পোকা লেগে নষ্ট হচ্ছে রবীন্দ্র সরোবরের খিরিশ গাছ — বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে মিলল এমনই তথ্য।
বহু বছর ধরে প্রচুর খিরিশ গাছ রয়েছে রবীন্দ্র সরোবরে। কিন্তু সম্প্রতি অনেকগুলিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু নষ্টের মুখে। এই ঘটনায় গাছ রক্ষায় উদ্যোগী হয়ে ওঠেন সরোবর-কর্তৃপক্ষ। এ দিকে, একশো বছরের পুরনো গাছগুলি শুকিয়ে যেতে দেখে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন প্রাতর্ভ্রমণকারী ও পরিবেশবিদদের একাংশও। গাছগুলি রক্ষার জন্য পাঁচ উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে কমিটি গড়া হয় বলে জানান কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদের (কেআইটি) এক আধিকারিক। সম্প্রতি ঘটনাস্থল ঘুরে কেআইটি-কর্তৃপক্ষকে একটি রিপোর্ট জমা দেয় কমিটি। বলা হয়েছে, লাক্ষা পোকা গাছের রস শুষে নেওয়াতেই গাছগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত গাছের ছাল উঠে গিয়ে গাছগুলি সাদা হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সচিব তথা শিক্ষক শুভেন্দু চৌধুরী বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরোবরে ২০০ গাছের মধ্যে প্রায় ১৫০টিই পোকায় আক্রান্ত। অনেকগুলি মরে গিয়েছে। তবে শুধু এখানেই নয়, শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় এই গাছ নষ্ট হচ্ছে।’’
গাছগুলি বাঁচানোর উপায় কী? শুভেন্দুবাবু জানালেন, প্রাথমিক ভাবে লাক্ষা নামের ওই পোকাকে নষ্ট করাই হল গাছ বাঁচানোর প্রধান দাওয়াই। গাছ বাঁচাতে আরও কী পদ্ধতি নেওয়া হবে, গবেষণা ও বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তা ঠিক করা হবে বলেও জানান শুভেন্দুবাবু। তিনি জানান, এই পদ্ধতিতে রবীন্দ্র সরোবরে গাছ বাঁচানো গেলে অন্যত্রও গাছ বাঁচাতে তা প্রয়োগ করা যাবে।
কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন উদ্ভিদবিদ রণজিৎ সামন্ত বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর রেন-ট্রিও (চিরহরিৎ বৃক্ষ) এ ভাবে পোকা লেগে নষ্ট হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে খিরিশ গাছও। যে ডালে পোকা ধরে সেটি তক্ষুনি কেটে ফেললে গাছগুলি বাঁচতে পারে। তবে গাছের কোন ডালে পোকা লাগছে সব সময়ে তা বোঝা যায় না। তাই শহর জুড়েই এই সমস্যা হয়েছে।’’ এর কারণে শহরে কোথাও ‘রেন-ট্রি’ না লাগানোরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুরসভা। যেগুলি রয়েছে, সেগুলি বাঁচানোই এখন অন্যতম কর্তব্য।
বন দফতরকে দিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের গাছের সমীক্ষা করিয়েছেন কেআইটি-কর্তৃপক্ষ। বন দফতরের নির্দেশে ১০টি খিরিশ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হলে প্রাতর্ভ্রমণকারী ও বাসিন্দাদের একাংশ আপত্তি জানান। তাই আপাতত গাছ কাটা স্থগিত আছে বলে কেআইটি-র তরফে জানানো হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্ট মনোনীত রবীন্দ্র সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গঠিত মনিটরিং কমিটির অন্যতম সদস্য সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মৃত গাছগুলি বন দফতরের অনুমতি নিয়েই কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুকনো গাছের ডালপালা গায়ে পড়ে জখম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে ১০টি গাছ কাটা হবে তার বদলে নিয়ম মেনেই সরোবরে নতুন গাছ লাগানো হবে।’’ বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, কেআইটি কর্তৃপক্ষ বন দফতরের অনুমতি নিয়েছেন। বন দফতর থেকে সরোবরের এই গাছ পরিদর্শন করার পরেই সেগুলি কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy