ডেঙ্গি সচেতনতায় স্কুলছাত্রীদের পথনাটিকা। শুক্রবার, ভবানীপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ
কলকাতায় ডেঙ্গিতে এখনও পর্যন্ত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩২৫। শুক্রবার কলকাতা পুরভবনে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর প্রশাসনের বৈঠকে ওই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডেঙ্গি দমনে প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা করতে হবে। চিকিৎসা-বিভ্রাটে কারও মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছে সরকার।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ওয়ার্ডে এক জনের মৃত্যু (এনএস-১ পজিটিভ) হতেই এ বার নড়েচড়ে বসল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর প্রশাসন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ দিন পুরভবনে ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে জরুরি বৈঠক হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, বৈঠকে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত কলকাতা শহরে ১৩২৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ছ’জনের। আরও বলা হয়েছে, ওই ১৩২৫ জনের মধ্যে কলকাতা পুরসভার চিকিৎসাকেন্দ্রে ১৮৮ জনের রক্তে এনএস-১ পজিটিভ মিলেছে। বাকিগুলি বেসরকারি ক্লিনিকে পাওয়া গিয়েছে। ওই যৌথ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কারও রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মিললে সেই রোগী বাড়িতে থাকছেন, না হাসপাতাল বা কোনও নার্সিংহোমে, তার খোঁজ রাখতে হবে। কী ভাবে তাঁর চিকিৎসা চলছে, খোঁজ নিতে হবে তারও। পাশাপাশি, ডেঙ্গিতে কেউ মারা গেলে প্রতিবেশীর স্বাস্থ্যের বিষয়েও নজর রাখতে হবে। সেই সময়ে অন্য কারও জ্বর থাকলে পুরসভার টিম মোবাইল ভ্যানে করে গিয়ে তাঁদের রক্ত গ্রহণ করবে।
এমনিতেই এ বার ডেঙ্গ-২ সংক্রমণ নিয়ে জেরবার পুর প্রশাসন। তবে ডেঙ্গিতে শহরে কত জন মারা গিয়েছেন, তা নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছিল পুর প্রশাসন। এ দিনের বৈঠকে সেই সংখ্যা সামনে চলে আসে। জানানো হয়, ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০৫০। সাত দিনে নতুন করে আরও ২৭৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। ওই বৈঠকে পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গিতে মৃত বালিকার বিষয়েও কথা হয়। বলা হয়, ওই বালিকার মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসা-বিভ্রাটে। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, যে চিকিৎসক প্রথম দিকে ওই মেয়েটির চিকিৎসা করেছেন, তাঁকে শো-কজ করা হতে পারে। যদিও ওই বৈঠকে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিংহ এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। মুখে কুলুপ এঁটেছেন মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষও। তবে মেয়র ও স্বাস্থ্যসচিব চলে যাওয়ার পরেও দীর্ঘক্ষণ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের নিয়ে বৈঠক চালিয়ে যান মেয়র পারিষদ।
সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার থেকে শহরের বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং ক্লিনিকগুলিকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্ধারিত প্রোটোকল মেনে কাজ করতে হবে। ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর থাকলে তা পুরসভার গোচরে আনতে হবে বেসরকারি চিকিৎসকদেরও। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে এনএস-১ পজিটিভ থাকলে সংশ্লিষ্ট রোগীর রিপোর্ট পুরসভার সঙ্গে মোবাইলে শেয়ার করতে হবে। এ সবই বাধ্যতামূলক ভাবে প্রয়োগ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। এ প্রসঙ্গে বেহালায় মেয়রের ওয়ার্ডে মৃতের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক থেকে সময়ে না পাওয়া নিয়েও কথা ওঠে।
স্বাস্থ্য দফতর থেকে বলা হয়েছে, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কোনও রোগীকে হাসপাতাল, নার্সিংহোম থেকে ফেরানো যাবে না। কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ থাকলে পুরসভাকে জানাতে হবে। আর পুর প্রশাসন তা জানাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে। তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য দফতর। প্রাইভেট প্রাকটিস করেন যে চিকিৎসকেরা, তাঁদের কাছে আসা কোনও রোগীর ডেঙ্গি ধরা পড়লে তা-ও জানাতে হবে পুরসভাকে। বৈঠকে বলা হয়েছে, ডেঙ্গি জনস্বাস্থ্যের বিষয়। তাই সকলে মিলে সহায়তা না করলে ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy