস্টে নাম রয়েছে শুভজিৎ মিত্র নামে এক ব্যক্তির। তবে রাত পর্যন্ত ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হওয়ার কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Building Collapse Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE