এই মূর্তিটিই ব্রোঞ্জ দিয়ে ফের নির্মাণের কথা ছিল। নিজস্ব চিত্র
বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে ফাইবার গ্লাসের তৈরি ভাষা শহিদ স্মারককে ব্রোঞ্জ দিয়ে পুনর্নির্মাণের স্বপ্নপূরণ হচ্ছে না কলকাতা পুরসভার। কারণ, সেনাবাহিনী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে কোনও স্থায়ী মূর্তি সেখানে বসানো যাবে না। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ব্রোঞ্জের ওই নতুন স্মারক বসানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যাওয়ায় হতাশ পুরকর্তারা!
পুরসভা সূত্রের খবর, দু’বছর আগে, ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারামণ্ডলের সামনে ফাইবারের তৈরি ভাষা শহিদ স্মারকটি বসানো হয়েছিল। তার পরের দিনই সেটির উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময়ে ওই স্মারকটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৭ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। তার পরে গত বছর ওই স্মারকটি ব্রো়ঞ্জ দিয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল পুরসভায়।
ফাইবার গ্লাসের তৈরি স্মারকটি তৈরি করেছিলেন শিল্পী যোগেন চৌধুরী। ব্রোঞ্জের স্মারক তৈরির জন্যও পুরসভা তাঁকেই অনুরোধ করে। আনুমানিক কত খরচ হবে, যোগেনবাবুর কাছ থেকে তা জানতে চায় পুরসভা। যোগেনবাবুও চিঠি দিয়ে প্রকল্পের আনুমানিক খরচের হিসেব দেন পুরসভাকে। সেই মতো ওই কাজের জন্য প্রায় ৫৮ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দও করে দেয় পুরসভা। কিন্তু সেনার অনুমতি না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুরো প্রকল্প বাতিল করা হয়। যোগেনবাবুকেও কিছু দিন আগে চিঠি দিয়ে প্রকল্প বাতিলের কথা জানিয়ে দিয়েছে পুরসভা। এক পদস্থ পুরকর্তার কথায়, ‘‘সেনা এলাকায় স্থায়ী নির্মাণ করা যাবে না, জানিয়েছে তারা। তাই প্রকল্প বাতিল হয়েছে। শিল্পী যোগেন চৌধুরীকেও চিঠি দিয়ে প্রকল্প বাতিলের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
সেনার বক্তব্য, কলকাতা ময়দানে স্থায়ী নতুন মূর্তি বসানোয় বিধিনিষেধ রয়েছে। পুরসভাকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক পদস্থ সেনা অফিসার বলেন, ‘‘পুরসভা এ বিষয়ে এক বার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু সরকারি নিয়মে কলকাতা ময়দান এলাকায় মূর্তি বসানোর ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ রয়েছে, সে কথা তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ সেনা জানাচ্ছে, অনেক দিন আগেই এ ব্যাপারে পুরসভাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সেনা বেশ কিছু দিন আগে জানালেও প্রকল্পটি আদৌ বাতিল করা হবে কি না, তা নিয়ে একটা টালবাহানা চলছিল পুরসভার অন্দরে। যদিও তার আগেই যোগেনবাবুকে প্রকল্প নিয়ে আর না এগোতে মৌখিক ভাবে বারণ করে দিয়েছিল পুরসভা। তার পরে কয়েক দফা আলোচনার শেষে তা পুরোপুরি বাতিল করা হয়। কারণ, সেনার সঙ্গে আর নতুন করে ‘সংঘাতে’ যেতে চাননি পুর কর্তৃপক্ষ। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ওখানে ব্রোঞ্জের স্মারকটি বসানো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হল না।’’ প্রসঙ্গত, এর আগে ময়দানে গাছ বসানো নিয়েও সেনার সঙ্গে একটা টানাপড়েন হয়েছিল পুরসভার। আউট্রাম স্ট্রিট থেকে ইলিয়ট পার্কের গেট পর্যন্ত ৯০০টি গাছ বসানোর জন্য সেনার কাছে অনুমতি চেয়েছিল পুরসভা। কিন্তু সে বার সেনা ২০০টি গাছ বসানোর অনুমতি দিয়েছিল।
আর যোগেনবাবু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘ব্রোঞ্জের মূর্তির স্থায়িত্ব বেশি। আলাদা ঔজ্জ্বল্যও রয়েছে। তাই ব্রোঞ্জের মূর্তি বসানো হলে তো ভালই হত। তবে কয়েক দিন আগে পুরসভা আমাকে চিঠি দিয়ে প্রকল্প বাতিলের কথা জানিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy