Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হুকিং করে বাতিস্তম্ভে আলো জ্বালছে পঞ্চায়েত

দিনে ও রাতে প্রায় সারাক্ষণ জ্বলছে বাতিস্তম্ভের আলো। মিটারের কোনও বালাই নেই। এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহের ট্রান্সফর্মারের সঙ্গে শুধু জুড়ে দেওয়া হয়েছে পাতলা তার।

এ ভাবেই হুকিং করে (চিহ্নিত) বাতিস্তম্ভে আলো জ্বালানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই হুকিং করে (চিহ্নিত) বাতিস্তম্ভে আলো জ্বালানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

দিনে ও রাতে প্রায় সারাক্ষণ জ্বলছে বাতিস্তম্ভের আলো। মিটারের কোনও বালাই নেই। এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহের ট্রান্সফর্মারের সঙ্গে শুধু জুড়ে দেওয়া হয়েছে পাতলা তার। এ ভাবে কার্যত ‘হুকিং’ করেই জ্বলছে আমতলার কাছে চণ্ডী পঞ্চায়েতের বসানো বাতিস্তম্ভ। ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন পঞ্চায়েতের কর্তারা। তবে বিষয়টিকে বিদ্যুৎ ‘চুরি’ বলে মানতে তাঁরা নারাজ। তাঁদের দাবি, পাকাপাকি ভাবে বাতিস্তম্ভগুলি চালু করা হয়নি বলেই ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়েরা জানান, সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত আমতলা চৌরাস্তার মোড়ে জ্বলজ্বল করছে ‘হাইমাস্ট লাইট’। যে গুলি মাত্র দু’ বছর আগেই বসানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও দক্ষিণ শহরতলির ডায়মন্ড হারবার রোডের আমতলা চৌরাস্তা-সহ আশাপাশের এলাকায় মাস ছয়েক আগে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি বাতিস্তম্ভ বসিয়েছে চণ্ডী পঞ্চায়েত। তার মধ্যে কয়েকটি বসেছে আবার অন্য পঞ্চায়েত এলাকাতেও। যার কারণ জানেন না সিংহভাগ বাসিন্দারাই।

আমতলার চৌরাস্তার দু’দিকে রয়েছে বাতিস্তম্ভগুলি। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য চারটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। প্রায় সব কয়টি বাতিস্তম্ভই পাতলা তারের মাধ্যমে ওই সব ট্রান্সফর্মারে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তার জুড়লে আলো জ্বলে। তার খুলে দিলে নিভে যায়। নিরাপত্তার কারণে সম্প্রতি কয়েকটি বাতিস্তম্ভের তারের সঙ্গে ট্রান্সফর্মার বক্সের নিচে এমসিবি(মেইন সারকিট ব্রেকার) ও একটি সুইচ বক্স বসানো হয়েছে। পঞ্চায়েতের তরফে রাস্তায় লাগানো ওই সব বাতিস্তম্ভগুলি কার্যত বিদ্যুৎ চুরি করেই জ্বালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, সন্ধ্যা তো বটেই। ওই বাতিস্তম্ভের আলো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তও জ্বলে।

চণ্ডী পঞ্চায়েতের এক সদস্য জানান, জেলা পরিষদের হাইমাস্ট লাইটের বিলও প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বকেয়া হয়ে গিয়েছিল। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর ওই হাইমাস্ট লাইটের বিদ্যুৎ সংযোগও কেটে দেয়। পরে কিছু বকেয়া জমা দিয়ে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ আনা হয়। জেলা পরিষদের ওই হাইমাস্ট লাইটের সংরক্ষণ ও বিদ্যুতের বিল চণ্ডী পঞ্চায়েতের দেওয়ার কথা। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দফতরে তরফে তদন্ত করা হলে ওই বাতিস্তম্ভ বাবদ কয়েক লক্ষ টাকার বিল পঞ্চায়েতের উপরে পড়বে। এক পঞ্চায়েত সদস্য-র কথায়, ‘‘আমতলা-পৈলান অটো স্ট্যান্ড চণ্ডী পঞ্চায়েতের অধীনে নয়। ওই এলাকা পশ্চিম বিষ্ণুপুর এলাকায়। সেখানেও চণ্ডী পঞ্চায়েতের তরফে বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছে। কেন কেউ জানেন না।’’

ওই সদস্যের কথায়, ‘‘বাতিস্তম্ভগুলি কেনা নিয়ে পঞ্চায়েতে কোনও আলোচনা হয়নি। ফলে কোন খাতে টাকা খরচা হয়েছে তা নিয়ে সকলেই অন্ধকারে। পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকেই খরচ করা হয়েছে।’’

বাতিস্তম্ভগুলি পঞ্চায়েতের খরচে বসানো হয়েছে বলে চণ্ডী পঞ্চায়েতের প্রধান হাবিবা বিবি স্বীকার করেছেন। তাঁর সাফাই, ‘‘এলাকায় উন্নয়ন হচ্ছে। পুজোর আগে থেকে বসানো ওই বাতিস্তম্ভগুলি এখনও পাকাপাকি ভাবে চালু হয়নি। তাই ট্রান্সফর্মার থেকে সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। সব লাইট সব সময় জ্বালানো হয় না।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন ও উন্নয়ন নিগমের রিজিওন্যাল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পঞ্চায়েতের কাছ থেকেও খোঁজ নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lamp Post Panchayat Hooking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE