Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অ্যাপ ক্যাব ছাড়তেই অশ্লীল বার্তা

পুলিশ জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই মহিলা অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে তদন্তে জানা যায়, অ্যাপ ক্যাবের চালকই মহিলার ফোন নম্বর ফেসবুক লিঙ্কের মাধ্যমে একটি কুরুচিকর হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই বিভিন্ন লোক ফোনে উত্ত্যক্ত করছিল তাঁকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে একটি অ্যাপ নির্ভর ক্যাবে উঠেছিলেন এক গৃহবধূ। বাড়ির সামনে নামার কিছুক্ষণ পর থেকেই তাঁর ফোনে বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিয়ে ফোন এবং এসএমএস আসতে শুরু করল। উপদ্রব ক্রমাগত এতই বা়ড়ল যে ওই রাতেই লালবাজারের সাইবার থানার দ্বারস্থ হতে হয়েছিল তাঁকে।

পুলিশ জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই মহিলা অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে তদন্তে জানা যায়, অ্যাপ ক্যাবের চালকই মহিলার ফোন নম্বর ফেসবুক লিঙ্কের মাধ্যমে একটি কুরুচিকর হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই বিভিন্ন লোক ফোনে উত্ত্যক্ত করছিল তাঁকে। শনিবার অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতার করেছে লালবাজার। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান বিশাল গর্গ জানান, ধৃতের নাম সমীরণচন্দ্র দেব। আদতে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা সমীরণ কর্মসূত্রে বেলেঘাটায় থাকেন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেই ফোনটিও।

তদন্তকারীরা বলছেন, গাড়ি বুক করার পরেই মহিলার ফোন নম্বর এবং নাম পেয়ে যান সমীরণ। ফলে মহিলার পরিচয় কাজে লাগিয়ে অপরাধ করতে তাঁর সমস্যা হয়নি। পুলিশ জেনেছে, বাড়ি ফেরার পথে মহিলার সঙ্গে সমীরণের বচসা হয়নি। ফলে কোনও রাগের বশে তিনি এ কাজ করেননি। পুলিশের দাবি, জেরায় অভিযুক্ত কবুল করেছেন, মহিলাকে নিছক উত্ত্যক্ত করতেই তিনি এমন করেন।

অভিযুক্তের এ হেন স্বীকারোক্তিতে তাজ্জব বনে গিয়েছেন পুলিশকর্তারা। লালবাজারের এক দুঁদে অফিসার বলছেন, ‘‘নেহাত মজার বশে এমন অপরাধ দেখা যায় না।’’ সাধারণত, সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত জটিলতার জন্য অভিযুক্তকে ধরতে সময় লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেরি হলে অভিযোগকারিণীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত। সেই কারণে দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তকে পাকড়াও করা গিয়েছে বলে লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি।

কী ভাবে অভিযুক্তের সন্ধান পেলেন গোয়েন্দারা?

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার কাছে যে সব নম্বর থেকে ফোন আসছিল সেগুলিতে ফোন করেন সাইবার থানার অফিসারেরা। তাঁদের থেকে একটি হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপের সন্ধান মেলে। সেই গ্রুপে থাকা বিভিন্ন লোকের সঙ্গেও কথা বলেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্র ধরে এগিয়ে ফেসবুক লিঙ্ক ঘেঁটে খোঁজ মেলে সমীরণের। তার পরে অভিযোগকারিণীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দীর্ঘ কথাবার্তার পরে মহিলা সমীরণকে চিনতে পারেন। তার পরেই ওই অ্যাপ-ক্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে লালবাজার।

এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘‘অ্যাপ-ক্যাব কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরেই আমাদের ওই যুবকের বিস্তারিত তথ্য জানান। কিন্তু সেই সূত্র ধরে হানা দিয়ে বেলেঘাটার বাড়িতে যুবককে পাওয়া যায়নি। কারণ, তিনি ততক্ষণে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন।’’ গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সমীরণ শনিবারও গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার কাছ থেকেই তাঁর গাড়ির অবস্থান জানা যায়। সেই মতো হানা দিয়ে ধরা হয় অভিযুক্তকে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ফেসবুকে বিভিন্ন মহিলার ছবি ও ফোন নম্বর দিয়ে একাধিক কুরুচিকর পেজ রয়েছে। তেমনই একটি পেজে মহিলার নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সেই পেজটি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টাও চলছে।

গোয়েন্দারা বলছেন, অ্যাপ-নির্ভর ক্যাব বুক করতে গেলে ফোন নম্বর চালকের কাছে যেতেই পারে। সে ক্ষেত্রে এমন সমস্যা হলে তা চেপে না রেখে তড়িঘড়ি পুলিশকে জানানো ভাল। যাতে অপরাধীকে ধরতে পুলিশের সুবিধা হয়। এই ধরনের ক্যাবে কর্তৃপক্ষ চালকের নাম ও ছবি যাত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেন। তাই গা়ড়িতে ওঠার আগেই ওই নাম ও ছবি মিলিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। গোয়েন্দারা আরও জানাচ্ছেন, যাত্রা শেষে চালকের নম্বর ও ছবি মুছে না ফেলাই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

App Cab Cab Driver Abuse ক্যাব
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE