সল্টলেকে মুখ্যমন্ত্রীর জাল সই কাণ্ডে তৃতীয় এক ব্যক্তির নাম উঠে এল। এই ঘটনায় ধৃত জোনাকি বসুর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিই তাঁকে জাল চিঠিটি দিয়েছিলেন। জোনাকির দাবি, সেই ব্যক্তি নিজের নাম বলেছিলেন বিনয় চৌধুরী। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিনয় চৌধুরী নামে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ব্যক্তিগত সচিব নেই। জোনাকির বর্ণনা থেকে ওই ব্যক্তির স্কেচ আঁকানো হবে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় জোনাকিকে নিয়ে পুলিশ তাঁর বাড়ি গিয়ে তাঁর ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল তুলে আনে।
এ দিকে, সই জাল কাণ্ডে ধৃত রাজীব ঘোষ ও জোনাকি বসুকে সাত দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিধাননগর আদালত। দু’জনকে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার পুলিশ শুক্রবার গ্রেফতার করেছিল। ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্য সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাল সই করা চিঠি দেখিয়ে বিধাননগর পুর নিগম থেকে বাড়ির নকশা অনুমোদনের চেষ্টা করেছিলেন। আগামী ২০ তারিখ ধৃতদের ফের আদালতে হাজির করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
শনিবার পুলিশ ধৃতদের বিধাননগরের এসিজেএম আদালতে হাজির করে। সরকারি আইনজীবী সঞ্চিতা ঘোষ অভিযুক্তদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার জন্য বিচারকের কাছে আর্জি জানান। ঘটনাটির পিছনে একটি চক্র কাজ করছে বলেও সরকারি আইনজীবী আদালতে দাবি করেন। সরকারি আইনজীবী আদালতকে জানান, সরকারি চিঠিতে যে সিলমোহর লাগানো থাকে তা ছোটরাও জানে। তাই অভিযুক্তেরা কিছু না জেনেবুঝে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তা সত্যি নয়। ঘটনার পিছনে আরও অনেকে জড়িয়ে আছেন কি না তা খতিয়ে
দেখতে ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে রাখা জরুরি বলেই সরকারি আইনজীবী আদালতকে জানান।
শুক্রবার বিধাননগর পুর নিগমে
ওই জাল চিঠি নিয়ে মেয়র সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গিয়ে প্রথমে গ্রেফতার হন রাজীব। পরে তাঁকে জেরা করে জোনাকীকে গ্রেফতার
করে পুলিশ।
অভিযুক্তদের জামিনের আর্জি জানাতে গিয়ে শনিবার আদালতে তাঁদের দুই আইনজীবী পবিত্র বিশ্বাস ও অভিষেক মুখোপাধ্যায় জানান, চিঠিটি তাঁদের মক্কেল জোনাকি পেয়েছিলেন বিনয় চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে। নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি জোনাকিকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এসে ওই চিঠিটি দিয়েছিলেন। জোনাকিই চিঠিটি রাজীববাবুকে দিয়েছিলেন স্বীকার করে দুই আইনজীবী আদালতকে জানান, তাঁদের মক্কেলরা বুঝতে পারেননি
যে চিঠিটি জাল। পুরো বিষয়টিই ভুলবশত ঘটেছে বলেই আদালতকে জানান আইনজীবীরা।
বাগুইআটির ঝিলপাড়ে জোনাকিদের তিনতলা শরিকি বাড়ি। সেই বাড়িটি প্রোমোটিং করতে চেয়েছিলেন রাজীব ঘোষ। সেখানে গিয়ে শনিবার জানা যায়, এলাকায় শিক্ষিকা হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে জোনাকির। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে জোনাকি জেনেটিক্স নিয়ে গবেষণা করছেন বলে জানান তাঁর মা অর্চনা বসু। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে সই জালের মতো অপরাধ করতেই পারে না। পুলিশ মেয়ের হাতের লেখা পরীক্ষা করলেই বুঝতে পারবে মেয়ে নির্দোষ।’’
জোনাকির বাবা সুবীরবাবুর দাবি, তিন-চার বছর আগে কলেজের
পরীক্ষায় ভালো ফল করার পরে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে জোনাকি পুরস্কার নিয়েছিলেন। তখনই তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয়। মাঝেমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জোনাকির কথা হত। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির নকশা সংক্রান্ত কিছু সমস্যা ছিল। মেয়ে একবার আমায় বলেছিল বিনয় চৌধুরী নামে মুখ্যমন্ত্রীর এক জন সচিব রয়েছেন। তাঁকে বিষয়টি জানাবে। মেয়ে ওই লোকটিকে মুখ্যমন্ত্রীর আশপাশেই একাধিকবার দেখেছিল। কিন্তু ওই লোকটি যে আসলে
জালিয়াত সেটা এখন বুঝতে পারছি। আমাদেরও মুর্খামি যে চিঠিটির সত্যতা যাচাই করিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy