Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বিপজ্জনক বাড়ি, সমাধানে বিল আনা হবে বিধানসভায়

শহরজুড়ে মাথা তুলে থাকা বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে আইন সংশোধন করবে পুরসভা। আগামী বাজেট অধিবেশনেই সে বিষয়ে বিল আনতে চলেছে সরকার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

শহরজুড়ে মাথা তুলে থাকা বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে আইন সংশোধন করবে পুরসভা। আগামী বাজেট অধিবেশনেই সে বিষয়ে বিল আনতে চলেছে সরকার। সোমবার পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে কী নীতি হতে পারে তা নিয়ে বিচারপতি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গত সেপ্টেম্বরে একটি কমিটি গড়ে কলকাতা পুর প্রশাসন। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, সেই কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি। পুরসভা তা পাশ করে রাজ্য সরকারের কাছে সেটি খসড়া বিল হিসেবে পাঠাবে। তার পরে বিধানসভায় সেই বিল পেশ করবে সরকার। সব ঠিক থাকলে আগামী আর্থিক বছরে বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব হবে বলে জানান মেয়র। জীবনহানির কথা মাথায় রেখেই পুরো বিষয়টি নিয়ে সূক্ষ ভাবে বিচার করা হয়েছে বলে সোমবার জানান তিনি।

পুরসভা সূত্রের খবর, কমিটি গঠনের মাস দেড়েকের মধ্যেই স্থায়ী সমাধানের একটি খসড়া তৈরি করে পুরসভায় পাঠান বিচারপতি প্রণববাবু। রিপোর্ট পেয়ে শোভনবাবু পুরসভার আইন ও বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে আলোচনা করেন। পুরসভার আইন বিভাগ সেই খসড়া খতিয়ে দেখে ফের তা প্রণববাবুর কাছে পাঠান। সম্প্রতি প্রণববাবু চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করেছেন।

কী আছে তাতে? পুরসভার এক অফিসার জানান, বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি গড়ার অভিধানে ‘অকুপায়ার’ (অর্থাৎ বর্তমানে যিনি বাড়ির যতটা অংশ জুড়ে বাস করছেন) শব্দটি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাড়িটি নতুন করে নির্মাণের সময়ে পুরনো অবস্থায় যে যতটা অংশ জুড়ে ছিলেন, তাঁকে ততটাই জায়গা দেওয়ার কথাও রয়েছে। তাতে শরিকি বিবাদ ও ভাড়াটে-বাড়িওয়ালার মধ্যে আইনি জটিলতা কমবে বলে মনে করছে পুর প্রশাসন। বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন করে তা গড়ার সুযোগ প্রথমে দেওয়া হবে বাড়ির মালিককে। তিনি রাজি না হলে সেই ভার দেওয়া হবে অকুপায়ারদের। তাঁরাও গররাজি হলে কোনও তৃতীয় সংস্থাকে (প্রোমোটার) ভার দেওয়া হবে। তবে অবশ্যই টেন্ডার ডেকে।

সোমবার মেয়র বলেন, বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে যে সব ক্ষেত্রে মামলা রয়েছে, তা দ্রুত সমাধানের জন্য গড়া হবে ‘বিল্ডিং ডিলাপিডেটেড রিড্রেস ট্রাইবুন্যাল’। সঙ্গে রাজ্য সরকারের তরফে হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানানো হবে সিভিল কোর্টে ওই সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির।

পুরসভার বিল্ডিং দফতর সূত্রের খবর, প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে শহরে। বেশিরভাগই বড়বাজার, পোস্তা, কলেজস্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণি, মানিকতলা, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট-সহ উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। নানা সময়ে তা ভেঙে হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবুও পুর প্রশাসন কিছু করতে পারেনি। বাম আমল থেকে তৃণমূল— সব বোর্ডেই শাসকদলের তরফে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে মানবিক কারণেই ওই সব বাড়ির বাসিন্দাদের সরানো যায়নি। পুর আইন বলে কেবল ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ নোটিস টাঙিয়ে দিয়েছে পুর প্রশাসন। বিল্ডিং দফতরের ব্যাখ্যা ছিল, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা বা সারানোর মূল প্রতিবন্ধকতা শরিকি বিবাদ এবং বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের আইনি লড়াই। তাই মামলার কারণেও অনেক সময়ে পিছু হটতে হয়েছে পুরসভাকে।

সে ভাবেই চলছিল গত সেপ্টেম্বেরের শুরু পর্যন্ত। টনক নড়ে ১৩ সেপ্টেম্বর পাথুরিয়াঘাটায় বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায়। যা ব্যথিত, বিচলিত করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে শহরের বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি। সেই মতো ২৮ সেপ্টেম্বর পুরভবনে বৈঠক ডাকেন মেয়র। ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম-সহ নগরোন্নয়ন সচিব, আইন দফতরের সচিব, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার, হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং শহরের বিশিষ্টজনেরা। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় আইনি জটিলতার খুঁটিনাটি দেখে সমাধানের সূত্র বার করতে হবে। বলা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে খসড়া তৈরি হবে। কিন্তু সময়ে তা হয়ে ওঠেনি। মেয়র তখন জানিয়েছিলেন, পুজোর কারণে দেরি হয়েছে।

গত শনিবার মুচিপাড়া থানা এলাকার প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে ফের বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে আহত হন পাঁচ জন। তখনই পুরসভার এই স্থায়ী সমাধান বিষয়ে দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এমনটা যাতে ফের না ঘটে, তাই পুরসভা আর বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে আইন প্রণয়নের বিষয়ে আর বিলম্ব করতে চায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dangerous House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE